পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপের ফাদ গ্রীসীতা দেবী রেজুনের—নং গলিতে হঠাৎ ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পড়িয়া গেল। ভূতুড়ে বাড়ী বলিয়া মাডোয়ারী লছমন দাসের বাড়ীটা এতদিন খালিই পড়িয়াছিল। আজ দেখা গেল তাহার তিনতলাটার সব দরজা জানালা খোলা, একজন মান্দ্রাজী চাকর এবং একটি ব্রহ্মদেশীয় ঝি মহা উৎসাহে ঝাড়পোছ করিতেছে। আসবাব অনেকগুলাই আসিয়া পৌছিয়াছে, এবং তখনও আসিতেছে। যেগুলি তখনও উপরে উঠাইয়া ফেলা হয় নাই, নীচে ফুটপাথে জমা করা রহিয়াছে, সেই গুলি দেখিয়াই সকলের বুঝিতে বাকি রহিল ন যে, যাহারাই আসিয়া থাকুক, নিতান্ত গরীব নয়, বেশ উত্তম রকম দু’পয়স। তাহদের আছে। বাড়ীর আসল অধিবাসীদের দেখিয় চক্ষু সার্থক করিবার আশায় অনেকেই অনেকক্ষণ দরজ বা জানালার ধারে দাড়াইয়। রহিল, কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঝি চাকর ভিন্ন আর কাহারও সাক্ষণং পাওয়া গেল না । অবশেষে যখন হতাশ হইয়া যে যাহার কাজে প্রস্থান করিবার উপক্রম করিতেছে, তখন মস্ত বড় একটা মোটরকার আসিয়া বাড়ীটার সামনে দাড়াইয়া গেল । দিব্য নূতন ঝকৃঝকে গাড়ী । দামী, কি খেলো, তাহ বুঝিবার মত জ্ঞান গলির অধিবাসীদের মধ্যে বেশী লোকের ছিল না বটে, তবু চালকের ফিটফাট পোষাক, গাড়ীর ভিতরে নীল সাটিনের ঝালর এবং গদি ইত্যাদি দেখিয়া সকলেরই মনে একটা সম্বমের ভাব আসিয়া পড়িল । ছোট ছেলেমেয়ের দল আবার নূতন উৎসাহে ফুটপাথে ঘুরিতে আরম্ভ করিল এবং বড়র দল দরজা জানালার ধারে আসিয়া জুটিল। এতক্ষণ পরে তাহাদের ধৈৰ্য্যের পুরস্কার মিলিল । দুটি মহিল৷ অতি যত্বে সাজসজ্জা করিয়া নামিয়া আসিলেন, এবং ধীরমন্থরগতিতে অগ্রসর হইয় গাড়ীতে উঠিয়া বসিলেন। ব্রহ্মদেশীয় রূপের আদর্শে দুইজনেই সুন্দরী । গায়ের রং উজ্জল, বিপুল কবরীর ভারে মাথ৷ যেন ভাঙিয়া পড়িতেছে। বহুমূল্য রেশমের লুঙ্গি এবং হীরা ও চুণীর অলঙ্কারের প্রাচুর্য্যে তাহদেব স্বাভাবিক শ্ৰী আরো যেন দীপ্ত হইয়া উঠিয়াছে। একজন তরুণী, আর একজনের যৌবনে ভাট পড়িতে আরম্ভ হইয়াছে । কিন্তু ঝরিবার মুখে পূর্ণ প্রফুর্টত পুষ্পের যে শোভা, তাহা তখন ও র্তাহার দেহে বিরাজ করিতেছে । দুজনেরই চালচলন আভিজাত্যব্যঞ্জক । র্তাহার। গাড়ীতে উঠিয়া বসিবামাত্র গাড়ী ছাড়িয়া দিল । মান্দ্রাজী ভৃত্যটি র্তাহীদের সঙ্গে ছোট একটি হাত-ব্যাগ বহন করিয়া নামিয়া আসিয়াছিল, গ{ড়ীর দরজা বন্ধ করিয়া সে উপরে উঠিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই, গলির প্রায় সব ক'জন অধিবাসী একজোটে তাহাকে গিয়া আক্রমণ করিল। মি নট কয়েক সেখানে মিশ্রিত হিন্দী, বৰ্ম্মা এবং তামিল ভাষায় এমন একটা প্রশ্নের ঝড় উঠিল যে, বেচারা প্রায় হতবুদ্ধি হইয়া গেল। সকলেই জানিতে চায়, তাহার স্বামিনীদ্বয় কোথা হইতে আসিলেন, র্তাহারা কে, কতদিন এখানে থাকিবেন, এবং এত স্থান থাকিতে, এই ভূতুড়ে বাড়ীটাই র্তাহাদের পছন্দ হইল কেন ? বাড়ীতে খালি এই দুটি স্ত্রীলোক, না পুরুষও কেহ আছেন, এ প্রশ্নও কেহ কেহ করিতে ক্রটি করিল না। মাদ্রাজীটি খানিক পরে সামলাইয়া উঠিয়া প্রশ্নের উত্তর দিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তাহার কথায় বোঝা গেল যে, ইহার এক ধনী ব্রহ্মদেশীয় জমিদারের বিধবা পত্নী এবং কন্যা। বাড়ীতে পুরুষ কেহই নাই । মহিলাদ্বয় পল্লীগ্রামে বাস করিয়া করিয়া শ্ৰান্ত হইয়৷ পড়িয়াছেন, তাই বংসরখানিক সহরে কাটাইয়া যাইবার উদ্দেশ্বে তাহদের রেজুনে আবির্ভাব। এই বাড়ীতেই