* bog প্রবাসা—আশ্বিন, ১৩৩৭ ৷ কেহই তাহাকে ডাকিতে আসিল না। মায়া নিজেই নিজেকে সাত্বনা দিবার চেষ্টা লাগিল। নিরঞ্জন হয়ত এখনও আপিসে পৌছান নাই, দেবকুমার তাহার অপেক্ষায় বলিয়া আছে। নয়ত তাহার নিজেরই কোনো কাজ আসিয়া পড়িয়াছে, তাহার জন্য দেরি হইতেছে। ঘড়ির দিকে তাকাইয়া দেখিল, সময় হইয়া আসিতেছে, কলেজ যাইতে হইলে আর দেরি করা চলে না। নিতান্তই অনিচ্ছাসত্ত্বে এবং নিরুৎসাহভাবে উঠিতে যাইতেছে এমন সময় আর একবার টেলিফোনের ঘণ্টা শোনা গেল । এবং মিনিট-খানেকের মধ্যেই ছোক্রা আসিয়া খবর দিল যে, নীচে টেলিফোনে দিদিমণিকে ডাকিতেছে। মায়া তাড়াতাড়ি নামিয়া গেল । দেবকুমার তাহার সাড়া পাইবামাত্র বলিল, “দেখুন, আপনার বাবা ত যেতে পারবেন না। কিন্তু থামুন, এখনি চটে রিসিভারটা ফেলে দেবেন না। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন, আপনাকে নিয়ে যেতে। আপনি কি যাবেন ? তাহ’লে এখুনি গিয়ে টিকিট করে রাখি।” মায়া কম্পিত কণ্ঠে বলিল, “আচ্ছা যাব।” সে আর কথা না বলিয়া তাড়াতাড়ি উপরে চলিয়া আসিল । নিরঞ্জন সব বিষয়েই সাহেবীআনার ভক্ত। কিন্তু এতদিন পর্য্যস্ত কন্যা সম্বন্ধে একটু যেন বাধার্বাধি করিতেন। অবশু মায়া আলাপ করিত সকলের সঙ্গেই, কিন্তু ইহার বেশী ঘনিষ্ঠত করা কাহারও পক্ষে সম্ভব হয় নাই। হঠাৎ দেবকুমারকে এতখানি নিকটে আসিবার স্ববিধা একরকম যাচিয়া দেওয়াতে মায়া অবাক হইয়া গেল। পিতা কি তাহার মনের ভাব বুঝিতে পারিয়াছেন ? এই কি তাহার আশীৰ্ব্বাদ ? মায়ার বুকের ভিতরটা দুরদুর করিয়ু কঁাপিয়া উঠিল । কলেজে যাইতে তাহার মন কিছুতেই যেন রাজী হইল না। শরীর খারাপের ছুতা করিয়া সে গিয়া শুইয়া-পড়িল । অনেক বেলায় তবে উঠিয়া স্নানাহার করিল। একবার আশা করিল, দেবকুমার আবার হয়ত টেলিফোন করিবে । কিন্তু আর কোনো আহবান আসিল না । মায়ার ষোড়শ জন্মদিনে নিরঞ্জন তাহাকে এক প্রস্থ হীরার অলঙ্কার উপহার দিয়াছিলেন। উহা বহুমূল্য বলিয়া মায়া বিশেষ কখনও পরে নাই, ব্যাঙ্কেই জমা থাকিত। আজ সর্থ করিয়া মায়া তাড়াতাড়ি সেগুলি আনিতে লোক পাঠাইয়া দিল। তাহার বন্ধুবান্ধবরা সৰ্ব্বদ ঠাট্টা করিত যে, বর না আসিলে মায়। এগুলি কখনও পরিবে না। সেই কথা মনে করিয়া মায়ার মুখটা একটু লাল হইয়া উঠিল । বেলাটা শীঘ্রই কাটিয়া গেল। দেবকুমার টেলিফোন করিয়া জানাইল সে সাড়ে চারটার সময় মায়াকে আনিতে যাইবে । আজ ম্যাটিনি পারফরম্যান, কাজেই তাড়া একটু আছে। মায়া সাজসজ্জা আরও করার আগে ছুটিয়া গিয়া তাড়াতাড়ি চা ঠিক করিতে বলিয়া আসিল । দেবকুমার আসিলে তাহাকে একেবারে কিছু না থাওয়াইয়া ছাড়িয়া দেওয়া যায় না । 疆 তাহার পর আসিল সাজের পালা। এত যত্ন করিয়া মায়া কোনোদিন সাজে নাই। কোথাও কোন খুৎ সে রাখিল না। হীরার গহনার সঙ্গে ভাল মানাইবে বলিয়া খুব চওড়া ঢালা জরির পাড়ের শাদা মান্দ্রাজী শাড়ি এবং সেই কাপড়ের ব্লাউস পরিল । খোপায় পরিবার হীরা-বসান একটা বড় গোল ফুল ছিল। সেইটা খোপায় পরিল বলিয়া আর মাথায় কাপড় দিল না। আয়নার ভিতর চাহিয়া দেখিয় খুশি না হইয়া সে পারিল না। অগ্নিশিখার মতই তাহাকে দেখাইতেছে। ঘড়িতে চারটা বাজিতেই সে চা ঠিক করিতে হুকুম দিয়া জুতা মোজা পরিতে আরম্ভ করিল। ঠিক সাড়ে চারটা বাজিতেই দেবকুমারের ট্যাক্সি গেটের ভিতর প্রবেশ করিল । ক্রমশ:
পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।