পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্য। ] তবে এখন বিদায় হই । আপনি যে অনুগ্রহ করিয়া এটি গ্রহণ করলেন, তাহাতে আমরা অতিশয় আহলাদিত झहेळांम ।” শাচ প্রস্থান করিলে, ডাক্তার কোশেল পুনরায় অনিমেষ নয়নে বহুক্ষণ দীপাধারটির প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, আবার করাঙ্গুলি সঞ্চালনে তাহার কেশরাশি আন্দোলিত হইল, নথম্পর্শে শ্রবণেন্দ্রিয়ের পৃষ্ঠদেশ আরক্তিম চষ্টয়া উঠিল, কয়েক মিনিট তিনি চিন্তায় মগ্ন হইলেন, মনে মনে ভাবিলেন, “শিল্পের হিসালে দেখিতে গেলে, এ দীপাধারটির সৌন্দর্য্যের তুলনা নাই ; কেহই তাঙ্গ অস্বীকার করিতে পারে না । এইরূপ অপরূপ জিনিষটিকে ফেলিয়া দেওয়াও সঙ্গত নহে। অথচ আমার টেবিলের এক পাশ্বে স্থান দেওয়াও অসম্ভব । আচ্ছা, ভাল, আমার এমন বন্ধু কি কেক্ত নাই, যাহাকে উপহার দিয়া এই জিনিষটি রাখার দায় হইতে মুক্ত হওয়া যায় ?” অকস্মাৎ পরম বন্ধু ব্যারিষ্টার কফ সাহেবের কথা ডাক্তার কোশেলের স্মরণ হইল। কফ তাহার অনেক মামলা মোকদ্দমা করিয়া দিয়াছেন, কখনও কোন ফি নেন নাই ; আপন কার্য্যের দ্যায়, তাহার কার্য্যে অনবরত থাটিয়াছেন। ডাক্তার ভাবিলেন, “ভাল, বন্ধু আমার নিকট ফি লইতে আপত্তি করেন, আমি কোনো উপহার দিলে তো আর গ্রহণ না করিয়া পরিবেন না। ভাগ্যক্রমে বন্ধু এখনো অবিবাহিত আছেন ; বিশেষতঃ তিনি ততটা গম্ভীরপ্রকৃতির নহেন । তাছার নিকট ইহার সমাদর হইবে।” ডাক্তার অমনি সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত করিতে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। দীপাধারটি সহ একেবারে কফ সাহেবের ভবনে উপস্থিত। সৌভাগ্যক্রমে কফ সাহেব গৃহেই ছিলেন। প্রথম-দর্শনোচিত সম্ভাষণের পর ডাক্তার সাহেব ব্যারিষ্টার বন্ধুকে হৃদয়ের গভীর কৃতজ্ঞতা জানাইলেন, এবং তিনি যে এই বিচিত্র কারুকার্য্য-ভূষিত দীপাধারটি বন্ধুকে উপহার দিতে আনিয়াছেন, তাহ প্রকাশ করিলেন। দীপাধারের অলৌকিক সৌন্দৰ্য্য দর্শনে কফ বিস্ময়ে অভিভূত হইলেন, আনন্দের উচ্ছ, সে প্রথমটা খুবই প্রশংসা করিয়া ফেলিলেন। শিল্পিগণের কি বাহাদুরি, ংকলন ও সমালোচন—অপূৰ্ব্ব দীপাধার 8 ጫ তাহারা এমন সুন্দর ছবি কল্পনা করিয়াছে, জীবন্ত মূৰ্ত্তিতে তাঙ্গ গঠিত করিয়া তুলিয়াছে। এই অলৌকিক জিনিষটি ডাক্তার সাহেব কোথা হইতে আনাইয়াছেন, ভাবিয়া তিনি বড়ই আশ্চর্য্যাম্বিত হক্টলেন । • - প্রথম বিস্ময়ের মোহ কাটিয়া গেলে ব্যারিষ্টার সাহেবের যেন চৈতন্ত্যোদয় হইল। দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া তিনি ডাক্তার কোশেলকে সম্বোধন করিয়া কছিলেন, “বন্ধু, তোমার উপহার দেখিয়া বড়ই সন্তুষ্ট হইয়াছিলাম, কিন্তু এ দীপাধার রাখার সাধ্য আমার নাই, তোমার জিনিষটি তোমাকেই ফিরাইয়া লইতে হইল ; বড়ষ্ট ঃখের বিষয়, আমি ইহা গ্রহণ করিতে পারিব না ; তুমি এখনই এই দীপাধার লইয়া যাও ।” ডাক্তার বলিলেন, “কেন কি হইয়াছে ?” ব্যারিষ্টার উত্তর করিলেন, “না বন্ধু, এ গৃহে আমার মক্কেলগণ সদাসৰ্ব্বদা যাতায়াত করিয়া থাকেন, তাহাদের মধ্যে অনেক মহিলাও আসেন। গৃহে দাসদাসীরও অভাব নাই । এ অবস্তায় আমি কিছুতেই এ দীপাধার রাখিতে পারিল না ।” ডাক্তার কোশেল যুগপৎ বাহুযুগল আন্দোলন করত বন্ধুর আপত্তি খণ্ডন করিয়া বলিলেন, “ন, ন, বন্ধু তুমি আমাকে কোনোমতেই প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে এ জিনিষ তোমাকে গ্রহণ করিতেই হুইবে । শিল্পকলার চরমোৎকর্ষের আদর্শস্থল এমন সুন্দর জিনিষটি প্রত্যাখ্যান করা তোমার পক্ষে বড়ই অশোভন হুইবে । তুমি আমার কত কার্য্যে অনবরত পরিশ্রম করিতেছ, তোমাকে এই সুন্দর জিনিষটি উপহার দিতে আনিয়াছি, প্রত্যাখ্যান করিলে আমি অস্তরে দারুণ আঘাত পাইব ।” “আহা ! যদি এই পরী-মুৰ্ত্তি দুইটির মুক্ত সৌন্দৰ্য্য একটু কিছু আবরণে—”কফ সাহেবের কণ্ঠ হইতে এই কথা উচ্চারিত হইতে না হইতেই ডাক্তার আপন বিশাল বাহুযুগল পুনরায় প্রসারিত করিয়া ব্যারিষ্টার বন্ধুর হাত ধরিয়া তাহাঁর বাক্যসমাপ্তির পথে বাধা জন্মাইলেন এবং ত্বরিতপদে গৃহ হইতে নিস্ক্রান্ত হইলেন । এইরূপে দীপাধারের দায় হইতে অব্যাহতি পাইয়া ডাক্তাৱ কোশেল পুলকিত মনে গৃহে প্রত্যাগত হইলেন। না ।