পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম অবতার তা কি আপনি জানেন না ?" একুবার একটা নিরক্ষর গাড়োয়ান আমাকে বুঝাইয়াছিল "যে শিব সেই কৃষ্ণ, সেই আল্লা, সবই এক-তবে ভিন্ন ভিন্ন লোকে ভিন্ন ভিন্ন প্রণালীতে উপাসনা করে, এই মাত্র প্রভেদ। এ দেশের চাষাও একথা বুঝে কিন্তু অন্যান্য দেশের মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতও তাহা বুঝে না । বাস্তবিক, ধৰ্ম্ম ও চণ্ডীর গান, কথকতা, রামলীলা, যাত্র প্রভৃতির কল্যাণে ভারতে অতুল অধ্যাত্ম মহাসম্পদ জনসাধারণের নিকট সুলভ ছিল কিন্তু ক্রমে গান কথকতা প্রভৃতি বিরল হইয়া আসিতেছে--দেশে প্রাথমিক শিক্ষার যা বন্দোবস্ত হইয়াছে তাহা পৰ্য্যন্তও সন্তোষজনক নহে। আজ কালকার সে শিক্ষা আর্য্য সভ্যতার কোনও ধার ধারে না সনাতন ধৰ্ম্মশাস্ত্রসমূহেরও কোন সংবাদ রাখে না। এমন কি কৃত্তিবাসের রামায়ণ ও কাশীরাম দাসের মহাভারত পর্য্যন্ত পাঠ করেন নাই এরূপ অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ উপাধিভূষিত কৃতবিদ্য মহাশয় বর্তমান হিন্দুসমাজে দুর্লভ নহেন। যাহা হউক এ বিষয়ে প্রত্যেক চিন্তাশীল ব্যক্তির মনোযোগ প্রদান বাঞ্ছনীয়। - পরদিন প্রাতে সরযুতীরে একটা বৃদ্ধ বিধবা বাঙালিনীর সহিত সাক্ষাৎ হইল। তিনি বলিলেন একটা মন্দিরে কিছু টাকা দান করিয়া তিনি সেই আশ্রয়েই শ্রীরামচন্দ্রের সেবায় জীবনের শেষ দিন কয়ট কাটাইয়া দিতেছেন । এখানে বাঙালী তীর্থবাসী অত্যন্ত স্বল্পসংখ্যক । দাশরথি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশবাসীর হৃদয় যেরূপ একেবারে অধিকার করিয়া বসিয়া আছেন—এই শারদীয় উৎসবের সময় যেখানে প্রতি নগরে প্রতি গ্রামে রামলীলার অভিনয় হইতেছে— বাঙ্গালায় তিনি সেরূপ পারেন নাই। বাঙালী রাধাকৃষ্ণের প্রেমে বিভোর—শ্ৰীবৃন্দাবন সহস্ৰ সহস্র বাঙালীতে পূর্ণ। তীরে বেড়াইতেছি এমন সময় একটী ষ্টীমার ভীষণ গর্জন করিতে করিতে, যেন হিন্দুগরিমার চিতাভষ্মকে উপহাস করিয়া, সরযুবক্ষ বিদারণ করিয়া সগৰ্ব্বে চলিয়া গেল।

  • প্রত্যেক সমাজেই কতকগুলি নিৰ্ব্বোধ লোক আছে—হিন্দু সমাজেও আছে। তাহার। নিজ নিজ ধৰ্ম্মমত লইয়। বিবাদ করে ন৷ এমন কথা আমি বলি না।

প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭।

  • * * * এইবার স্থানীয় একটা ব্রাহ্মণকে সহায় করিয়া মন্দির দেখিতে স্বৰ্গদ্বার ত্যাগ করিলাম। সরযুতীর স্বৰ্গদ্বার বলিয়া খ্যাত—পূীর সমুদ্রতারও স্বৰ্গদ্বার নামে পরিচিত।

