পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা | হয়, ততক্ষণ এই ভিতরকার ছাচগুলো শূন্ত পড়িয়া থাকে । ততক্ষণ তাহারা তাছাদের নিজেদের স্বরূপও প্রকাশিত করিতে পারে না, আর বিষয়ের রূপও প্রকাশিত করিতে পারে না । যে বিষয়ের অনুরূপ ছাচটা আমাদের ভিতরে নাই, আমরা .কিছুতেই বাহির হইতে সে বিষয়ের জ্ঞানলাভ করিতে পারি না । “যা নাই ভাণ্ডে তা নাই ব্ৰহ্মাণ্ডে,” এই প্রচলিত কথাতে ভাও বলিতে মনের ভিতরকার এই ছাচগুলোই বোঝায়, বিশাল বিষয়রাজ্যকেই নির্দেশ করে । আর ব্রহ্মাও বলিতে আমাদের বাহিরের এই কিন্তু “যা নাই ভাগুে তা নাই ব্ৰহ্মাণ্ডে,” এ কথা যেমন সত্য, যাঙ্গ না পাই ব্ৰহ্মাণ্ডে তাঙ্গ দেখি না ভাণ্ডে, এ কথাটাও তেমনি সত্য। ভাও সত্যের আধখানা ধারণ করিয়া আছে, ব্ৰহ্মাণ্ডে তার অপরাদ্ধ রঙ্গিয়াছে । ব্ৰহ্মাণ্ডের সঙ্গে ভাণ্ডের, বিষয়েব সঙ্গে বিষয়ীর, জ্ঞেয়ের সঙ্গে জ্ঞাতার, ভোগ্যের সঙ্গে ভোক্তার সম্বন্ধ আকস্মিক নহে, নিত্য, এ সম্বন্ধ অঙ্গাঙ্গী মাতা-পুত্রবৎ। যেখানে পুত্র নাই সেখানে মা তাও নাই ; যেখানে মাতা নাই সেখানে পুত্ৰও নাই । মাতার মাতৃত্বের উপরেই পুত্রের পুত্রত্ব, আর পুত্রের পুত্রত্বের উপরেই মাতার মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত । সেইরূপ ব্ৰহ্মাণ্ডের উপরেই ভাণ্ডের, বাহিবের উপরেই ভিতরের, বিষয়ের উপবেষ্ট বিষয়াব : অন্যদিকে ভাগুের উপবেষ্ট ব্ৰহ্মাণ্ডের, বিষীর উপরেই বিষয়ের, ভিতরের উপরেই বাঙ্গিরের প্রতিষ্ঠা। এককে ছাড়িয়া অপরে থাকিতে পারে না। র্যাঙ্গর ধৰ্ম্মকে একান্তভাবে বাহিরের শাস্ত্র, গুরু, প্রবক্তা বা অবতারের উপরে প্রতিষ্ঠিত করিতে চান, তাহারা কেবল ব্ৰহ্মাওকেই দেখেন। যে ভাও না থাকিলে ব্ৰহ্মাণ্ডের কোনও জ্ঞান, কোনও অর্থ সম্ভব হয় না, সেই ভাণ্ডের প্রতি র্তাহারা যথোপযুক্ত মনোনিবেশ করেন না । তাহার এটি তলাষ্টয়া দেখেন না, যে, সত্যের চূড়ান্ত আপীল-আদালত আমাদের মনের ভিতরে। শাস্ত্র বল, গুরু বল, প্রবক্তা বল, অবতার বল, সকলেই স্বামুভূতিকে আশ্রয় করিয়া, আপন আপন আধ্যাত্মিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিয়া থাকেন। হমিয়ার তো শাস্ত্র অনেক, গুরু অনেক, প্রবক্ত অনেক, প্রত্যেক ধৰ্ম্মই তে এক বা ততোধিক পয়গম্বর এবং স্বধৰ্ম্ম ও পরধৰ্ম্ম > 0 లీ বা অবতারের দাবি দায়ের করিয়া থাকেন। অথচ সকল লোকে সমান ভাবে, এই সকল শাস্ত্রকে, এই সকল গুরুকে, এই সকল প্রবক্তা, পয়গম্বর বা অবতারকে গ্রহণ করিতে পারে না একই শাস্ত্র র্যাহারা মানেন, একষ্ট পয়গম্ববের বা একই প্রবক্তার, বা একই অবতারের আনুগত্য র্যাঙ্গরা মোটামুটি স্বীকার করেন, র্তারা সকলেই বা কেন সেই শাস্ত্রের একই অর্থ করেন না ? একই বেদের উপরে হিন্দুধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু হিন্দুর সম্প্রদায় অসংখ্য ; এমন কেন হয় ? একই বাইবেলের উপরে খৃষ্টীয় ধৰ্ম্ম, একই কোরানের উপরে মুসলমানধৰ্ম্ম, একই বুদ্ধের উপদেশের উপরে বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠিত ; অথচ সকল খৃষ্টীয়ান, সকল মুসলমান, বা সকল বৌদ্ধ, এক মতাবলম্বী, বা এক সম্প্রদায়ভুক্ত নতেন। ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়, একই শাস্ত্রের একষ্ট উপদেশের, বিভিন্নার্থ করিয়া থাকেন কেন ? ইহার অর্থ এই যে, স্বামুভূতিকে ছাড়িয়া শাস্ত্র বল, অবতার বল, প্রবক্তা বল, পয়গম্বর বল, কেতই কাজ করিতে পারেন না । বাহিরের শাস্ত্র, বাহিরের গুরু, বাহিরের প্রবক্তা, বাহিরের যাবতীয় বস্তু কেবল আমাদের মনের ভিতরকার ছাচে পড়িয়াই, সেই ছাচের আকারে, সেই অন্তরঙ্গ অনুভূতির মধ্য দিয়াই আমাদের জ্ঞানে প্রকাশিত ও চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত হইতে পারেন। একান্তভাবে র্যাহারা ধৰ্ম্মকে বাহিরের প্রামাণ্যের উপরে,—অতিপ্রাকৃত-শাস্ত্র গুরু প্রভৃতির উপরে, স্থাপন করিতে চাহেন, র্তাহার এ তত্ত্বট ভাল করিয়া তলাইয়া দেখেন না । আর অদ্যদিকে র্যাহারা বাহিরের শাস্ত্র, বাহিরের গুরু, বাহিরের সিদ্ধ মহাজন, প্রবক্তা, পয়গম্বর, বা অবতারাদিকে একান্তভাবে অগ্রাহ করিয়া, শুদ্ধ ভিতরকার অনুভূতির উপরেই ধৰ্ম্মকে স্থাপন করিতে চান, তাহারা বিপরীত ভ্রাত্তিতে পতিত হন। তাহারা এটি তলাইয়া দেখেন না, যে, ব্ৰহ্মাও না হইলে ভাও শূন্ত পড়িয়া থাকে, কেবল ভাণ্ড হইতে কোনও জ্ঞান, কোনও তত্ত্ব, কোনও অনুভূতিই জন্মে না। জ্ঞানমাত্রেই বস্তুতন্ত্র, বিষয়ের অধীন। যতক্ষণ না আমরা বিষয়ের সন্মুখীন হই, ততক্ষণ আমাদের বিষয়ঙ্কানও জন্মে না, আত্মজ্ঞানও জন্মিতে পারে না । বিষয়ের ভিতর দিয়াষ্ট, আমরা নিজেদের বিষয়ীরূপে, কেন ?