পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] , মহামায়া Ե-Ե-ծ অবাক হয়ে যেতে হয়। তখন আর মনে হয় না যে মাহুষের বুদ্ধি বা culture-এর কোনো দাম আছে।" | দেবকুমার বলিল, “আচ্ছ, খুব গাদাখানেক টাকা পেতে আপনার কি ইচ্ছে করে ? আপনার অবশ্য তা আছেই, তবু এর চেয়েও বেশী হ’লে ছিল ভাল, একথা কখনও মনে হয় ?” মায়া সংক্ষেপে বলিল, “না, যখন গরীব ছিলাম, তখনও টাকার অভাব কিছু অনুভব করিনি। এখন হয়ত নানাদিকে আমি তখনকার চেয়ে সুখী, কিন্তু তার অন্য কারণ রয়েছে ” দেবকুমার বলিল, “তবু টাকা জিনিষটা খুবই যে দরকারী, তা ত আর আপনি অস্বীকার করেন না ?” মায়া বলিল, “ন, তা মোটেই করি না । লেখাপড়া শেখা, ইচ্ছামত কাজ বেছে নেওয়া, দেশের বা দশের উপকার করা, এসবের কোনোটাই ত টাকা না হ’লে করা যায় না । মনটা-মৃদ্ধ অভাবে শুকিয়ে আসে, নিজের খাওয়-পরা আর থাকার ভাবনা ছাড়া আর কিছু মানুষ তখন ভাবতেই পারে না ।” দেবকুমার বলিল, “আপনার মুথে এ কথাটা শুনে খুব ভাল লাগল। আপনি নিজে ঐশ্বয্যের মধ্যে থেকেও তার যথার্থ দামটা যে ভোলেন নি, এইটাই আশ্চৰ্য্য। ওদেশে পথে-ঘাটে ঘরে-বাইরে, খালি টাকার জন্যে লোলুপত দেখে দেখে ঘেন্না ধরে গেছে। বিশেষতঃ অল্পবয়সী মেয়েদের-মৃদ্ধ টাকার পিছনে পাগল হয়ে ছুটতে দেখলে বড় খারাপ লাগে।” মায়া বলিল, “চলুন, এবার আমার বাগানট আপনাকে দেখিয়ে আনি । রোদটা বেশ পড়ে গিয়েছে । সমাজতত্ত্ব আলোচনা ক’রে ক’রে আপনিও হঁাপিয়ে গিয়েছেন।” দেবকুমার হাসিয়া উঠিয়া পড়িল । বলিল, “আপনার বয়সের পক্ষে আপনি মানুষ চেনেন বড় বেশী দেখছি। সমাজতত্বের আলোচনাটা যে আমার খুব মুখরোচক নয় তা এরই মধ্যে ধরে ফেলেছেন ? কিন্তু কি করব বলুন ? যাবার মতলব মোটেই নেই, তাই আজেবাজে বকে নাকে entertain করবার চেষ্টায় আছি । আপনার gardening R ভাল লাগে না কি f” মায়া বলিল, “খুব । দেশে থাকতে কত গাছ যে লাগিয়েছিলাম তার ঠিক নেই, ফলের গাছ, ফুলের গাছ। এবারে গিয়ে দেখলাম,ফুলের গাছগুলো একটাও নেই, ফল এবং তরকারির গাছগুলো তবু আছে। এখানে বাগান একটা আগেই ছিল, আমি সেটা বদলে নিজের পছন্দমত করেছি। তবে মালীটি মাঝে মাঝে সর্দারি করে আমায় খুব জালিয়ে তোলে।” - কথা বলিতে বলিতে দুইজনেই বাগানের মধ্যে আসিয়া পড়িল । দেবকুমার বলিল, “আমাদের দেশ ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ফুলের বাগানের তদারক করতে উড়ে রাখার কথা কেউ স্বপ্নেও মনে স্থান দিত না। ফুলের সঙ্গে যাদের আকৃতি এবং প্রকৃতিগত সাদৃশু সব চেয়ে বেশী, তাদেরই একাজটা মানায়। আপনার বাগানটি দেখতে বেশ, তবে খানিকট Eurasian.” * মায় বলিল, “style-এর শুদ্ধত রক্ষা করার মত জ্ঞান ত আমার নেই, কাজেই এরকম ভুল হওয়া অনিবাৰ্য্য । যেখানে যা ভাল লাগে, তাই করি, চোখে কেমন দেখায় এইটাই মাত্র বিচার করি।” দেবকুমার বলিল, “সেইটাই আসল প্রয়োজন যদিও । আমার কাছে gardening বিষয়ে কতকগুলি বই আছে ছবি সমেত, সেগুলো আপনাকে এনে দেব। ছবিগুলো দেখতে মন্দ নয় । আমাদের দেশেও বাগান করার এক সময় খুব চলন ছিল, মুসলমানদের আমলে । আগ্রা, দিল্লী, লাহোর, কাশ্মীর প্রভৃতি বেড়ালে, দিশী gardeningএর আন্দাজ পাওয়া যায়। ওদিকে কখন যাননি বুঝি ?” মায়া বলিল, “কখন আর গেলাম ? ছিলাম পাড়াগায়ে, সেখান থেকে সোজা বৰ্ম্মায়। ওসব বুড়ে বয়সের জন্যে তোলা রইল।” দেবকুমার বলিল, “বুড়ে বয়সে কেন, অল্প বয়সেই যাবেন। এখনই ত সময়, বেশী বয়সে কি আর ওসব খেয়াল থাকে ?” মায়া বলিল, “এখন যেতে চাইলেই বা নিয়ে যাবে