অযোধ্যার সৰ্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ ও সুন্দর মন্দিরটা টিকনগরের রাজা কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়াছে—এটাকে মন্দির ন বলিয়া ঠাকুরবাড়ী বলাই উচিত-বাস্তবিক ইহার নামও কনকভবন ! এথানকার - শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্ৰহ শ্বেত মৰ্ম্মরপ্রস্তর-নিৰ্ম্মিত, দেখিয়া বিস্মিত হইলাম। অন্তান্ত রামবিগ্রহ কৃষ্ণবর্ণ বা স্যামলবর্ণ। কনক ভবনের ছাদ হইতে মন্দিরচুড়া-সমাকীর্ণ বৃক্ষবহুল অযোধ্যা নগর বড়ই সুন্দর দেথাইতে লাগিল—সরযু অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারে তাহাকে বেষ্টন করিয়া প্রবাহিত হইতেছে--মন্দিরের পাইক যথার্থই বলিয়াছিল—“অযোধ্যাঙ্গ সংযুক ক্রোড়মে হায়।" পথে দলে দলে বানর বেড়াইতেছে-এবাড়ী ওবাড়ী আক্রমণ করিতেছে—কোনও সঙ্কোচ নাই, কোনও বাধা নাই। এ বানরগুলির মুখ হয় ধূম্ৰবৰ্ণ নয় লালবর্ণ-মুখপোড় হনুমান পশ্চিমে কোনও নগরে দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না। আমার এক বন্ধু বলিতেছিলেন “দেখ, গয়৷ হইতে রাওলপিণ্ডি পৰ্য্যন্ত পশ্চিমে সহরগুলা ঠিক একই রকম দেখিতে—সেই অপরিচ্ছন্ন সরু সরু গলি-দুধারে পাথর ও ইটের উচু উচু বাড়ী, তাছাতে জানালা দরজার সম্পর্ক বড়ই কম—আর যদি হিন্দুপ্রধান স্থান হইল ত দলে দলে বানর চরিতেছে। আবার অনেক স্থানে নদীতে স্নান করিতে নামিলে কচ্ছপে তাড়া করে।” আমিও দেখিয়াছি কানপুরের গঙ্গায়, অযোধ্যায় সরযুতে এবং মথুরা বৃন্দাবনে যমুনায় বড় কচ্ছপের উপদ্রব। আর কেহ যদি বানরের জীবনকাহিনী সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ হইবার আকাজ করেন, তাহা হইলে তিনি কিছুকাল অযোধ্যা বা বৃন্দাবনে গিয়া বাস করুন । অযোধ্যার মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষা পবিত্র ও প্রসিদ্ধ স্থান জন্মস্থান। যে পুণ্যস্থানে ভগবান ঐরামচন্দ্র প্রথম । পৃথিবী স্পর্শ করেন—হিন্দুর চক্ষে তাহার তুল্য স্থান আর কোথায় ? কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোনও ধৰ্ম্মান্ধ মুসলমান

  • বিন্ধ্যাচলের কাছে অনেক হনুমান দেখা যায়।--সপাদক ।

[ ১০ম ভাগ । o ২য়ু সংখ্যা । ] নৃপতি তথাকার মন্দির ভগ্ন করিয়া তাহার স্থলে মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিয়াছে।--হিন্দুগণ এক কোণে একটা কুটার নিৰ্ম্মাণ করিয়া কোনরূপে ইষ্টদেবতার পূজা সম্পন্ন i করিয়া থাকে। শুধু এখানে কেন উত্তর ভারতের o যে-কোনও তীর্থস্থানে গিয়াছি, সেইখানেই সেই এক দৃশু—সেই এক কলঙ্ককাহিনী। কাশীর বিশ্বেশ্বরের মন্দির ধ্বংস করিয়া সেই স্থানে তাহারই মালমসলা লইয়া ঔরঙ্গ । * জেবের প্রকাও মসজিদ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে—উহার তুল্য স্বধৃত ও বৃহৎ কোনও মন্দির কাশীর ঘাটের উপর নাই। - বিশ্বেশ্বরের বর্তমান মন্দির সুবর্ণ কলসযুক্ত হইলেও অনুচ্চ ও অট্টালিকা পরিবেষ্টিত হওয়ায় নগরের অতি অল্পস্থান হষ্টতেই , উহা দৃষ্টিগোচর হয়। প্রাগে উল্লেখযোগ্য মন্দির নাই। মথুরার সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ধৰ্ম্মালয় একটা মসজিদ–হিন্দুর ঠাকুরবাড়ীগুলি উহার কাছেও দাড়াষ্টতে পারে না । বৃন্দাবনে গোবিন্দজীর মন্দির নাকি অতি উচ্চ ছিল—তাই বাদসাচের হুকুমে উহার শিরোভাগ চূর্ণীকৃত হইয়াছে। বৃন্দাবনে বা অযোধ্যায় বা কাশীতে যে-সকল সুন্দর মন্দির দেথা যায় সেগুলি প্রায় সমস্তই ইংরাজ-রাজত্বকালে নিৰ্ম্মিত। বাস্তবিক এই মন্দিরধ্বংস-ব্যাপারটা এতদূর গড়াইয়াছে যে, যদি মুখি প্রাচীন হিন্দু দেবমন্দির দেখিতে চাচ্ছেন তাছা হইলে আপনাকে দক্ষিণ ভারতে যাইতে হুইবে—সেখানে মুসলমান প্রাধান্ত সামঙ্গরূপে অল্পকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। পুরীর শ্ৰীমন্দির এবং মাদুর ও শ্রীরঙ্গমের মন্দিরের তুল্য উত্তর ভারতে হিন্দুর কীৰ্ত্তি কিছুই নাই। + * * * অযোধ্যার মধ্যে হনুমানগড় নামক মহাবীর হনুমানের মন্দিরেই দেখিলাম জনতা অদ্যান্য মন্দিরের অপেক্ষা অধিক । তাহার বর্তমান বংশধরগণ নগরের সর্বত্র যেরূপ রাজ্য করিতেছেন তিনিও তদ্রুপ সুখে এই উচ্চ মন্দিরটার মধ্যে ভোগ খাইতেছেন। একটী উচ্চ সোপানশ্রেণী মারোহণ করিয় তাহার মন্দিরে যাইতে হয়—বোধ হয় মন্দিরট একটা মাটর ঢিবির উপর নিৰ্ম্মিত। হনুমানঞ্জীর মুখ রক্তবর্ণ-কৃষ্ণবর্ণ নহে ॥৯ - মন্দিরের পাওীগণ দেবতার স্বৰ্য্যতুল্য মুখ (মুন্দরাকাওে ত্ৰিদকাণ: ৯ শ্লোক) এবং বিক্রমপ্রতিমা (אל ভ্রমণ-কাহিনী ।

