পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলা বাহুলা ধীবরেরা পরমানন্দে লারসেনকে লইয়া হবাট নগরে ফিরিয়া সিল। বোট প্রোর্তাশ্রয়ে পহুছিবার পূৰ্ব্বেই লারসেনের আশ্চৰ্য্য ੇ সংবাদ নগরের সর্বাংশে প্রচারিত হইয়াছিল । নগরবাসী আবালবৃদ্ধবনিত এই আধুনিক রবিন্সন ক্রুশোকে দেখিবার জন্য পোতাশ্রয়ে গমন করিল। সকলের মুখে তাহার নাম ঘোষিত হইতে লাগিল। নগরবাসীরা তাহাকে নানাপ্রকারের সন্মান প্রদর্শন করিল। লারসেন জাহাজ নিমজ্জন ও বিপংসঙ্কলন নিৰ্জনবাসের যে বিস্ময়কর বর্ণনা প্রদান করিয়াছেন নিম্নে তাহা সংক্ষেপে প্রদত্ত হইল— ব্রায়ারহলম লণ্ডন হইতে যাত্রা করিয়া মন্থরগতিতে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত আগমন করে। অতঃপর যানের গতি ক্ষিপ্ৰ হইল। জাহাজখানি ক্রমাগত একশত সাতদিন চলিল-কাপ্তান রিচ গণনা করিয়া বলিলেন, তাসমিনিয়ার উপকূল আর একশত মাইল মাত্র দূর। সহসা বায়ুর গতি প্রবল হওয়ায় সমুদ্রে ভীষণ আন্দোলন আরম্ভ হইল-জাহাজের গতি কমাইবার জন্য পাল আংশিক গুটানো হইল—সায়ংকাল পর্য্যস্ত জাহাজ নিয়মিত বেগে উীরাভিমুখে অগ্রসর হইতেছিল—আতঙ্কের চিহ্নমাত্রও দেখা গেল না। লারসেন কাপ্তানের কক্ষে প্রহরীর কার্যে নিযুক্ত ছিলেন–নিরূপিত কৰ্ত্তব্য শেষ করিয়া রাত্রি আট ঘটিকার সময়ে তিনি সেখান হইতে নীচে চলিয়া গেলেন । জাহাজের গতিবিধি লক্ষ্য করিবার ভার অপর কয়েক ব্যক্তির উপর পড়িল। রাত্রি দশটা হইতে বারোটার মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে জাহাজখানা এমন ভীষণ একটা ধাক্কা থাইল যে সেই ধাক্কার চোটে নিদ্রিত নাবিকেরা হঠাৎ জাগিয়া উঠিয়া হতবুদ্ধির ন্যায় পরস্পরের মুখাবলোকন করিতে লাগিল। নাবিকের আরো কয়েকটা ধাক্কার শব্দ শুনিতে পাইল। কি যে কাণ্ড ঘটিয়াছে কেহই তাহা বুঝিতে পারিল না। এক জন নাবিক উচ্চকণ্ঠে বলিয়া উঠিল— "জাহাজ তীরে আসিয়াছে”। ওদিক গলুইর দিকের উচ্চ পাটাতন হইতে সাত ব্যক্তি কাপড় গুটাইয়া উন্মত্তভাবে ডেকের উপর লাফাইয়া পড়িল। লারসেন উপস্থিত বিপদের & o প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭। [ ১০ম ভাগ । বিন্দুবিসর্গও বুঝিতে না পারিয়া তীরে নামিবার জন্য নিরুদ্বেগ চিত্ত্বে পোষাক পরিলেন না। কক্ষ হইতে ডেকের উপর যাইবা মাত্রই চতুর্দিকের ভীষণ দৃশু তাহার প্রত্যক্ষ হইল। অন্ধকারের অস্পষ্টতার মধ্য দিয়া তিনি দেখিতে পাইলেন যে, উত্তালতরঙ্গমালাসস্কুল সমুদ্রের মাঝখানে একটা জলমগ্ন পাহাড়ের উপরে জাহাজখানি ঠেকিয়াছে। ইতিমধ্যে ভগ্নস্থানগুলি দিয়া ঝলকে ঝলকে জল উঠিয়া জাহাজ খানি অৰ্দ্ধমগ্ন হইয়াছিল—পশ্চাতে চক্ষু ফিরাইতেই লারসেন দেখিতে পাইলেন, পাছ-গলুই-দুইখানি ডিঙ্গি সহ সমুদ্রগর্ভে ডুবিয়াছে। এত অল্প সময় মধ্যে এই ভীষণ কাণ্ড ঘটিয়াগেল যে, অগ্র গলুইর লোকেরা তখনে কিছুই বুঝিতে পারিল না । তাহারা ডেকের উপরে আসিয়া পাল-দও ধরিয়া ভীত-চকিত ভাবে একে অন্যের মুখের দিকে তাকাইতেছিল। অপর দিকে তাহদের সুখ-সুপ্ত সহযাত্রীর যে অতলম্পর্শ সমুদ্রগর্ভে চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হইয়াছে তখনে তাহদের সে বোধের সঞ্চার হয় নাই। অল্প সময় মধ্যেই সকলে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা প্রত্যক্ষ করিল। বাতা-বিক্ষুব্ধ সমুদ্র ঢেউর পরে ঢেউ দ্বারা সেই ভগ্ন জাহাজখানিকে আক্রমণ করিতেছিল। লারসেন ও তাহার সঙ্গী কয়েকটি প্রাণ বাচাইবার কোনো উপায় দেখিতে পাইলেন না। তখনো একখানি ডিঙ্গি জলমগ্ন হইতে বাকি ছিল বটে, কিন্তু তখনকার সেই উচ্ছসিত সমুদ্রে ডিঙ্গি ভাসান একেবারেই অসম্ভব ছিল। অনন্তোপায় হইয়া লারসেন সঙ্গিগণ সহ মাস্থলের উপর আরোহণ করিয়া | ( কেহ দড়ি কেহ বা দণ্ড ধরিয়া ) ঝুলিয়া রহিলেন। তাহাদের নিম্নে:সমুদ্র ভীষণ গৰ্জ্জনে তরঙ্গের আঘাত করিয়া জাহাজ খানিকে প্রকম্পিত করিতেছিল—উৎক্ষিপ্ত ফেনরাজি, মাস্ত্রলের দড়ি ও দণ্ডগুলিকে সিক্ত করিয়া দিতেছিল। উন্মত্ত সমুদ্রের সহিত যুদ্ধ করিয়া সেই ভাঙ্গা জাহাজখানি আর কতক্ষণ টিকিয়া থাকিবে—দেখিতে দেখিতে জাহাজ দুই খণ্ডে বিভক্ত হইয়া গেল। মাস্থল আরোহিদিগের মধ্যে এক ব্যক্তি কাতর কণ্ঠে চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল-- "জাহাজ দুই খণ্ড হইয়া গিয়াছে।” সকলে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় রহিল। - বিপৎকালের সেই দীর্ঘ ঘণ্টাগুলি অতি ধীরে অতি ১ম সংখ্যা। ) সংকলন ও সমালোচন—বিংশ শতাব্দীর রবিন্সন ক্রুশো। SAASAASAASAASAASAASAMMSMMSMMSMMSMSMS शडि হইতেছিল—ঝড়েরও বিরতি নাই। অবশেষে অগ্ৰগলুইর সেই পাল-দওও সমুদ্রগর্ভে ডুবিয়া যাইতে লাগিল। বিপন্ন নাবিকেরা আশ্রয় পাইবার দুরাশায় ইতস্ততঃ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কিছুই দেখিতে পাইল না। অবশেষে দণ্ডথনিও ডুবিয়া গেল—অতলস্পর্শ সমুদ্রের উদ্বেলিত বক্ষে লারসেন ও তাহার সঙ্গীরা পতিত হইলেন। লারসেন প্রথমে সমুদ্র গর্ভে বহু নিম্নে তলাইয়া গিয়াছিলেন—তার