পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b"8や মানচি, মেয়েগাড়িতে অনেক বয়স্থ স্ত্রীলোকও তো থাকেন • • •** এবার ত্রস্ত, শঙ্কিতভাবে রমণীর মাথা পৰ্য্যন্ত নড়িয়া উঠিল এবং অস্ফুটস্বরে দুই তিনবার শোনা গেল—“ন।— না—না ।" তখন আমি কড়া হইয়। বলিলাম--“তাহ’লে আমাকেই বলতে হবে ব্যাপারটা কি । কেন বঁাদছিলেন বলুন তো ?” আবার সেইরূপ জড়বৎ নিশ্চল, নীরব । প্রশ্ন করিলাম —“বাড়ী কোথায় আপনার ?” উত্তর না পাইয়া আবার জিজ্ঞাসা করিলাম-“স্বামীর মাম ?” - মাথাটি "না"- এর ভঙ্গিতে নড়িয়া উঠিল। জিজ্ঞাসা করিলাম—"বিবাহ হয়নি ?” মাথা নাড়িয়া জামাইলেন—“না।” একটু খামিয়া কথাটা যথাসম্ভব গুছাইয়া বলিলাম“কোন দুবৃত্তের হাতে পড়েচেন কি ?” আর কোন উত্তর পাওয়া গেল না—অস্ফুট স্বরের মধ্য দিয়াও নয়, কিংবা ঘোমটী-ঢাকা মাথার মুদ্র সঞ্চালনেও নয়। এত কাছাকাছি, অথচ সমস্ত রাতের ভিতর কথার মধ্যে পাওয়া গেল ঐ তিনটি ক্রস্ত, চাপা—“না না—না” আর পরিচয় ঐ দুটি ইঙ্গিত থেকে যা চুনিয়া লওয়া যায়। এতে অস্তরের উদ্বেগ তো শীতল হইলই না, বরং কল্পনার উত্তাপ স্বষ্টি করিয়া মনটাকে ক্রমে একটা ব্যথা আশঙ্কার বাম্পে ভরিয়া দিল । গাড়ি নক্ষত্রবেগে ছুটিয়াছে। মুখ বাহির করিয়া নৈশ প্রকৃতির পানে চাহিলাম। স্তব্ধ, অপরিস্ফুট জ্যোৎস্না প্রাণময় জগতকে আপনার মোহআলিঙ্গনে বদ্ধ করিয়া যেন ঘুমাইয়া আছে। বিরলনক্ষত্র আকাশ। চাদের উপর একখণ্ড মন্থরগতি মেঘের আবরণ পড়িয়াছে। একটি মাত্র তার চোখে পড়ে,--- সে যেন তাহার সমস্ত দীপ্তি দিয়া ঐ মেঘাবগুণ্ঠনের ওপারে তাহার কৌতুকদৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে চায় । বলিতে কি, বেশ বুঝিতে পারিলাম আমি পরাভূত হইয়া আসিতেছি। একেই পড়িতেছিলাম “একরাত্রি”, তাহার উপর একরাত্রিব্যাপী একখানি খণ্ডকাব্যের এই প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড অতিবাস্তব আয়োজন—এক্ষেত্রে পরাভব হওয়া ছাড়া আর উপায়ান্তর ছিল না।...মনে হইল, কি-ই বা ক্ষতি এমন ? জীবনের এই নিরুদেশ যাত্রাপথে শুধু একটি রজনীর জন্য আমরা অপরিচিত দুটিতে যদি এত কাছাকাছি আসিয়াই পড়িয়া থাকি, তা এমন বিরসভাবে পাশ কাটাইয়া যাইবারই বা সার্থকতা কোথায় ? কি জানি আমার এ সাহচৰ্য্য ওর মনে কি ভাব তুলিয়াছে-কোনো ভাবই তুলিয়াছে কি না, তারই বা স্থিরতা কি ? কিন্তু ত৷ ভাবিয়া আজি কার রাত্রে তীব্রগতির এই মাদকতা ও নিথর জ্যোংস্কার মধুর অবসাদের মধ্যে উহাকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া যদি খানিকটা ভাবের পুজি সংগ্ৰহ করিয়া লইতে পারি তে কাহার তাহাতে আসে যায় । ওর দুটি বাণী, কি এতটুকু দৃষ্টি যদি আমার সে কল্পনাকে পুষ্ট করেই তো সেটা কি এতই আশঙ্কার বিষয় হইয়া পড়িবে ? বিধাতার দয়াই হোকৃ, আর চক্রান্তই হোক্ সব দিক দিয়াই যেন কাব্যটুকু জমিয়া উঠিতে লাগিল । লক্ষ্মীসরাই ষ্টেশনে একজন শুভ্ৰ-শ্মশ্র প্রাচীনপন্থী মুসলমান উঠিলেন। আদবকায়দার মত অভিবাদনাদি শেষ হইলে ও-কোণে নজর পড়িতে অতিমাত্র সঙ্কুচিত হইয়া পড়িলেন, বলিলেন;–“এঃ, আপনার বিবিসাহেব। এ গাড়িতে রয়েচেন না দেখে প্রবেশ করে বড়ই বেয়াদবি করে ফেলেচি, মাফ করবেন। আপনি বারণ করে দিলেই পারতেন । আমি নেমে অন্য গাড়িতে যাই বেয়াদবিটা মাফ করতে হবে...কুলি ?...” আমি এক অদ্ভুত উত্তর দিয়া বসিলাম—“ন, ন, সে কি, যখন উঠে পড়েচেন, থাকুন। আপনি আমাদের পিতার বয়সী . ” “বিবিসাহেবার” প্রতিবাদ ত করা হইলই না, অধিকন্তু মুখ থেকে বেশ সরলভাবে বাহির হইয় গেল—“আপনি আমাদের পিতার বয়সী।” একবার সেই জড়মূৰ্ত্তির উপর আপনিই দৃষ্ট্রিট। গিয়া পড়িল। না-অনুমোদনের স্বল্পষ্ট আভাস না থাকিলেও, আপত্তিরও তো কোন ইঙ্গিত নাই । রহস্ত অতল !