পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] জগং আজ উদ্‌গ্ৰীব হইয়া আমাদের এই অহিংস যুদ্ধের পরিণাম প্রতীক্ষা করিতেছে। এর ফলাফলের উপরেই আমাদের মানসম্ম, জীবনমরণ নির্ভর করিয়া আছে । আজ যদি এই মহাযজ্ঞকে আমরা স্বাভাবিক ঔদাসীন্য, দীর্ঘকালের অভ্যাস প্রযুক্ত আলস্য এবং বিলাসলীলসার দ্বারায় ব্যর্থ হইতে দিই, সমস্ত সভ্যজগতে আমাদের আর মুখ দেখাইবার কিছুমাত্র উপায় বাকি থাকিবে না । এই মহাযজ্ঞকে আমাদের পূর্ণ করিতে হইবে যজ্ঞ প্ৰষ্ট হইলে সাধকের সৰ্ব্বনাশ ! হইয়া কোটি কোটি ভারতনারী পুরুষকে এ যজ্ঞের নেতৃত্ব করিতে হইবে । যজ্ঞেশ্বর বিরাটপুরুষ কখনই নিশ্চেষ্ট থাকিতে পারিবেন না । র্তার নিজ বাক্যে তিনি আমাদের জানাইতেছেন— একচিত্ত একমন “মে যপমাং প্ৰপদ্যস্তে তাং স্তথৈব ভজাম্যহম্” র্তীকে যেভাবে যে কামনা কবে, তিনি সেই ভাবেই তাহকে আশ্রয় দেন। আজি অমর কুরুক্ষেত্রযুদ্ধে আীয়জুবিয়োগ দুঃখ ভীত অৰ্জ্জুনের সহিত সমাবস্থাপন্ন। আমুরাও যদি তার সেই বাণী, সেই মহাবাণী—“ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌৰ্ব্বল্যং তত্তোত্তিষ্ঠ পরস্তপ” এই অভয়মশ্ব স্মরণপূর্বক উত্থিত হইতে পারি,— উত্থিত ও জ। গ্রত হইতে পারি, আমাদের পক্ষে ও জয় অসম্ভব হইবে না । ভারতের অধিদেবতা “উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ঠ ভারত’ বলিয়া অ{জ ডাক দিয়াছেন যে ! নতুবা জড়ে কি চেতনা সঞ্চার হইত ? আজ আমাদের চাই শুধু একতা, চাই শুধু একপ্রাণতা, চাই একচিত্তত জীবনে এক উদ্দেশ্য। "সমানীবঃ আকুতি সমানাহাদয়ানি বঃ । সমানবস্তু বে। মনঃ” দেশের স্বরাজ্যলাভই নারী পুরুষের, শিক্ষিত অশিক্ষিতের, ধনী দরিদ্রের একমাত্র লক্ষ্য কেন্দ্র । ক্ষুদ্র স্বার্থ, টুচ্ছ মোহ, হীন আলস্য, সমস্ত জড়তা পরিত্যাগপূৰ্ব্বক সমবেত শক্তিকে .একপথে পরিচালিত ‘ চরিতে হইবে । স্বদেশী গ্রহণ এ যুদ্ধের এই প্রধান দিব্যাস্ত্র । এ অস্ত্রের সন্ধানে যদি ভারত আজ পদ্ধিলাভ করিতে পারে, বিশ্বের দরবারে তার সাবিত্রী ব্রত bo eసి আসন স্বতই শ্রদ্ধাসনে পরিগণিত হইয়। যাইবে । সম্মান-মুকুট তার আপন হইতেই প্রাপ্য হইবে । আর যদি চিরদিনের মতই গৃহবিচ্ছেদেয় বিভীষণ এবারেও আমাদের মধ্যে তার সনাতন নীতিব অঙ্গুসরণ করিতে সুযোগ পায়, যদি হিন্দুর সহিত হিন্দু, হিন্দুর সহিত মুসলমান নিজেদের প্রকৃত উন্নতির প্রক্লষ্ট পন্থ না চিনিয়া ক্ষুদ্র স্বার্থ মোহে হিতাহিত জ্ঞানশূন্ত হইয়া সমচিত্তত দ্বারা পরস্পরের সহিত সংযুক্ত না হইয়া বিযুক্ত হয়, পরস্পরে খাওয়াখাওয়ি করিয়৷ নিঃশেষে ধ্বংসপ্রাপ্তি এবারেও আমাদের ভাগ্যফল দাড়াইবে । আজ আমাদের সযত্নে ও সাবধানে এই বিরোধের বিদ্বেষকে বিদূরিত এবং ইহার স্থলে নারী জাতির জাতীয়-স্বভাবানুমোদিত প্রেম ও মৈত্রীর সংস্থাপন করিতে হইবে । “সমানাহৃদয়ানি বঃ” “এই দুরূহ ব্ৰতে এস আমরা দীক্ষা গ্রহণ করি। “সমান বস্তু বে। মনঃ” এই মস্ত্রের সাধনায় এস আমরা প্রাণপণ করিতে সচেষ্ট হই । চেষ্টা যত্নে কোন কাৰ্য্য কবে কার না সিদ্ধ হইয়াছে ? বাহিরে মতবিরোধ যার সঙ্গে যতই থাক, আজি ভারতের ভাগ্যবিধাতার কাছে আমরা একচিত্তে, সহানুভূতির সহিত একই কামনা rও একমাত্র লক্ষ্য লইয়া যেন দাড়াইতে পারি। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্ব থাকুক স্বরাজ । ভারত-মহাসাগরের পরিবেষ্টনীর মধ্যে সশস্ত্র প্রহরী ও চেড়ীদলের প্রহরায় স্থাপন করিয়াও অপহৃত সীত৷ দেবীর স্বাধীনতাকে চির অপহৃত রাখা যায় নাই । পথ খুজিয়া দেখিলে চারিদিক দিয়াই পথ খুজিয়া পাওয়া যায়, তবে সেট-সব পথে চলার জন্য লোক চাই । সরবে কাজ করার লোক পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়, নীরব কৰ্ম্মীর অভাবটাই সকল ক্ষেত্রে বেশী । কিন্তু শব্দভেদী বাণ যখন অপর পক্ষের ধতুকে চড়ান, তখন যতখানি সম্ভব নিঃশব্দেই নিজের নিজের কাজ কৰ্ত্তব্যবুদ্ধিতে করিয়া যাইতে হইবে । আমাদের দেশের ধৰ্ম্মেও বাহপূজার অপেক্ষ আস্তর পূজাকেই উচ্চাসন দেওয়া হইয় থাকে।