পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮৭৪ সামনেই একটা চায়ের দোকান। অপু প্ৰণবের হাত ধরিয়া সেখানে ঢুকিল। প্ৰণবের ভারী ভাল 'লাগিল অপুর এই অত্যন্ত খাটি ও অকৃত্রিম, আগ্ৰহভরা হাত ধরিয়া টানা । সে মনে মনে ভাবিল—এ রকম warmth v{# sincerity #*açsR NčqI *ife#I Rfg ? বন্ধু তো মুখে অনেকেই আছে —অপু একটা জুয়েল । অপু বলিল—কি খাবে বল ?...এই বেয়ার, কি আছে ভাল ? - খাইতে খাইতে প্রণব বলিল—তারপর চাকরির কথা বল—যে বাজার, কি করে জোটালি ? অপু প্রথমে লোহার বাজারের দালালীর গল্প করিল। হাসিয়া বলিল—তারপর আবদুলের মহাভিনিজমণের পরে হার্ডওয়ার আর জমলে না—ঘুরে ঘুরে বেড়াই চাকরি খুজে, বুঝলি ?...একদিন একজন বললে বি-এন-আর জাপিসে অনেক নতুন লোক নেওয়া হচ্চে—গেলুম সেখানে। খুব লোকের ভিড়, চাকরি অনেক খালি আছে, ইংরিজি লিখতে পড়তে পারলেই চাকরি হচ্চে। ব্যাপারকি, শুনলাম মাস-দুই হ’ল ষ্ট্রাইকু চলচে—তাদের জায়গায় নতুন লোক নেওয়া হবে— প্রণব চা-য়ে চুমুক দিয়া বলিল-চাকরি পেলি ? —শোন না, চাকরি তখুনি হয়ে গেল, প্রিন্সিপ্যালের সার্টিফিকেটটাই কাজের হ’ল, মোটামত এক সাহেব ছিল, তখুনি ছাপানো ফৰ্ম্মে এ্যাপয়েণ্টমেণ্ট লেটার দিয়ে দিলে, তারপরে বাইরে এসে ভারী আনন্দ হ’ল মনটাতে । চল্লিশ টাকা মাইনে, যেতে হবে গঞ্জাম জেলায়, অনেক দূর, যা ঠিক চাই তাই—বেণ্টিঙ্ক ষ্ট্রীটের মোড়ে একটা চায়ের দোকানে বসে মনের খুশিতে উপরি উপরি চার কাফ চ৷ খেয়ে ফেললাম—ভাবলাম এতদিন পরে পয়সার কষ্টটা তো ঘুচল ?... জার কি খাবি ? এই বেয়ার, আর দু’টো ডিম ভাজা—না-না থা— —দুদিন চাকরি হয়েচে বলে বুঝি—তোর সেই পুরনো রোগ আজও—ই তারপর ? --তারপর বাড়ি এসে রাতে শুয়ে শুয়ে মনটাতে ভাল বললে না-ভাবনাম ওরা একটা মুবিধে আদায় করবার জন্তে ট্রাইৰ করেচে, ছমাস তাদেরও ছেলেমেয়ে কষ্ট প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩eশ ভাগ, ১ম খণ্ড পাচ্চে, তাদের মুখের ভাতের দলা কেড়ে খাব শেষ কালে ?...সারারাত সে একটা যুদ্ধ ভাই-একবার ভাবি যাই চলে, অতদূর কখনো দেখিনি, তা ছাড়া মা মারা যাওয়ার পরে কলকাতা আর ভাল লাগে না, যাই গে— কিন্তু শেষ পৰ্য্যস্ত মনে হ’ল এ ভারী স্বার্থপরের কাজ হচ্চে—এ ধরণের স্বার্থপর হতে পারব না কখনো— —তারপর বুঝি— —পরদিন দশটার সময়ে ফের ওদের আপিসে গেলাম —ছাপুনি ফৰ্ম্মখানা ফেরৎ দিয়ে এলাম, ব’লে এলাম আমার যাওয়ার স্ববিধে হবে না— প্রণব বলিল—তোর মুখ আর চোখ look full of music & poetry. প্রথম থেকে আমি জানি এ একজন আইডিয়ালিষ্ট ছোক্রা–তোদেরই দিয়েই তো এসব হবে—তোর এ খবরের কাগজের কাজ কখন ? —রাত ন’টার পর যেতে হয়, রাত তিনটের পরে ছুটি। ভারী ঘুম পায়, এখনও রাত-জাগা অভ্যেস হয় নি তবে স্ববিধে আছে, সকাল দশটা এগারোটা পৰ্য্যন্ত ঘুমিয়ে নি, সারাদিন লাইব্রেরীতে কাটাতে পারি – খাওয়া-দাওয়া ভালই হইল। অপু বলিল-জল খাস্নে—চল কলেজ স্কোয়ারে সরবৎ খাব—বেশ মিষ্টি লাগে খেতে, লেমন স্কোয়াশ থেয়েছিস্—আয়,— কলেজের অত ছেলের মধ্যে এক অনিল ও প্রণব ছাড়া সে আর কাহাকেও বন্ধুভাবে গ্রহণ করিতে পারে নাই, অনেক দিন পরে মন খুলিয়া আলাপের লোক পাইয় তাহার গল্প আর ফুরাইতেছিল না। বলিল, গাছপালা যে কতদিন দেখিনি, ইট আর সিমেণ্ট অসহ্য হয়ে পড়েচে । আমাদেব আপিসে একজন কাজ করে, তার বাড়ি হাওড়া জেলা, সেদিন বলচে বাড়ির বাগানে আগাছ বেড়ে উঠেচে, তাই সাফ করচে রবিবারে, রবিবারে । আমি তাকে বলি কি গাছ মিত্তির-মশাই ? সে বলে—কিছু না, ঝুপি গাছ । আমি বলি–বলুন না কি কি গাছ ? রোজ সোমবারে সে বাড়ি’ থেকে এলে তাকে এই কথা জিগ্যেস করি—সে হয়ত ভাবে, আচ্ছা পাগল!--রাত্রে, ভাই, সারারাত প্রেসের ঘড়ঘড়ানি, গরম, প্রিন্টারের তাগাদার মধ্যে