  • বাল্মীকির রামায়ণেও হনুমানকে বালহুৰ্য্যসমানন:-নবেদিত

- * రి আশীৰ্ব্বাদে দুই পয়সা উপার্জন করেন—তাই তাহার মন্দিরের দালানে স্থানে স্থানে বাল্মীকির রামায়ণ পড়িয়াশুনাইয়া সেই দেবতাকে সস্তুষ্ট করিতেছেন। বিগত বৰ্ম্মাযুদ্ধে জয়লাভ করিয়া,—এক নেটিভ পদাতিক সৈন্যদল বৰ্ম্মাদেশের কোনও বৌদ্ধ মন্দিরস্থ একটা প্রকাও ঘণ্টা ইংরেজ গভমেণ্টের নিকট হইতে উপহারস্বরূপ প্রাপ্ত হয় । তাহার এক্ষণে সেই ঘণ্টাট হনুমানঞ্জীর মন্দিরে দান করিয়াছে।- উদার মতাবলম্বী হিন্দুর মন্দিরে পরধৰ্ম্মের প্রতি অত্যাচারের চিহ্নস্বরূপ এই ঘণ্টাট বড়ই বিসদৃশ দেখাইতে লাগিল। অযোধ্যার রাজার (তালুকদার) সুরম্য বিলাস-নিকেতন ও স্বধৃত দর্শনেশ্বর মহাদেবের মন্দির অযোধ্যার একটা দ্রষ্টব্যস্থান বটে। রাজাবাহাদুর সম্প্রতি পরলোকেযাহা হউক তিনি একজন সৌৰীন লোক ছিলেন সন্দেছ নাই । o - - * * of সেইদিন অপরাহ্নে একা করিয়া ফৈজাবাদ সহর । দেথিতে গেলাম। দুইধারে বৃক্ষশ্রেণী:যুক্ত পথে যাইতে যাইতে মুসলমান এক্কাওয়ালার সহিত অনেক কথা হইল। লোকটী নিৰ্ব্বোধ নহে —সেদিন তাহাদের একটা পৰ্ব্ব থাকায় পরিস্কার পোষাক করিয়াছিল এবং তাছার অঙ্গ হইতে আতরের মুবাস বাহির হইতেছিল। সে বলিল “মন্দিরের মহন্তগণ বিবাহ করেন না অথচ ঐশ্বৰ্য্যশালী, কাজেই তাহাদের চরিত্রের দিকটা না দেখাই ভাল। পূৰ্ব্বে এদেশে ম্যালেরিয়া ছিল না—কিস্ত কয়েকবৎসর হইতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ হইয়াছে।” আমাদের ইচ্ছা ছিল দিনকতক অযোধ্যায় থাকি—কিন্তু এই ম্যালেরিয়ার ভয়ে সে সংকল্প ত্যাগ করিতে হইল । - ফৈজাবাদ বড় সহর। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার কবর ও তৎসংলগ্ন উত্থান মুদৃপ্ত। কিন্তু তাহার বিধবা পত্নী বউ বেগমের সমাধিমন্দিরটা আরও প্রকাও ও সুন্দর। ওয়ারেন হেষ্টিংস তদানীন্তন নবাব আসফউদ্দৌলার মাত। এই বউবেগমের চিরসঞ্চিত অগাধ ধনরত্ন লুণ্ঠনের" নন-প্রবালতুল্যরক্তমূখ বলা হইয়াছে (ই-কাও,৬৩ সর্গ , শ্লোক) - আমাদের দেশের প্রচলিত হনুমানের মুখপোড়ার কাহিনী মূল রামায়ণে ना३ । -