পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సెలిపి প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৭ [ ৩০শ ভাগ, ১ম খণ্ড স্বতরাং বড় যুদ্ধে ও খণ্ডযুদ্ধে সাহসের পরিচয় যেরূপ পাওয়া যায় অতর্কিত বধ-চেষ্টায় সেরূপ পাওয়া যায় না। ঢাকা উপদ্রবের সরকারী তদন্ত গত মে ও জুন মাসে অনেকদিন ধরিয়া ঢাকায় অরাজকতা অপেক্ষা অধম যে অবস্থা ঘটিয়াছিল, তদ্বিষয়ে সরকারী তদন্ত করিবার জন্য গবন্মেণ্ট দুজন সিবিলিয়ানকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। দুজন সরকারী কর্মচারীর দ্বারা তদন্তের ব্যবস্থায় সৰ্ব্বসাধারণ সস্তুষ্ট হয় নাই— ঢাকার হিন্দুরা ত হয়ই নাই, তাহারাই সকলের চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে । এইরূপ তদন্তের ব্যবস্থা হওয়ায় অনেকে প্রকাশ্যভাবে বলিয়াছেন, ইহা চুণকামের বন্দোবস্ত । তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পড়িয়া মনে হয়, যাহারা রিপোর্টের দ্বারা ঢাকার অপকৰ্ম্মসকল চুণকাম করা হইবে অনুমান করিয়াছিলেন, তাহদের অনুমান সত্য, প্রমাণিত হইয়াছে। রিপোর্টটা বস্তুতঃ তাহ অপেক্ষাও অনিষ্টকর । যে-সব ব্যাপার হিন্দু ও মুসলমানের ঝগড় বলিয়া প্রকাশ পায়, তাহার সম্বন্ধে আমাদের কিছু লিখিতে ইচ্ছা হয় না । তাহার একট। কারণ, অনেক ঝগড়া স্বাভাবিক নয়, দুষ্টলোক কৃত্রিম উপায়ে ঝগড়া বাধাইয়া দেয়। কিরূপ উপায়ে বাধাইয় দেয়, তাহা খবরের কাগজে প্রকাশিত হয় না, বৰ্ত্তমান অবস্থায় হইতেও পারে না । তদন্ত কমিটি রিপোটে নিজেই স্বীকার করিয়াছেন, যে, সব সাক্ষ্য র্তাহারা শুনেন নাই বা পান নাই । বস্তুত: অনেক লোক, কমিটির দ্বারা নিরপেক্ষ তদন্ত হইবে না বলিয়া, সাক্ষ্য দেয় নাই। সাক্ষ্য লইবার প্রণালীও পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। অথচ এইরূপ অসম্পূর্ণ ও অঙ্গহীন সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করিয়া কমিটি পুলিস ও শাসকদিগকে নির্দোষ বলিয়াছেন, শুধু নির্দোষ বলিয়া ক্ষাস্ত হন নাই, তাহদের গুণগান ও কৃতিত্ব ঘোষণা করিয়াছেন, মুসলমানদের দোষ ওকালতী দ্বার যতটা সম্ভব ক্ষালন করিবার বা কমাইবার চেষ্টা করিয়াছেন, এবং সমস্ত দোষ হিন্দুদের উপর—বিশেষতঃ যাহারা কংগ্রেসওয়ালা ও সত্যাগ্রহের সমর্থক তাহাদের উপর—আরোপ করিয়াছেন। যতগুলি হিন্দু বাড়ী আক্রমণের ও তাহদের বন্দুক কাড়িয়া লইবার অভিযোগ কমিটির গোচর হইয়াছিল, , সবগুলিই কমিটি উড়াইয়া দিয়াছেন। বস্তুতঃ কমিটির মতে হিন্দুর সৰ্ব্বদোষাকর—তাহারা যে মোটের উপর মুসলমানদের