পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○8ぐ。 খানা কাটিয়া সাজঘাতিক আক্রমণের উদ্যোগ করিতেছে তখন মনে হয় না যে আমারও ঐ দশ উপস্থিত। জীবনের ভোজে মুক্তা, শাকের ঘণ্ট হইতে আরম্ভ করিয়া পায়স, পিষ্টক পৰ্য্যস্ত নানাবিধ ভোজ্য দ্রব্য উদর পুরিয়া থাইয়াও ভোজন-প্রাঙ্গনে গড়িমসি করি। একি বিষম কুহক ! সুবিখ্যাত সম্রাট পঞ্চম চার্লসের একজন উচ্চপদস্থ প্রিয় সেনা-নায়ক কৰ্ম্ম হইতে অবসর প্রার্থনা করাতে সম্রাট সাতিশয় বিস্থিত হইয় তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি আমার বিশেষ প্রিয়পাত্র হইয়াও কেন আমাকে পরিত্যাগ করিতে চাও ?” তাহাতে ঐ বীরপুরুষ উত্তর দেন, “মহারাজ ! আপনি আমাকে যথেষ্ট অনুগ্রহ করেন, কিন্তু আমি যুদ্ধকরণ ও মরণ এই দু’য়ের মধ্যে কিয়ৎকালের ব্যবধান থাকা আবশুক মনে করি ।” প্রসিদ্ধ দার্শনিক হাৰ্বাট স্পেনসার তাহার আত্মচরিতের এক স্থানে লিখিয়াছেন, যে, জীবন কৰ্ম্মের জন্ত নহে, কৰ্ম্ম জীবনের জন্ত । সময়ে এই অমূল্য সত্যটি ভুলিয়! যাই । একজন মানবচরিত্রলেত্তা ঠিক বলিয়াছেন, যে, মানুষ কিরূপে ভবিষ্যতে জীবন যাপন করিবে চিরদিন তাঙ্গারই বন্দোবস্ত করে. কিন্তু বর্তমান কোনও কালে জীবনের দিকে লক্ষ্য করে না । চিরকালই যদি কাজ করিবে তবে জীবন ভোগ করিবে কবে ? অনেক কৰ্ম্মগত- প্রাণ লোকে বলিয়া থাকেন তাঙ্গদের মরিবারও অবকাশ নাক্ট । কৰ্ম্মে ব্যাপৃত থাকিয়া আমরা অনেক কিন্তু মরণ ত কাহার ও মুখাপেক্ষা করে না । মৃত্যু যখন অবশুম্ভাবী, তখন দিন থাকিতে আত্ম-চিন্তা ও আত্মোৎকর্ষ বিধানের চেষ্টা করিতে হষ্টবে। যবনিক পতনের পূর্বে জীবন-নাট্যের শেষাঙ্কে যাছ করণীয় তাহ সমাপ্ত না করিলে নাটক অঙ্গহীন হইবে। অনেক চলা ফের। করিয়াছ, এখন কিছুদিন স্থির হইয়া বসিয়া “স্থবির” নামের সার্থকতা কর। পালভরে পূরাবোঝাষ্ট জাহাজ এতদিন চালাইয়াছ ; এখন ঝড় আসিবার পূৰ্ব্বে পাল খাটো করিতে হুইবে, কতক বোঝাই জলে ফেলিয়া দিয়া ভার কমাইতে হইবে, নতুবা জাহাজ ত্বরায় ডুবিবে। এখন বডি ষ্টিকে অস্তদৃষ্টিতে পরিণত কর। এখন আর দূরদেশে ভ্রমণ চলিবে না ; দেখিতেছ না অস্ত:করণের কোমল বৃত্তিগুলিও দূরে যাইতে শ্রাস্তিবোধ করে প্রবাসী—পৌষ, ১৩১৭ ১০ম ভাগ, ২য় খণ্ড এবং ক্রমেই গ জনের অভিমুখে অধিকতর আকৃষ্ট হইতেছে । দয়া দাক্ষিণ্য ক্রমেই বাড়িতেছে ও হৃদয়কে স্বপক্ক রসালের ছায় মধুর ও কোমল করিয়া তুলিতেছে। ভগ্ন কুটীরের ছিদ্র বহুল চালের ভিতর দিয়া যেমন চাদের আলো প্রবেশ করে, সেইরূপ বাৰ্দ্ধক্য-বিপাটিত মনের ফাটাল দিয়া নুতন নূতন সত্য উকিঝু কি মারিতেছে। আর কাল-বিলম্ব করিলে চলিবে না। এখন মনে যেকোনও সৎসঙ্কল্পের উদয় হয় তাঙ্গ অচিরাং কার্য্যে পরিণত করিতে না পারিলে কাল নিঃশব্দপদসঞ্চারে তাহার ব্যাঘাত ঘটাইবে বর্ষে বর্ষে কাল আমাদের কি না চুরি করে ? অবশেষে আমরা নিজেই অপহৃত হই । দীর্ঘজীবন লাভ করিতে সকলেই চায়, অথচ বুদ্ধ হইতে কেহই রাজি নহে ; কারণ, “বুদ্ধত্বং জরসা বিনা” কেবল কবি-কল্পিত ওষধিপ্রস্তেষ্ট সম্ভব । জগদীশপুরের বিদ্রোঙ্গী রাজপুত জমিদার কুমার সিংহ সত্তর বৎসর বয়সে ও বীরের স্তায় যুদ্ধ করিয়াছিলেন এবং বীরের দ্যায় রণক্ষেত্রে ধরাশায়ী হইয়াছিলেন । কিন্তু কে বলিবে তাঙ্গর যৌবনের বলবীৰ্য্য বৃদ্ধবয়সে অক্ষুণ্ণ ছিল ? এই মরজগতে জর বাদ্ধক্যের নিত্যসহচরী ; তবে শারীরিক গঠন ও স্বাস্থ্যভেদে জরা-জনিত ক্ষয়ের তারতম্য ঘটে মাত্র । এক হিসাবে বৃদ্ধ হওয়া অপেক্ষা মরা সহজ । মৃত্যু-যন্ত্রণা যতই ভয়ঙ্কর হউক না কেন, মৃত্যু একবার বই দুইবাব হয় না । কিন্তু জরাগ্রস্ত বৃদ্ধের পলে পলে ও তিলে তিলে মরণ । মৃত্যু-ঋণের কিস্তিবন্দী নাই। মৃত্যু এক কোপেক্ট কৰ্ম্মশেষ করে । কিন্তু জরার অসংখ্য কিস্তি । জরার অগণিত ছোট ছোট কোপে প্রাণাস্তপরিচ্ছেদ। অত্যাচারী ভূস্বামীর ন্তায় জরার দাবীর ইয়ত্ত নাই ; কর-বুদ্ধি হাজ শুক মানে না । মগ্নপোত-নাবিক যেমন সমুদ্রগর্ভোখিত গণ্ডশৈলে আশ্রয়লাভ করিয়া ভীতিবিহবলচিত্তে দেখিতে থাকে যে উত্তাল তরঙ্গমালা ক্রমে শৈলের পাদদেশ হইতে শিখরাভিমুখী হইতেছে এবং সে যতই কেন স্থান পরিবর্তন করুক না তাহাকে অচিরাৎ জলমগ্ন হইতে হইবে, জরাগ্রস্ত বৃদ্ধের ঠিক সেই দশা । তাহাকে প্রতিদিন অভিনব ত্যাগস্বীকারের জন্ত প্রস্তুত হইতে হইবে, প্রতিদিন নিজ শক্তির আয়ব্যয়ের সামঞ্জস্ত নুতন করিয়া ঠিক করিতে হইবে। পূৰ্ব্বে প্রত্যহ এক