পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o - এই বিশ্বের বিরহাট, প্রত্যেক মানুষের ভিতরকার সামগ্ৰী। আমরা প্রত্যেকে জগতের একটি অংশে আপনার মধ্যে আপনি আবদ্ধ হইয়া আছি—কিন্তু সমস্তকে উপলব্ধি করিবার জন্ত আমাদের ব্যাকুলতার সীমা নাই। এই যে স্ববিশাল সমগ্রের জন্ত মানুষের বিরহবেদন তাহাই যক্ষের বিলাপের ভিতর দিয়া উচ্ছসিত হইয়া পৃথিবীর নদীগিরি অরণ্যের উপর দিয়া সুদূর কল্পলোকে বহিয়া চলিয়া গেছে। ইহার মধ্যে কেবল একটি বিরহের রস নহে বিরহের তত্ত্ব পদার্থও আছে। যাহা আমাদের সম্মুখে নাই, যাহা দূরে আছে তাহ আমাদের চিত্তকে বাহিরের দিকে এমন করিয়া টানে কেন ? সুদূরতার এই প্রচণ্ড আকর্ষণের ত কোনো সহজ অর্থ দেখি না। যাহা কাছের, যাহা সুগম, তাহাই যদি মামাদের সমস্ত মনকে অধিকার করিয়া থাকিত তবে তাহাতে আশ্চর্য্যের বিষয় কিছুই ছিল না। কিন্তু যাহা আয়ত্তের অতীত তাহারই আহবান আমাদের অন্তরতম চিত্তে এমন গভীর মুরে বাজিয়া উঠে কেন ? কেন বর্ষার মেঘের স্নিগ্ধ তামসে আমাদের কল্পনাকে দূরদূরান্তরের দিকে উৎসুক করিয়া লইয়া যায়, কেন শরতের শেফালিবাসিত আকাশে চম্পকবর্ণ অালোকপাতে আমাদের মন ডানা মেলিয়া অপরিচিতের অভিমুখে উড়িয়া যাইতে চায় ? কালিদাস ত মেঘদূতের আরম্ভেই মানব-হৃদয়ের এই অকারণ উৎকণ্ঠার আভাস দিয়া বলিয়াছেন, প্রণয়িণী যাহার কণ্ঠে আশ্লিষ্ট এমন সুখী ব্যক্তিও মেঘ দেখিলে আনমনা হইয়া যায়। কালিদাস শকুন্তলাতেও বলিয়াছেন, সুন্দর শোভা দেখিয়া মধুর স্বর গুনিয়া যেন জন্মান্তরীন প্রেমের কথা মনে জাগিয়া উঠিতে চায়। যাহা সম্মুখে নাই, যাহা অজ্ঞাত, যাহা মুদূরবর্তী তাহার জন্ত মানুষের এই উদ্বেগ কেন ? - ইহা হইতেই মনে আসে যেন আমরা নিৰ্ব্বাসিত। তাই ঘরে বসিয়াও বাহিরের জন্ত আমাদের প্রাণ র্কাদে । এইজন্য জগতে যত কিছু দূরত্ব সমস্তই আমাদের সেই বাসনার স্বৰ্গলোকের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করিতেছে। যাহা-কিছুকে পাইলা সমস্তই একটি মস্ত “না-পাওয়ার” দিকেই মনকে কাদাইয়া তোলে। সেই না-পাওয়াটিরই প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭ । [ ১৭ম ভাগ । আভাস আমরা জগতের সমস্ত সৌন্দর্য্যে সঙ্গীতে উপলব্ধি করি। এইজন্যই যথার্থ সৌন্দর্য্যের মধ্যে একটি রোদন আছে ; তুহি যে পরিমাণে আমাদিগকে তৃপ্ত করে তাহার চেয়ে অনেক বেশী অতৃপ্ত করিয়া রাখে ; সে কেবলি আরো আরো আরো দূরের দিকেই পথ দেখাইয়া চলে । মানুষ একটি দূর স্বৰ্গ হইতে প্রভূশাপে নিৰ্ব্বাসিত এ কথাটা অনেক দেশে অনেক দিন হইতে চলিয়া আসিতেছে। কারণ, যে জিনিষ কোথাও নাই এবং যাহাকে কখনো কিছু মাত্র পাই নাই তাহার জন্য কান্ন। আসে