পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ல் সংখ্যা ] তাহারা যুদ্ধক্ষেত্রে আছে এবং তদনুরূপ সতর্কতা ও সাহস অবলম্বন করিবে। ইংরেজরা শ্রেষ্ঠ জীব বলিয়াই এরূপ ধারণা করিতে পারিবে, তাহা নয়। সরকারী বাঙালী কয়েকজন লোকেরও ত এপর্য্যস্ত ভীতি-উৎপাদক ( টেরারিষ্ট ) দলের হাতে প্রাণ গিয়াছে। কিন্তু তাইদের জায়গায় কাজ করিবার জন্য বাঙালীর অভাব হয় নাই । অতএব ভয় জন্মাইয়া কাজ উদ্ধার করিবার নিমিত্ত যদি কেহ বোমা বা গুলি ছোড়েন, তিনি জানিবেন তাহার উদ্দেশু সিদ্ধ হইবে না। অবশ্য, ভীতি-উৎপাদক দলে এমন লোক থাকিতে পারেন, র্যাহার ফলাফলের প্রতি দৃকপাত করেন না, কেবল প্রতিহিংসার দ্বারাই চালিত হন। র্তাহাদিগকে শুনাইবার মত “কেজো” যুক্তি কিছু নাই। শাস্ত্রের ও মহাপুরুষদের বাণী আগেই শুনাইয়াছি। কেবল একটা কথা বলিবার আছে। বোম। ছড়িলে প্রায় দু-একজন নিরপরাধ লোক হত বা আহত হয়, গুলিতেও তাহা হইতে পারে। এবং তাহা অপেক্ষাও শোচনীয় ব্যাপার এই যে, এইরূপ প্রত্যেক ঘটনার পর অপরাধী আবিষ্কার করিবার নিমিত্ত বিশুর নিরপরাধ লোককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অনেককে প্রহর ও তদপেক্ষ দুঃসহ যন্ত্রণা,ভোগ করিতে হয় । যাহারা বধের চেষ্টা করে, তাহারা স্বয়ং হত হইলে বা আত্মহত্যা করিলেও তাঁহাদের দলে কেহ ছিল কি না আবিষ্কার করিবার চেষ্ট হয় । সেই চেষ্টার ফলে বিস্তর নিরপরাধ লোক যন্ত্রণ ভোগ করে। এই সব কথার আধুনিক দৃষ্টাস্ত পাঠকেরা ংবাদপত্রে পড়িয়াছেন । ইহা অবশু স্বীকাৰ্য্য, হিংসাত্মক যুদ্ধ দ্বারা অনেক পরাধীন দেশ স্বাধীন হইয়াছে, এবং অনেক লোক হিংসাত্মক যুদ্ধের বিরোধী হইয়া থাকিলেও যুদ্ধ ও যুদ্ধের আয়োজন পরিত্যাগ এপর্য্যন্ত কোন মহাজাতি করে নাই। যেরূপ হিংসাত্মক যুদ্ধ করিয়া ভারতবর্ষ স্বাধীন হইতে পারে, তাহার আয়োজন ভারতবর্ষের বৰ্ত্তমান অবস্থায় হইতে পারে কি না, বলিবার মত জ্ঞান আমাদের নাই ; কিন্তু ভীতি-উৎপাদক দলের সেরূপ আয়োজন নাই, তাহা সকলেই জানে। হিংসাত্মক যুদ্ধ দ্বার স্বাধীন হইবার মত অবস্থা ভারতবর্ষের হইলেও, অহিংস চেষ্টা অন্য কোন কোন কারণে বাঞ্ছনীয় হইতে পারে। স্বাধীনতার জন্য হিংসা করিলেও হিংস হিংসাই, তাহ মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ নহে ! স্বতরাং তাহাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয় -বিশেষতঃ যখন অন্ত পথ রহিয়াছে। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা লাভের জন্যও মানব-প্রকৃতির কোন অমূল্য সম্পদ বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। হিংসাত্মক যুদ্ধ করিলে অপর পক্ষের বিবিধ প্রসঙ্গ রাষ্ট্রীয় প্রগতির হিংস্র ও অহিংস পন্থা సిలి প্রতিহিংসা-বৃত্তি উত্তেজিত হয়, স্বতরাং তাহাকে প্রতিহত করিবার জন্য নিজেদের প্রতিহিংসা-বৃত্তিকেও প্রবলতর করিবার চেষ্টা করিতে হয়। কিন্তু প্রতিহিংসায় অস্তের চেয়ে বড় হওয়াটা আমরা ভারতবর্ষের আদর্শ মনে করি না। অহিংস সাহসে, আধ্যাত্মিক শৌর্ষ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়াকেই আমরা ভারতবর্ষের আদর্শ মনে করি । বোম্বাইয়ের এসপ্লানেডের মাঠ হইতে অপ্রতিরোধী সত্যাগ্রহীদিগকে তাড়াইবার নিমিত্ত পুলিসের লাঠির “মৃনতম বল” প্রয়োগের বর্ণনা শিকাগো ডেলী নিউসে পড়িয়া আমেরিকার ক্রিশ্চিয়ান সেঞ্চুরী নামক বিখ্যাত কাগজ লিখিয়াছেন, ‘পাশ্চাত্য সভ্যতা প্রাচ্য আধ্যাত্মিক শৌর্য্যের গায়ে ঠেকিয় খণ্ড খণ্ড হইয়া গিয়াছে।’ আধ্যাত্মিক শৌর্য্যে আমরা সকল জাতির অগ্রণী হইতে চাই । ভারতবর্ষের বর্তমান অবস্থায় যুদ্ধের দ্বারা স্বাধীন হইতে হইলে তাহার বিরুদ্ধে বলিবার মত আর একটা কথা আছে। ভারতবর্ষের যে-সব প্রদেশ এবং প্রত্যেক প্রদেশের যে-সব শ্রেণীর লোক " জ্ঞানে ধৰ্ম্মে কৃষ্টিতে ( কালচারে ) সভ্যতায় অগ্রসর, তাহারা সৈন্যদল হইতে দীর্ঘকাল বাদ পড়ায় যুদ্ধের জ্ঞান তাহদের নাই। অতএব এখন যুদ্ধের দ্বার স্বাধীন হওয়া সম্ভব হইলে এমন সব লোকের প্রাধান্ত স্বীকার করিতে হইবে, যাহারা মানব-প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অনেক গুণে অগ্রণী হইবার যোগ্য নহে। তাহদের প্রাধান্তে দেশ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক হিসাবে পিছাইয় পড়িবে ও প্রকৃত স্বাধীনতা হারাইবে । কিন্তু অহিংস উপায়ে স্বাধীন হইবার চেষ্টার নেতা গান্ধীজীর মত শ্রেষ্ঠ পুরুষ, এবং তাহার প্রদর্শিত : পথের পথিক অন্য অনেকে। তাহাতে দেশের নৈতিক আধ্যাত্মিক কোন ক্ষতি নাই। অথচ যুদ্ধের যে প্রধান প্রশংসা সাহসিকতা এবং যে-কোন মুহূৰ্ত্তে প্রাণ দিবার জন্য প্রস্তুত থাক, তাহ সত্যা গ্রহে আছে । যুদ্ধে হিংস . ছাড়া প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা, চুরি, লুট, নারীর উপর অত্যাচার আছে ; সত্যাগ্রহে তাহ নাই । অতর্কিতে কাহাকেও মারিয়া ফেলিবার চেষ্টাকে যুদ্ধের সহিত, এমন কি খণ্ডযুদ্ধেরও সহিত, তুলনা করা আর এক কারণে চলে না। বড় রকমের যুদ্ধ এবং খণ্ডযুদ্ধ প্রায়ই আগে ঘোষিত হয়, এবং কথায় বা কাজে ঘোষিত হইবার পর উভয় পক্ষের নেতা কে, কেন যুদ্ধ হইতেছে, ইত্যাদি বিষয় জানিতে বাকী থাকে না । কিন্তু অতর্কিতে কাহাকেও মারিবার আগে, বা পরেও, যুদ্ধঘোষণা হয় না ; কাহার নেতৃত্বে কি কারণে এই প্রকার বধ-চেষ্টা হইতেছে, তাহাও জানা পড়ে না ।