পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

る〉8 স্বরূকীর সোজা রাস্তাটার দুই ধারে, সারি দেওয়া বড় বড় গাছ। কৃষ্ণচূড়া, অশ্বখ, আম, জাম, তেঁতুল আর তারই মাঝে মাঝে ছাতার মত ছাটাকাটা গোল-ধরণের কতগুলি বকুল গাছ। গাছগুলির মাঝখান দিয়া চওড়া লাল রাস্তাটা একেবারে সরু হইয়। কোথায় যেন সবুজের আড়ালে মিশিয়া গিয়াছে। ঠিক যেন সীমন্তে উজ্জল সিদুর রেখা মেয়েটি বিছানায় শুইয়া শ্রান্ত চোখে সারাদিন তাকাইয়া থাকে। নাম বকুল। দেখিতেও যেন বকুলের भउहे,- সুকোমল ও সুন্দর । পাশাপাশি দুইখানা ঘর। মাঝখানে সরু একটা গলি । স্থ মুখের একখানি ঘরে বকুল একটা তক্তাপোষের উপর সারাদিন শুইয়া থাকে। বিছানার উপর শিয়রের দিকে একখান “আবুলী-মাঝে মাঝে আবুলীতে নিজের শীর্ণবিবর্ণ মুখখানা এক-একবার দেখিয়া লইত। দেখিতে দেখিতে মুখের উপর একটা বেদনার ছায়া ফুটিয়া উঠিত। বুক ভাঙিয়া একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বাহির হইয় আসিত । ঘরের ভিতর ঔষধপত্র ফলফুলারি দেয়ালের তাকে সুন্দর করিয়া সাজানে। রোগীর যা-কিছু দরকার সবই আছে। সেই দিকে দৃষ্টি পড়িতেই তার মনটা হতাশায় ভাঙিয়া পড়ে। দিনের পর দিন কেবল ওষুধ আর ওষুধ,–শিকড় আর মাদুলীর ছড়াছড়ি । অসহ্য বোধ হয়। চোখের স্বমুখে দেয়ালের গায়ে টাঙ্গানে সস্তা দামের ছোট একখানি মহাদেবের ছবি । বহুদিনের বহু শুষ্ক মালায় যেন ঢাকিয়া গিয়াছে। ছবিথানির দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকাইয়া কত প্রার্থনা করে,— কতই-বা মিনতি জানায়। চোখ দিয়া দর দর করিয়া জল বাহির হইয়া আসে । পাশের ঘরে তার ছোট্ট মেয়ে, ছবির কলকণ্ঠে বকুলের তন্ময়ত ভাঙিয়া গেল। চাহিয়া দেখিল, ছবি রান্না করিতেছে, খুব উৎসাহের সহিত ডাল নামাইয়া ভাত চড়াইতেছে, আবার মাছ ভজিবার মত মুখে প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড মুখেই ছ্যাৎ ছ্যাৎ শব্দ করিতেছে। ডাহার রান্নার জল বুঝি ফুরাইয়া গেল। এটো হাত ধুইবার জন্য তাড়াতাড়ি উঠিল । উঠিতেই মায়ের দিকে নজর পড়িল, লজ্জায় দুই হাতে মুখখান ঢাকিয়া ছবি ছুটিয়া গিয়া মায়ের কাপড়ের অর্ণচলে মুখ লুকাইল, তারপর মুখ বাহির করিয়াই দেখে, মায়ের চোখে জল । লঙ্গ চলিয়া গেল, ব্যস্তভাবে ছবি বলিল,- “মা, তোমার খিদে পেয়েছে – তুমি এখন খাবে ?” বুকুল মাথা নাড়িয়া বুলিল,—“ন।” ছবি তাড়াতাড়ি নিজের ফ্রকট। তুলিয়৷ মায়ের চোখের জল মুছিয়া দিল । বলিল,– কাদছ কেন ?” তারপর তাহার চুলগুলিতে হাত বুলাইয়া দিয়৷ বলিল,—“কেঁদন, তুমি ঘুমোও ।” বকুল ছবির হাতটা সরাইয় দিয়া বলিল,—“উহু, আমি বেশ আছি তুমি যাও, খেলা করোগে ।” ছবি চলিয়া গেল । বকুল পাশ ফিরিয়া শুইল । শুইয়া নানা কথাই মনে আসে,—জীবনের দিনগুলি হয়ত শেষ হইয়া আসিতেছে, আস্থক—কিন্তু দুঃখ হয় মেয়েটার জন্ত— 龜 বকুল জানালাটা অল্প একটু খুলিয়া দূরের পানে তাকাইয়া রহিল। ঐ ফাকটুকু দিয়া অনেক দূর পর্য্যস্ত দেখা যায়। অদূরে ইউক্যালিপটাস গাছের রূপালী ঝালরের মত ছাড়া ছাড়া ডালপালাগুলি । সেই ডালের আড়াল হইতে কয়েকখানা বাড়ী একটু একটু নজরে আসে । তাঁর পিছনে কালে মেঘের মত একখণ্ড পাহাড়। ভারি স্বন্দর দেখায় । দুরে গায়ের পথ ধরিয়া ছোট জাতের মেয়েরা যাতায়াত করে । কাহারও মাথায় ঝাকা, কাহারও মাথায়-বা বাজারের সওদা । মেয়েগুলি বিড়ি টানিতে টানিতে চলিতেছিল। বহু দূরের লোক যেন পুতুল । একটু একটু নড়ে,—আসে কি যায় অনেক সময় বুঝাই যায় না। . দেখিতে দেখিতে তার চোখ শ্ৰান্ত হইয়া আসিল । আবার চিন্তারাশি মনের ভিতর ভিড় করিয়া দাড়াইল,—মরিয়া গেলে মেয়েটার - কি দুর্দশাই না হইবে !—কে দেখিবে ? এইটুকু মেয়ে, কত অসহায়—