না। যাহার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হইয়াছি তাহাকেই আমরা নানাদিক হইতে নানাভাবে খুজিয়া মরিতেছি। একটি অমৃতলোকে আমাদের আকাঙ্ক্ষার পরিপূর্ণ সার্থকতা আছে তাহা হইতে আমাদের বিচ্ছেদই নীলাকাশে এবং শু্যামল ধরণীতে বনে অরণ্যে নদীতে নিঝৱে পৰ্ব্বতে সমুদ্রে কাদিয়া কাদিয়া উঠিতেছে। - আমরা বিচ্ছিন্ন, আমরা স্বতন্ত্র, আমরা নিজের দ্বারা নিজে পরিবেষ্টিত—আমাদের অমৃতময় মিলনের স্বত্র ছিড়িয়া গিয়াছে আমরা যোগভ্ৰষ্ট —যেখানে আনন্দের মানতা নাই, যেখানে সৌন্দর্য্যের ক্ষয় নাই, জগতের সমস্ত সৌন্দর্য্যের ভিতর দিয়া গিয়া সমস্তকে আত্মসাৎ করিয়া লইয়া সেইখানে আমাদের যোগস্থাপনা হইলে তবেই সমস্ত পরিপূর্ণ হইয়া উঠিবে— মানবচিত্তের এই চিরন্তন কথা, সকল বিরহের মূলগত এই অনিৰ্ব্বচনীয়তাটিই মেঘদূত কাব্যে প্রকাশিত হইয়াছে। এই জন্যই যক্ষের বিরহ আষাঢ়ের মেঘকে আশ্রয় করিয়া দেশে দেশান্তরে ফিরিয়াছে এবং সকলের শেষে অলকায় গিয়া মূৰ্ত্তিমতী পরিপূর্ণতার বাতায়ন সম্মুখে আসিয়া উত্তীর্ণ হইয়াছে। সেখানে গিয়া সে কি দেখিল ? দেখিল, সেও অপেক্ষা করিয়া আছে ; সেও আপনাতেই আপনি সম্পূর্ণ নয় ; যতই তার ঐশ্বৰ্য্য সম্পদ থাক ঐ মুদূরনিৰ্ব্বাসিত কুশমলিন বক্ষের সহিত মিলনেই তাছার পূর্ণতা । আকাজগর সহিত আকাঙ্গার ধন মিলিত হইলে তবেই উভয়েরই পূর্ণত । দৈন্তের সহিত মিলিবে বলিয়াই ঐশ্বর্যা আপনার পূর্ণতার মধ্যে বসিয়াও প্রতীক্ষা করিয়া আছে। সেই তোমার সৰ্ব্বকামনার পরম পরিতৃপ্তি, সেও ১ম সংখ্যা । ] করিয়া আছে, জালায়নের মুক্ত অবকাশের মধ্য দিয়া তাহার কুবের পুরীর সমস্ত সম্পদ, ওরে দীনহীন, তোমারই জন্য তাকাইয়া আছে এই কথাই প্রাতঃকালের স্বৰ্য্যোদয় এবং সন্ধ্যাকালের স্বৰ্য্যাস্ত পূৰ্ব্ব ও পশ্চিম আকাশে প্রতিদিন রটনা করিয়া যাইতেছে ; এই কথাই নদীসমুদ্রের মধ্যে নিয়ত তরঙ্গিত এবং গিরিপর্কতের মধ্যে নিত্যকাল নিস্তন্ধ ; এই দোঁতাই বর্ষার মেঘ ও বসন্তের সমীরণ এক পুষ্পিত বন হইতে আর এক মুকুলিত বনে বহন করিয়া চলিয়াছে ; কালিদাসের মেঘদূতও এই মৃত্যুবিহীন বাণীকেই মন্দাক্রান্ত ছন্দের আন্দোলনের মধ্যে অশ্রুরসবর্ষণে এমন করিয়া মৰ্ম্মরিত করিয়া তুলিয়াছে। এই মেঘদূত কোনো বিশেষ বিরহের কাব্য নহে ইহা বিশ্ববিরহের কাব্য—সেই জন্যই এই কাব্যে কবির বীণা" ঝঙ্কারের মধ্যে বিশ্বপ্রকৃতি এমন করিয়া মুখরিত হইয়া উঠিয়াছে। মেঘদূতে পূৰ্ব্বমেঘ ও উত্তরমেঘ বলিয়া যে দুইটি ভাগ আছে সেই ভাগের মধ্যে আমি একটি গভীর অর্থ অনুভব করি। জগতের বিচিত্র সৌন্দর্য্যের মধ্য দিয়া যেন আমাদের হৃদয়ের একটি যাত্রাপথ আছে। সেই সৌন্দর্য্যগুলি আমাদিগকে টানে বটে কিন্তু রাখে না—তাহাতে কোন একটি পরমের