পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] অপরাজিত j bጫ¢ আমার কেবলই মিত্তির-মশায়ের বাড়ির সেই ঝুপি বনের কথা মনে হয়—মনে ভাবি কি কি না জানি গাছ । এদিকে চোখ ঘুমে ঢুলে আসে, রাত একটার পরে শরীর এলিয়ে পড়তে চায়, শরীরের বাধন যেন ক্রমে আলগা হয়ে আসে, কুঁজোর জল চোখেমুখে ঝাপটা দিয়ে ফুলে৷ ফুলে, রাঙা রাঙা, জালা করা চোথে আবার কাজ করতে বসি—ইলেক্‌টুক্‌ বাতি যেন চোখে ছুচ বেঁধে---আর এত গরমও ঘরটাতে ! পরে সে আগ্রহের স্বরে বলিল--একদিন রবিবারে চল তুই আর আমি কোনো পাড়াগায়ে গিয়ে মাঠে, বনের ধারে ধারে সারাদিন বেড়িয়ে কাটাব---বেশ সেখানেই লতা-কাটি কুড়িয়ে আমরা রণধব---বিকেল হবে---পার্থীর ডাক যে কতকাল শুনিনি!...দোয়েল কি বেী-কথা-ক, এদের ডাক ত ভুলেই গিয়েচি, রবিবার দিনটা ছুটি, চল যাবি ?...এখন কত ফুল ফুটবারও সময়---আমি অনেক বনের ফুলের নাম জানি, দেখিস চিনিয়ে দেবে--- ইহারই দিন-পনেরো পরে একদিন প্রণব আসিয়া বলিল--তোকে নিয়ে যাব ব’লে এলাম—আমার মামাতো বোনের বিয়ে হবে সোমবারে, শুক্রবার রাত্রে আমরা যাব, খুলনা থেকে ষ্টীমারে যেতে হয়, অনেক দিন কোথাও যাসনি, চল আমার সঙ্গে । দিন-চারপাচের ছুটি পাবি নে ? ছুটি মিলিল। তাহার কাজে ও লেখায় এডিটার সন্তুষ্ট ছিলেন, এক সপ্তাহ ছুটি দিতে আপত্তি করিলেন नां । টেনে উঠিবার সময় তাহার ভারী আনন্দ । অনেক দিন কলিকাতা ছাড়িয় যায় নাই, অনেক দিন রেলেও চড়ে নাই। রাত্রে কিছু দেখা না গেলেও সে জানালার কাছে বসিয়া ছেলেমাচুষের মত উৎসাহে জানালার বাহিরে মুখ বাহির করিয়া রহিল। সকালবেলা ষ্টীমারে উঠিবার সময় ভৈরবের ওপার হইতে তরুণ স্বৰ্য্য ওঠার দৃশুটা তাহাকে মুগ্ধ করিল। নদী খুব বড় ও চওড়া, ষ্টীমার প্রণবের মামার বাড়ির ঘাটে ধরে না, পাশের গ্রামে নামিয়া নৌকায় যাইতে হয়। অপু এ অঞ্চলেই কখনো আসে নাই, অপরিচিত ধরণের গাছপালা, সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশ, সে এমন ধরণের সব প্রশ্ন প্রণবকে করিতে লাগিল, যাঁহাতে মনে হইবার কথা যে এ অঞ্চলে দুই হাত দুই পা বিশিষ্ট " মছুষ্যজাতি বাস করে কিনা, সে বিষয়ে তাহার যেন সন্দেহ আছে । নদীর ধারে সুপারির সারি, বাশ, বেত বন, অসংখ্য নারিকেল। টিনের চালাওয়ালা গোলা গঞ্জ। অদ্ভূত ধরণের নাম, স্বরূপকাটি, যশাইকাটি । দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ও খাড়া পশ্চিম, দুদিক হইতে প্রকাণ্ড দুটা নদী আসিয়া পরস্পর মিলিত হইয়াছে, অপূৰ্ব্ব দৃশ্ব । বিস্তীর্ণ জলরাশি বাদিকের উচু পাড় ছুইয়া অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারে বাকিয়া গিয়াছে, ও-দিক হইতে বড় দল খাড়া তীরের মত সোজা আসিতে আসিতে কিসে বাধা পাইয়া হঠাৎ যেন খামিয়া গিয়াছে, দুই নদীর জল যেখানে একত্র মিলিল, সেখানটাতে জলের রং ঈষৎ সবুজ, এবং সঙ্গমস্থানেরই ও-পারে আধ মাইলের মধ্যে প্ৰণবের মামার বাড়ির গ্রাম গঙ্গানন্দকাটি। . নদীর ঘাট হইতে বাড়িটা অতি অল্প দূরে। এ গ্রামের মধ্যে ইহারাই অবস্থাপন্ন সম্রাস্ত গৃহস্থ । অনেকবার অপু এ-ধরণের বাড়ির ছবি কল্পনা করিয়াছে, এই ধরণের বড় নদীর ধারে, শহর বাজারের ছোয়াচ ও আবহাওয়া হইতে বহু দূরে, কোনো এক অখ্যাত ক্ষুদ্র পাড়াগায়ের সম্রাস্ত গৃহস্থ, আগে অবস্থা ভাল ছিল, অথচ এখন নাই, নাটমন্দির, পূজার দালান, দোলমঞ্চ, রাসমঞ্চ সবই থাকিবে, অথচ সে-সব হইবে ভাঙা, শ্ৰীহীন, আর থাকিবে প্রাচীন ধনী-বংশের শাস্ত মৰ্য্যাদাবোধ, মান-সম্মান, উদারতা। প্ৰণবের মামার বাড়ির সঙ্গে সব যেন হুবহু মিলিয়া গেল । ঘাট হইতে দুই সারি নারিকেল গাছ সোজা একেবারে বাড়ির দেউড়ীতে গিয়া শেষ হইয়াছে, বায়ে প্রকাও পূজার দালান, ডাইনে হলুদ রঙের কলসীবসানো ফটক ও ফুলবাগান, দোলমঞ্চ রাসমঞ্চ, নাটমন্দির। খুব জলুস নাই কোনোটারই, কাশিস খসিয়া পড়িতেছে, একরাশ গোল পায়রা নাটমন্দিরের মেজেতে চরিয়া বেড়াইতেছে, এক-আধটা বটাপট করিয়া ছাদে উড়িয়া পলাইতেছে, একখানা ষোল-বেহারার সেকেলে হাঙর