পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা | আমায় বিয়ে কর –তবে দেখ বড় লোক হই কি না । তোমার ত দয়া হচ্ছে না ।” হরিদাসী বfলল—“দয়া হচ্ছেন! আবার কি ? –কেন, আমি সেদিন কি বলে গেলাম ? আমি ত নিজে মুখে বলে গেলাম আমি রাজি আছি। তুমি বল্পে এইবার তবে একদিন দুজনে বসে সমস্ত পাকাপাকি স্থির করা যাবে। তার পর কথা নেই বাত্র নেই চম্পট দেবার উ্যুগ করেছ ?” গদাই বলিল—“স্ত্রীচরিত্র এই রকমই বটে। বলি হ্যাগে হরিদাসী, তার পর থেকে তুমি কি একদিনও এসেছিলে ? –এমুখো হয়েছিলে যে দুজনে বসে পাকাপাকি স্থির করব ?-—আমি কোথা রোজ সন্ধ্যেবেল, বসে বসে ভাবছি, আজ হরিদাসী আসবে, আজ যখন এলন তখন কাল নিশ্চয়ই আসলে--কোথায় বা হরিদাসী, আর কোথায় পা কে । আর এখন কিনা উণ্টে আমার দোষ?” কথাটা শুনিয়া চরিদাসী একটু অপ্রতিভ হইল। মনে মনে বুঝিল, গদাঙ্গ যাহা বলিতেছে তাহ" ত সত্যক্ট বটে। আজ হঠাৎ যখন সে শুনিল, গদাধর নায়েব হইয়া দরিয়াপুর চলিয়া যাইতেছে—তখনই তাহার মনে আগুন লাগিয়া গেল । ভাবিল গদাধর তাহাকে বিবাহ করিব ইত্যাদি যাহা বলিয়াছিল তাহা ছলনা মাত্র-অবোধ স্ত্রীলোক পাইয়া তাহাকে প্রতারণা করিয়াছে। তাই সে রাগে দিশহারা হইয়া সন্ধ্যার পর গদাধরের অন্বেষণে আসিয়াছিল। হরিদাসীকে নীরব দেখিয়া গদাই বলিল—“এ দিকে আর আসা হয় না কেন ? সেই রেধে খাইয়ে গেলে, বলে গেলে সুবিধে পেলেই আসব, তার পর আর দেখা নেই।” হরিদাসী বলিল—“কি করে আসি বল না ? অাস কি সহজ ? আমরা হলাম বড় লোকের বাড়ীর চাকরাণী, পথে পথে কি বেড়াতে পারি ? আজ গিল্পীর কাছে কত বাহান করে তবে এসেছি।” “তবু ভাল। আমি মনে করলাম বুঝি, পাছে আমায় বিয়ে করতে হয়, এই ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছ ” হরিদাসী বলিল—“পালাচ্ছি আমি, ন, তুমি পালাচ্ছ ? দরিয়াপুর চলে যাচ্ছ, বিয়ের একটা ঠিকঠাক, একটা দিনস্থির, কি করে হৰে ?” নবীন সন্ন্যাসী brరీ গদাই বলিল—“হবে বৈ কি । ক্রমে একটা দিনস্থির করতে হবে।” এই কথা শুনিয়া হরিদাসী আবার আগুন কইয়া উঠিল । বলিল—“এমন বেগারঠেলা ভাবে বলছ যে ?” “বেগারঠেলা কিসে বুঝলে হরিদাসী ? স্ত্রীলোকের মন কিনা-—সকল বিষয়েই অবিশ্বাস ।” হরিদাসী ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল—“দেখ, আমায় বিয়ে করতে যদি সত্যিই তোমার মন থাকে, তবে একটা ঠিকঠাক করে ফেল । এখানে আর আমার মন টিকছে না। যদি বিয়ে না করবার হয়, তাও খোলসা করে বল । আমার সেই যে মাসী ছিল, সে মরে গেছে,—আমায় কিছু টাকা দিয়ে গেছে। ভাবচি না হয় কাশী চলে যাই— আমার টাকাকড়ি নিজের যা ছিল আর মাসীর যা পেয়েছি, সব মিলিয়ে গুছিয়ে কাশীতে আমার বেশ চলে যাবে। হরিনাম করবো, গঙ্গাস্তান করবো, মনের মুখে থাকবো । আর দাসীবৃত্তি করতে আমার মন নেই।” এই কথাগুলি শুনিয়া গদাধরের মস্তকে চট্‌ করিয়া একট। ফন্দি আসিল । ভাবিল, সেদিন ত হিসাব করিলাম ইহার নিজের প্রায় আড়াইশত টাকা আছে। আবার মাসীর টাকা পাইয়াছে বলিতেছে । সে কত টাকা, তাই বা কে জানে। জিজ্ঞাসা করিলে বলিবেও ন!— অধিকন্তু আমার উপর সন্দেহ হইতে পারে । হরিদাসীর টাকাগুলি হস্তগত করিবার উপায় তখনি তখনি গদাধর একটা স্থির করিয়া ফেলিল । গদাধর তখন বিনাইয়া বিনাইয়া বলিতে লাগিল— · “হরিদাসী, তুমি কি মনে করেছ, যদি তোমায় আমি আজ বিয়ে করতে পাই তাহলে কাল পর্য্যন্ত ধৈৰ্য্য ধরি ? আসল কথাটা কি জান, এ ত সধবা বিয়ে নয়, এ বিধবা বিয়ে । বিধবা-বিয়েতে হাঙ্গাম কত ! সধবা বিয়ে হত—দুটো মন্তর বলে একটা ফুল ফেলে দিলেই হয়ে যেত। বিধবা বিবাহের মস্তর বলতে পারে এমন বিজ্ঞ পুরুতই এ সব পাড়াগায়ে পাওয়া মুস্কিল, কলকাতা ভিন্ন সে দরের পুরুত পাওয়া যাবে না । কলকাতা না গেলে বিয়ে তবে না । কলকাতায় যাওয়া, সেখানে একটা বাসা ভাড়া করা—ধর, অনেক টাকা ব্যয় । আমার