পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বন্দী Vసి অপরিস্কার চাউল, মোট আটরি রুট, জলের মত ডাল, অৰ্দ্ধসিদ্ধ একটা তরকারি। সকল স্থানে কয়েদী ওয়ার্ডার, অপর কয়েদীদের কৰ্ম্ম পর্য্যবেক্ষণ করিতেছে । প্রত্যুযে, অন্ধকার থাকিতে ঘণ্টা বাজে, বন্দীদিগকে তাড়াতাড়ি উঠিয়া, প্ৰাত:কৃত্য সমাপন করিয়া কাজে যাইতে হয়, দ্বিপ্রহরে আহারের জন্য এক ঘণ্টা অবকাশ, আবার সন্ধ্যা পর্য্যন্ত কাজ। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর এই রকম চলিয়াছে, কখন বিরাম নাই, কখন কোন পরিবর্তন নাই । মাঝে মাঝে যাহা নূতন কিছু হয় তাহাতে বন্দীদের ভয় হয়, আনন্দ হয় না। কখন কোন বন্দী আদেশপালনে আপত্তি করে অথবা কৰ্ম্মে অবহেলা করে, শাস্তিস্বরূপ বেত্রাঘাতের আদেশ হয়। একটা কাঠের তিনকোণা ফ্রেমে অপরাধীর জামা খুলিয় তাহাকে বঁধে, আর একজন কয়েদী তাহাকে বেত মারে। জেলের অধ্যক্ষ ও ডাক্তার দাড়াইয়া থাকে, চারিদিকে কয়েদীরা খিরিয়া দাড়ায়। প্রথম কয়েক ঘা পড়িতে অপরাধী আৰ্ত্তনাদ করে, তাহার পর চীৎকার করিবার ক্ষমতা থাকে না, মাথা স্বন্ধে হেলিয়া পড়ে, কাতরোক্তি বন্ধ হইয়া আসে। যখন তাহাকে ছাড়িয়া দেয়, কিছুক্ষণ উঠিতে পারে না, তাহার পর হামাগুড়ি দিয়া আস্তে আস্তে চলিয়া যায়। রাত্রে প্রাচীরের উপর ভরা বন্দুক লইয়া, পায়চারি করিয়া প্রহরীরা পাহারা দেয়, মাঝে মাঝে ইণকে, অল ওয়েল্‌ ! চারিদিক হইতে, চারিটা প্রাচীর হইতে সেই সাড়া আসে, অল ওয়েল! কদাচ কখন, ভারি রাত্রে মহা কোলাহল উখিত হয়, জুমদাম বন্দুকের আওয়াজ, চারিদিকে ছুটাছুটি, চারিদিকে চীৎকার, কয়েদী ভাগ ! কয়েদী ভাগ ! বন্দীর তাড়াতাড়ি উঠিয়া বাহিরে আসিয়া কি হইয়াছে জানিতে চায়, অমনি বন্দুকধারী কয়েকজন প্রহরী তাহদের পথরোধ করে, তাহাদিগকে শয়নকক্ষে প্রবেশ করিতে আদেশ করে । বন্দীগণ মেষের পালের মতন জড়সড় হইয় কোন কয়েদী পলায়ন করিয়াছে, তাহাই আলোচনা করে। পলায়ন করিয়া কয়জন কয়েদী রক্ষা পায় ? তখনি, না হয় কিছুদিন পরে, আবার ধরা পড়ে,পলায়নের অপরাধে শাস্তি বাড়িয়া যায় ! কয়েদীদের নিজের কথা, জেলের ভিতর যেন পোষা পার্থী, খাচা হইতে উড়িয়া গেলে যেন বাজ তাড়া করে। জেলের মধ্যে শুধু আটক, পলায়ন করিলে পিছন হইতে যেন বাঘ গর্জন করিয়া ছুটিয়া আসে । এই সকল নাম-হার, নম্বরমারা বন্দীদের মধ্যে যাহার গলার চাকৃতিতে ৩৫১ নম্বর খোদা সে যেন কি রকম কি রকম। তাহার বয়স হইয়াছে, কিন্তু যত বয়স, দেখিতে তাহার অপেক্ষাও বৃদ্ধ। শীর্ণ, ক্ষীণমূৰ্ত্তি, চক্ষের দৃষ্টি ভয়চকিত, সৰ্ব্বদাই যেন সঙ্কুচিত, সশঙ্কিত ভাব। মুখে বড়-একটা কথা নাই, কলের মতন ঘুরিয়া বেড়ায়, কলের মতন কাজ করে। কেহ ডাকিতেই তাড়াতাড়ি আসিয়া মাথা নীচু করিয়া দাড়ায়। শ্বাপদকূলের মধ্যে মেষ পড়িলে তাহার যেমন দশা হয় ইহার যেন সেই অবস্থা। কয়েদীদের অনেকেই দুৰ্ব্বত্ত, নিৰ্ভীক, জেলের শাসনকে তৃণ জ্ঞান করে, নিজেদের মধ্যে আপন আপন দুষ্কর্মের বড়াই করে, কারামুক্ত হইয়া আবার কি করিবে তাহার জল্পনা করে। তাহাদের মুখে সৰ্ব্বদাই হাসি, সৰ্ব্বদাই নিশ্চিস্ততা । ৩৫১ নম্বর যেন তাহদের দলের কেহ নয়, যথাসাধ্য তাহদের পাশ কাটায়, আলাদা নিত্য নির্দিষ্ট কাজ করে। কোন কয়েদী তাহাকে কিছু আদেশ করিলে তাহাও করিত। জেল হইবার পূৰ্ব্বে তাহার নাম ছিল কালীচরণ। লেখাপড়া জানিত না, গ্রামে কখন মোট বহিয়া, কখন চাষীর কাজ করিয়া কষ্টে দিনপাত করিত। উপার্জনের লোভে সহরে গিয়াছিল । সহরের সব দেখিয়া অবাক হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে এমন সময় একজন ভদ্রবেশী লোক তাহাকে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল,—কি হে তুমি এখানে নতুন এসেচ, না ? কালীচরণ নমস্কার করিয়া বলিল,—ই, বাবুমশায়, আমি দেশ থেকে এই সবে এসেচি। —চাকরী করবে ? • —আঞ্জে, চাকরীর জন্যই এখানে আসা । —তবে আমার সঙ্গে এস। কালীচরণ তাহার সঙ্গে গেল। একটা ছোট গলির