প্রথম পরিচয় আছে কিন্তু চরমতা নাই। এইখানেই আমাদের বিচিত্রের মধ্যে ভ্রমণ—ইহাই আমাদের পূৰ্ব্বমেঘ। ভ্রমণ শেষ হয়, সেইখানেই আমাদের ठेठत মেঘ, সেইখানেই আমরা উত্তীর্ণ হই—সেইখানেই একের সঙ্গে আমাদের মিলন। খণ্ডের মধ্য দিয়া অখণ্ডের মধ্যে পরিসমাপ্তি। বৈষ্ণবের বাশিতে এই বাণীই বাজিয়াছে এবং তাহার অভিসার বিচিত্রের মধ্য দিয়া একের অভিমুখেই অভিসার। কালিদাসের বিরহ গানের মধ্যেও আমরা চণ্ডীদাসের রাগিণীকে ধ্রুপদের ছন্দে শুনিতে পাইতেছি । - কুমারসম্ভবের মধ্যেও অীর এক ভাবে এমন একটি বিরাট বিরহের কথাই কীৰ্ত্তিত হইয়াছে যে বিরহের তাপে, স্বৰ্গলোক ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছে। জগতের মূলে একটি তাপস ও তপস্বিনী আছেন, তাহারা মিলনের জন্য আয়ুৰ্বেদ ও আধুনিক রসায়ণ । 'cडीमाब खछड़े তাহার গতহীন বীণা লইয়া অপেক্ষ তপস্তা করিতেছেন –ৰিখ:তুই বিরহ তপস্তার তপোবন। দুইকে এক, হওয়া চাই ; পৃথিবীতে যত কিছু হুঃখ, স্বৰ্গলোকে যত কিছু বাধা সমস্তই এই এক হওয়ার অভাবে। উজ্জয়িনীর শৈব কবি তাহার মহাকাব্যে এই যে অনাদি অনন্ত প্রণী:প্রণয়িণীর ৰুিলন-মহোৎসব বর্ণনা করিয়াছেন আমাদের দেশের বৈষ্ণবী কাব্যেও ইহাই নানা কবির বীণায় বীণায় গানে গানে ঘোষিত হইয়াছে। কুমারসম্ভবে যাহা দেবলোকে মিলনে সম্পূর্ণ হইয়া দেখা দিয়াছে তাঙ্গাই মেঘদূতে মৰ্ত্তলোকে কেবল আভাসে কেবল বেদনায় কেবল অব্যক্ত ব্যাকুলতার মধ্যেই অসমাপ্ত হইয়া ক্ৰন্দন করিতেছে। মেঘদূতের মধ্যে এই যে একটি ভাবের পরিচয় পাওয়া যায় ইহাকে আধ্যাত্মিক তত্ত্ব নাম দিতে চাই না। কেন না, ইহার সত্যতা মানুষের হৃদয়ের মধ্যে ; অন্ত কোনো সত্যত ইহার আছে কিনা তাহাকাব্যের প্রতিপাদ্য নহে –সুতরাং সেখানে ইহা তত্বের মূল্যে বিকাইবে না, রসের দরেই ইহার আদর। এই রসটি কোন মূল বিষয়কে অবলম্বন করিয়া আছে তাহা যদি আমি কোনো প্রবন্ধে আলোচনা করিয়া থাকি। তবে তাহাকে কেহ আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নাম দিলে আমি মানিয়া লইতে পারিব না। শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আয়ুৰ্বেদ ও আধুনিক রসায়ন। छूडौञ्च उॉश । - ধাতুর জারণ, মারণ ও শোধন। আয়ুৰ্ব্বেদের প্রাচীনত্ব আজকাল প্রায় সকলেই স্বীকার করিয়া থাকেন। ডাক্তার রয়েল (Royle) তাহার প্রণীত Antiquity of Hindu Medicine atwo ste stok ৰ্ব্বেদের প্রাচীনত্ব সপ্রমাণ করিয়া ইউরোপীয় বিজ্ঞান সমাজের দৃষ্টি আয়ুৰ্ব্বেদের প্রতি আকর্ষণ করেন। ডাক্তার sates (Wise) stats System of Hindu Medicine নামক গ্রন্থে আয়ুৰ্ব্বেদের বিস্তৃত ব্যাখ্যা করিয়া তাহার , প্রাচীনত্ব ও মৌলিকত্ব ঘোষণা করেন। প্রফেসর উইলসন ।