পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] বিশেষ করিয় তাহারা কেন আসিয়া জুটলেন, তাহার কোনো কারণ ভৃত্যটি বলিতে পারিল না। দুই একটি যুবক জিজ্ঞাস করিল, জমিদার-কন্যাটির বিবাহ হইয়াছে কি না। ভূত্য বলিল, এখনও হয় নাই, সংপাত্র দেখিয়া কন্যার বিবাহ দেওয়াও জমিদার-গৃহিণীর সহরে আগমনের একট। কারণ । অতঃপর যে যাহার কাজে চলিয়া গেল। প্রতিবেশিনীর হাড়ির খবর জানিতে যতই সকলের ঔংস্থক্য থাকু, তাহার জন্য কাজ কামাই করা ত আর চলে না ? অগত্য স্নানাহারের জন্য পুরুষগুলি ঘরে ঢুকিল, এবং তাহীদের খাওয়া দাওয়ার জোগাড় করিতে মেয়েরাও যাইতে বাধ্য হইল। তিনতলার অধিবাসিনীর কথন যে ঘরে ফিরিলেন তাহ দুই চারিজন বালকবালিকা ভিন্ন বড় কাহার ও চোখে পড়িল না । বিকালবেল কাজকৰ্ম্ম বড় কাহারে থাকে না, তখন গলির মধ্যে একট। পরিবর্তন দেখা গেল। মহিলারা সকলেই চুল ফিট্ ফট্‌ করিয়। বধিয়াছেন, তরুণীর দল পুপগুচ্ছে কবরীর শোভা আরও বড়াইয়া তুলিয়াছেন । যাহার বাক্সে যত উজ্জল রংএর রেশমের লুঙ্গি ছিল সব বাহির হইয়াছে, সোনার চেন, চুণীর বোতাম, কানের ফুল, হাতের চুড়ি, যাহার যা ছিল, সবই গায়ে উঠিয়াছে। না হয়, তিনতলার নবাগত অধিবাসিনীদের মত টাক। তাহাদের নাই, তাই বলিয়া কি দুইটা ভাল জিনিষ তাহারা পরিতে পারে না ? না, পরিলেই লোকে তাহাদের দিকে ফিরিয়া চায় না ? মেয়েরাই যে শুধু যথাসাধ্য সাজসজ্জা করিয়া বাহির হইল তাহা নয়, যুবকবৃন্দের উৎসাহও কিছু কম দেখা গেল না । সকলেই প্রায় কাজ হইতে ফিরিয়া আসিয়া স্নান করিল, ভাল পোষাক পরিল, মাথায় রঙীন রেশমের রুমাল বাধিয়া বৰ্ম্ম চুরুট ধরাইয় গলির ভিতর সান্ধ্য ভ্রমণ করিতে স্বরু করিল। গৃহস্বামিনীর কন্যা বারান্দায় বাহির হন কিনা, কিম্বা জানালার ধারে আসিয় দাড়ন কি না, সেই দিকেই ছিল প্রায় সকলের লক্ষ্য । মহিলাস্বয়ের সহরে আসার একটা উদ্দেশ্য অন্ততঃ যাহাতে বিফল না হয়, ইহা তাহীদের সকলেরই আন্তরিক রাপের ফাদ ইচ্ছা ছিল। বিবাহ পৰ্যন্ত নাই গড়াক, একটু আলাপ সালাপ করিতে পাইলেই অনেকেই পরিশ্রম সার্থক জ্ঞান করিত । বিকালে আবার গাড়ী আসিয়া দাড়াইল । খানিক পরে আবার নূতন সাজে মা ও মেয়ে নামিয়া আসিলেন । এবার আর সকালের মত অবজ্ঞাপূর্ণ ভাব নয়। দুই জনেই চারি দিকে তাকাইয়া দেখিলেন, তরুণীটির মুখে একটু যেন হাসির চিকুও দেখা গেল । তাহার জননী দু’একটি ছোট ছেলের পিঠ চাপড়াইয়া, তাহাদের মাতাদের আনন্দের সাগরে নিমজ্জিত করিয়া গাড়ীতে উঠিয়া বসিলেন.। একজন প্রতিবেশিনী অার একজনকে ডাকিয়া বলিল, “যতটা নাকটান ভেবেছিলাম, ঠিক ততটা নয় ।” অন্য জন উত্তর করিল, “তাই ত দেখছি । ছেলেপিলে খুব ভালবাসে বোধ হয়। “হাজার • হোক্ মেয়ে মানুষ ত! বড়মাস্থ্য হলেই বা ". সকলেরই মনে ধারণা হইয়া গেল, মাতুযগুলি ভালই। ছেলেপিলের মায়ের গৃহিণীটির সঙ্গে ভাব করিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিল। যুবকরা ভাবিল কোনো গতিকে একটা কথা বলিবার স্বযোগও যদি পাওয়া যায়, তাহা হইলে বাকি পথ তাহারা নিজের জোরেই করিয়া লইবে । বায়োস্কোপের বহুল প্রচারের ফলে এই সকল বিষয়ে অন্ততঃ তাহদের বুদ্ধি খুব খুলিয়া গিয়াছিল। সন্ধ্যার পর, গিটার বাঞ্জাইয়া গান গাহিবার শব্দে গলিট মুখর হইয়া উঠিল। র্যাহাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিবার জন্য এত আয়োজন, তাহদের কিন্তু কিছুমাত্রও বিচলিত হইতে দেখা গেল না। সন্ধ্যার পর তাহার বেড়াইয়া ফিরিলেন। মা নিজের শয়নকক্ষে চলিয়া গেলেন, সঙ্গে গেল তাহার ঝি। মেয়েও নিজের ঘরে গিয়া ঢুকিল । কাপড় চোপড় বদলাইয়া, হাত মুখ ধুইয়া দুজনে খাবার ঘরে গিয়া প্রবেশ করিল। ম। মেয়েকে দেখিয়া বলিলেন, “কাল তুই একলাই যাস, কেমন ?” মেয়ে বলিল, “দাড়াও আগে রাস্ত ঘাট সব ভাল করে