bペR ট্যাক্সি দেখা দিল মঙ জী সঙ্কেত করিয়া তাহাকে ডাকিয়া নিল এবং চালকের পাশে চড়িয়া বসিল । . তাহাকে ফিশ ফিশ করিয়া বলিল, “সামনের ঐ গাড়ীট যে দিকে যাবে, তুমিও সেইদিকে যাবে। দাড়ালে দাড়াবে, জোরে চললে জোরে চালাবে । দেখে, যেন কিছুতেই চোখের আড়াল না হয় ।” শিখ মোটর-ড্রাইভারের গোফের কোণে একটুখানি হাসির রেখা দেখা দিল । সে তৎক্ষণাৎ গাড়ী ছাড়িয়া দিল । মঙজী তাহার পাশে বসিয়া দুই চোখ বিস্ফারিত করিয়া সামনের গাড়ীখানার দিকে চাহিয়৷ রহিল । রাস্তার পর রাস্ত পার হইয়া চলিয়াছে, কিন্তু সামনের গাড়ীখানা থামিবার কোনোই লক্ষণ দেখায় না । রেজুন সহর শেষ হইয়। গাড়ী অবশেষে সহরতলির দিকে চলিল । মঙজীর বিস্ময় ক্রমেই বাড়িয়। চলিয়াছিল, এ মেয়ে এমন ভাবে চলিয়াছে কোথায় ? এ কি একেবারে পলায়নের ব্যবস্থা, শুধু গোপন সাক্ষাতের নয় ? তাহা হইলে ত বিপদ, মঙজী কিছুই করিতে পরিবে না। সে একাকী এবং সঙ্গে তাহার কোনোই অস্ত্র নাই । তাহাকে শুধু চাহিয়া দেখিতে হুইবে । সামনের ট্যাক্সিখান হঠাৎ থামিয়া গেল। মঙজীর গাড়ীও দাড়াইল । সামনে একখানা বড় বাড়ী । যুবক বিস্মিত হইয়া দেখিল যে, বাড়ীখন তাঙ্গর পরিচিতই, এখানে সহরের বিখ্যাত এক গুজরাটী বণিকের বাস । তাহার হীরা জহরতের বেশ বড় কারবার আছে । কিন্তু সে ব্যক্তি প্রৌঢ় এবং বিবাহিত, দেশে স্ত্রী-পুত্র সকলই আছে বলিয়া জানা যায়, তাহার সহিত এই ব্রহ্মদেশীয় যুবতীর কি সম্পর্ক ? সে কি অর্থের লোভে এতখানি নীচে নামিতে পারে ? এমন যাহার রূপ, প্রতি পদক্ষেপ যাহার রাণীর মত দৃপ্ত, সে তুচ্ছ টকার লোভে নিজেকে বিক্রয় করিবে ? হইতে পারে জগতে সবই সম্ভব। যুবতী নামিয় ভিতরে চলিয়া গেল। মঙঙ্গী টাক্সি হইতে নামিয়া পড়িল । সন্ধান ত পাওয়াই গেল, এখন আর ট্যাক্সি দাড় করাইয়। রাখিয়া লাভ কি ? বাড়ী ফিরিবার জন্য ট্রাম রহিয়াছে, রিক্স রহিয়াছে। সে ভাড়া চুকাইয়া ট্যাক্সিওয়ালাকে বিদায় করিয়া দিল । বাড়ীটার সামনের প্রবাসা—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড ফুটপাথে সে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল, অবশু একটু সতর্কভাবে, যাতে সহজেই লোকের চোখে ধরা না পড়ে । খুব বেশীক্ষণ তাহাকে অপেক্ষা করিতে হইল না । আধঘণ্টার মধ্যেই যুবতী আবার বাহির হইয়া আসিল, গৃহস্বামী তাহার সঙ্গে। র্তাহার মুখ একেবারে হাস্যবিকশিত। মা সান-ও মৃদু মৃদু হাসিতেছে। মঙজীর একেবারে অন্তরাত্মা পৰ্য্যন্ত জলিয়া গেল। হাতে কিছু থাকিলে, গুজরাটী ভদ্রলোকের সেদিন একটা অপঘাত ঘটিয়া যাইত । ভাগ্যগুণে তিনি তখনকার মত বাচিয়া গেলেন। মা সান চলিয়া যাইতেই, মঙজী তাড়াতাড়ি একটা রিক্স চড়িয়া বাড়ী ফিরিয়া আসিল । ছুটির দিনট তাহার একেবারে ব্যর্থ হইয় গেল । কোথাও সে বাহির হইল না, সারাদিন ঘরে বসিয়া, প্রতিহিংসা গ্রহণের যত অদ্ভুত প্ল্যান করিতে লাগিল বন্ধুর আসিয়া ডাকাডাকি করিয়াও তাহাকে বাহির করিতে পারিল না । সামনের বাড়ীৰ দিকে সে তীক্ষু দৃষ্টি রাখিল, যেম তাহার অজ্ঞাতে কেহ বাড়ী হইতে বাহির হইতে বা বাড়ীতে ঢুকিতে না পারে । { বিকালের দিকে বাড়ীর গৃহিণী নিজের গাড়ীতে বহির হইয়া গেলেন । তিনিও একাকিনীই গেলেন, কন্যা বাড়ীতেই রাংল। মঙলী ভাবিল, ইহাদের হইল কি ? এত কাল ত দুজনে সৰ্ব্বদাই এক সঙ্গে বাহির হইত, আজ এত একলা ঘোরার ঘটা পেন ? মা-মেয়েতে কিছু লইয়া বিশেষ একটা মনোমালিন্ত হইয়া থাকিবে । যা মেয়ের ব্যবহার, হওয়৷ কিছুই বিচিত্র নয় । গৃহিণীর গাড়ী যে দিকে চলিয়াছিল, তাহা জানিলে মঙ তীর বিস্ময় আরো শতগুণ বাড়িয়া যাইত । সহরের নামজাদা চিবি ৎসক ডাঃ মরফি তখন নিণ্ডের পড়িবার ঘরে বসিয়া ধূম পান করিতেছিলেন, পায়ের কাছে র্তাহার পোষ কুকুরটি কুণ্ডলী পাকাইয়া শুষ্টয়াছিল। ভদ্রলোক বিপত্নীক, দুষ্টটি কন্যা আছে, দুইজনই বিলাত বোডিং-এ থাকিয়া পড়াশোনা করিতেছে। হঠাৎ বেয়ার ভিতরে ঢুকিয় সেলাম করিয়া জানাইল, একটি ব্রহ্মদেশীয়া ভদ্রমহিলা তাহার সঙ্গে বিশেষ প্রয়োজনে
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।