চেয়ে ধনী ও তাৰাদিগকে টাকা ধার দিতে সমর্থ, এটাও তাহাদের একটা দোষ । আমরা যাহা লিখিতেছি, অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের প্রতিলিপি পড়িয়া তাহ লেখা । ঐ কাগজে রিপোর্টটি আদ্যোপাস্ত বাহির হইয়াছে কি না, জানি তু মূল রিপোর্ট গবশ্লেষ্ট আমাদিগকে, দেন নাই।" উহার সঙ্গে সমুদয় সাক্ষ্য প্রকাশিত হইয়াছে কি না, জানি না। কমিটি কি সাক্ষ্য পাইয়াছিলেন, তাহা না জানিলে রিপোর্ট সাক্ষ্যের অনুযায়ী হইয়াছে কিনা বলা যায় না। আমরা দু এক জনের লিখিত সাক্ষ্যের নকল পাইয়াছিলাম। র্তাহার। গবন্মেণ্টের কৰ্ম্মচারী। শ্ৰীযুক্ত ক্ষিতীশচন্দ্র নিয়োগী ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় কাহারও কাহারও লিখিত জবানবন্দী হইতে অনেক বাক্য উদ্ধৃত করিয়াছিলেন । এই সকল সাক্ষ্যের সহিত রিপোর্টের মিল নাই। রিপোর্টটা যে নিতান্ত অশ্রদ্ধেয়, তাহা দেখান কঠিন নয়। কিন্তু তাহা দেখাইবার প্রয়োজন নাই । আমরা খুব স্বযুক্তিপূর্ণ কিছু লিখিলেও গবন্মেন্টের সিদ্ধান্ত ও কাজে একচুলও তফাৎ হইবে না। বাকী থাকে সৰ্ব্বসাধারণ । হিন্দুদিগকে বুঝাইবার আবশ্যক নাই, যে, রিপোর্টটা পক্ষপাতদুষ্ট ওকালতী। মুসলমানদের মধ্যেও কতক লোকের ধারণা সেইরূপ হইতে পারে। বাকী মুসলমানেরা বুঝিবে না, যে, তাহাদের কোন দোষ ছিল । এ অবস্থায় রিপোর্টটার সব দে দেখাইবার চেষ্টা করা অনাবশু্যক ও বিড়ম্বনামাত্র । তাহা করিতে গেলে রিপোর্টটার চেয়েও লম্বা কিছু একটা লিখিতে হইত। অনর্থক এত সময় ও এতগুলা পৃষ্ঠা নষ্ট করিতে চাই না। সরকারী কৰ্ম্মচারীদের মধ্যে কমিটি যে দুজনকে দোষ দিয়াছেন, র্তাহারা দুজনেই দেশী লোক। র্তাহারা কিন্তু পুলিশ ও শাসন বিভাগের বড় কৰ্ত্ত নহেন। বড় কৰ্ত্তার। ইংরেজ-স্বতরাং তাহাদের দোষত্রুটি অবহেলা হইতেই পারে না । নিন্দিত দুজন দেশী কৰ্ম্মচারীর মধ্যে একজন পুলিশের ডেপুট স্বপারিন্টেণ্ডেণ্ট । তিনি নন্দী পরিবারকে ঢাকা হলে পৌছাইয়া দেন । এটা যে একটা দোষ, তাহা অবশ্ব রিপোর্টে কমিটি লেখেন নাই। আমরা ঢাকার উপদ্রব সম্বন্ধে যে-সব চিঠি বাংলায় ও ইংরেজীতে ছাপিয়াছিলাম, তাহাতে ছিল, যে, একজন পুলিশ কৰ্ম্মচারীকে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, “আপনি কেন দাঙ্গণকারীদের উপর গুলি চালান নাই ?” তাহাতে তিনি নাকি বলিয়াছিলেন, “আমার উপরওয়াল উপস্থিত ছিলেন এবং গুলি চালান নাই ; স্বতরাং আমি কি প্রকারে গুলি চালাইতে পারি?” ইনি কোন পুলিস কৰ্ম্মচারী ? একজন নাকি বলিয়াছিলেন, “আপনার ত জানেন, কাহার প্ররোচনায় এই সব ব্যাপার ঘাটতেছে।”