পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ులి বিলিতি কাপড়ের পুটুলি কুপYপ করে সেই আগুনের ওপর পড়তে লাগল। বিছুমামার উচ্চকুণ্ঠের প্রতিবাদ সেই গোলমালে কারুর কানেই গেল না । হঠাৎ দেখা গেল বিষ্ট মামার বাড়ীর চাকররা ধরাধরি করে একটা বেশ বড় প্যাকিং কেস্ রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে আসছে । সেটাকে অগ্নিকুণ্ডের মাঝখানে রেখে বেশ করে কেরোসিন ঢেলে কাঠ-কুটো জড়ো করে? তারা নতুন করে আবার আগুন ধরিয়ে দিল, আবার শত কণ্ঠের চীৎকারে গগন বিদীর্ণ হতে লাগ ল, “বল মহাত্মা গান্ধীকি জয় !” বিষ্ট মামা সেই ভিড় ঠেলে চাকরদের একজনের কাছ থেকে আর-একজনের কাছে ছুটোছুটি কবৃতে কবৃতে উত্তেজিত স্বরে ক্রমাগত প্রশ্ন করতে লাগলেন, “ওটা কি রে, ওটা কি ?” সেটা যে কি তারা কেউ তা বলতে পারলে না। কেবল জানা গেল, মাইজী সেটাকে এনে আগুনে দিতে বলেছেন । * এস্তে উপরে গিয়ে বিষ্ট মামা চীৎকার করে জিজ্ঞেস কবুলেন, “কাঠের বাক্সে করে কি পাঠিয়েছ আগুনে দেবার জন্যে ?” মামী বললেন, “আমার মুণ্ডু ।” মাম বললেন, “সেটা আগুনে দিয়েছ ত অনেকদিন আগেই, আজকেরটা কি ?” মামী বললেন, “আর-একটু দেরি করলেই দেখতে পেতে, কাঠের বাক্স পুড়ে যেতে বেশীক্ষণ লাগে না । ভালো জিনিষের জন্যে এইটুকু ধৈর্য্য-সহকারে অপেক্ষ করতে পারলে না ?” বিষ্ট মামা গলার স্বর সপ্তমে চড়িয়ে বললেন, “এ তোমার জন্যে লত থেকে অর্ডার দিয়ে আনানো চরকাটা নয় ?” মামী বললেন, “চবুকাই বটে, জিনিষটাও বেশ, পাছে ব্যবহার করতে লোভ হয় তাই পুড়িয়ে দিচ্ছি। লোহার জিনিষ, তবু আগুনে পুড়লে খানিকট নষ্ট হবেই, কাঠও জায়গায় জায়গায় আছে ।” মামা বসে পড়ে' বললেন, “কী সৰ্ব্বনাশ ! ওটার জন্যে কত দাম দিতে হয়েছে তা জানো ?” প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড মামী বললেন, "তাও জানি। ঐ যে টমাস কুকের কাগজপত্র সব ঐখানে পড়ে’ আছে । ওগুলিতে তোমার কাজ থাকৃতে পারে ভেবে আমি আর পোড়াইনি।” বিকৃত কণ্ঠে মামা বললেন, “তোমার অনুগ্রহ ?” তারপর মামীম গুনগুন করে গান করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে দরজায় খিল দিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসে পড়ে’ বললেন, “দুত্তোর ” (v, ) এর পর বিষ্টমামা মরীয় হয়ে উঠলেন । এমন যে ষ্টেট্স্ম্যান সেও তার লেখা আর ছাপতে চায় না দেখে নিজে খরচ করে পুস্তিক ছাপাতে লাগলেন । স্বদেশীর বিরুদ্ধে ঘরের সংগ্রামে পরাজিত হয়ে, ঘরের বাইরে অকস্মাৎ অহীরাবণের মত অমিতপরাক্রমে তিনি লড়তে লাগলেন । ছদ্মনামটি নানা কারণে অবখ্য বাহাল রইল। কিন্তু একাজেও বাধা ঘটুতে লাগল। দেশী ছাপাখানার মালিকেরা ছাপতে অস্বীকার করতে লাগল, সাহেবদের ছাপাখানার শরণাপন্ন হয়ে সে-সমস্যা মিট্‌ল । কিন্তু ক্রমে দেথা গেল, পুস্তিক ছাপা হয়ে পড়ে থাকে, সেগুলি বিলি করবার লোক পাওয়া যায় না, মার খাওয়ার ভয়ে কেউ সেগুলি নিতে চায় না। নূতন লোক পাকুড়াও করে করে কিছুদিন চলল, অবশেষে দেখা গেল বিলি কবৃবার লোক পাওয়৷ সত্ত্বেও সেগুলি আর বিলি হয় না, বিনি-পয়সার জিনিষ হলেও কেউ সেগুলি নিতে চায় না। এমনি অবস্থায় বিষ্ট মামাকে বাধ্য হয়ে গোলদীঘিতে তার প্রথম বিদেশী বক্তৃতা দিতে যেতে হলো । ছদ্মনামের আড়ালটা আর রাথ চলল না । বিষ্ট মামার চেহারাতে এমন-একটা কিছু ছিল যাতে তিনি যত বেশী গম্ভীর হতেন তাকে দেখে লোকের তত বেশী হাসি পেত। দেখতে যে তিনি কুৎসিত ছিলেন তা নয়। পরিষ্কার গায়ের রঙ, পাচফুট সাড়েআট ইঞ্চি লম্বা, একহার চেহারা, সবল মাংসপেশী, নাক মুখ চোখ মোটামুটি ভদ্র বাঙালীর যে-রকম হয়ে থাকে। কিন্তু বিষ্ট মামার ধারণা ছিল পুরুষ মাত্রেরই