পর তিনি ভাসমান শোলাখণ্ডের স্থায় তরঙ্গের সহিত উঠিতে পড়িতে লাগিলেন। যতবার তিনি তরঙ্গের চূড়ায় উঠতে ছিলেন ততবার তাহার সত্বঞ্চ দৃষ্টি সঙ্গীদের সন্ধানের নিমিত্ত চতুর্দিকে ছুটিয়া যাইত—কিন্তু একজনও তাহার দৃষ্টি পথবর্তী হইল না। কিছুকাল পরে তিনি সম্মুখে জলমগ্ন পাহাড়ের কয়েকটি সরু চূড়া দেখিতে পাইলেন—বহু কষ্টে একটি শৃঙ্গ জড়াইয়া ধরিয়া তিনি ক্লাস্তিদূর করিবার চেষ্টা পাইলেন কিন্তু এখনো তাহার সংগ্রামের বিরাম ছিল না—তরঙ্গের পর তরঙ্গ আসিয়া প্রতিমুহূৰ্ত্তে তাহাকে আশ্রয়-চাত করিবার চেষ্টা করিতেছিল—লারসেনের দেহ অবসর হইয়া আসিল। অবশেষে একটা বৃহদাকার ঢেউ বলপূৰ্ব্বক তাহাকে আশ্রয় হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া অনন্ত জলরাশির মধ্যে নিক্ষিপ্ত করিল। তরঙ্গোথিত ফেনরাজি থাকিয়া থাকিয় লারসেনকে অন্ধ করিয়া ফেলিতেছিল--তরঙ্গের দ্বারা তিনি একবার এদিকে আবার ওদিকে বিক্ষিপ্ত হইয়াও তেজের সহিত তীরের দিকেই অগ্রসর হইতেছিলেন। বিপন্ন লারসেন সহসা একখানি ভাসমান তক্ত পাইয়া—সেইখানিকে অবলম্বন করিয়া একটু আরাম লাভ করিলেন। কিছুক্ষণ পরে আরো একখানি তক্ত পাইয়া দুইখানির উপর দুই বাহু স্থাপন করিয়া তিনি পূৰ্ব্বাপেক্ষা অন্নয়াসে চলিতে লাগিলেন। উন্মত্ত সমুদ্র গর্ভে লারসেন হাবুডুবু থাইতেছিলেন—তাহার কঠোর সংগ্রামের আর অবধি নাই—এক একবার মনে হইতেছিল তিনি যেন অনন্তকাল ধরিয়া এমনি ভাবে ঢেউয়ের সহিত লড়াই করিতেছেন। পরিশেষে সংগ্রামের অবসান হইল একটা প্রকাও ঢেউ বল পূৰ্ব্বক লারসেনের শাস্ত-কান্ত দেহটা সমুদ্র তটে আনিয়া দিল। তাহার শ্বাস তখন রুদ্ধ ও দেহ অবসর হইয়া পড়িয়াছিল-কম্পিত চরণে কয়েক পদ α 5 অগ্রসর হুইয়া ভূতলে পড়িয়া গেলেন–রাস্তি হেতু অল্পক মধ্যে সেখানে মিদ্রাভিভূত হইয়া পড়িলেন। লারসেনের যখন ঘুম ভাঙ্গিল তখন প্রভাতের স্বৰ্য্যালোকে চারিদিক উজ্জ্বল হইয়াছে। তিনি তখন সৰ্ব্বাঙ্গে বেদন অনুভব করিতেছিলেন-চলিবীর শক্তি ছিলনা, তথাপি কয়েকপদ চলিয়া তিনি জলান্তে উপনীত হইলেন। ঝড় থামিয়া যাওয়ায় সমুদ্র এখন শাস্ত মূৰ্ত্তি ধারণ করিয়াছে। লারসেন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখিতে পাইলেন। ভগ্নযানের একটা মাস্থলের উপর একজন নাবিককে দেখিতে পাইয় তাহার আর আনন্দের সীমা রহিল না। একটু লক্ষা করিতেই তিনি তাহাকে চিনিলেন ; তাহার ঐ সঙ্গীর নাম মুলার। প্রফুল্ল মনে পরস্পর পরস্পরকে অভিবাদন করিলেন। মুলার প্রশ্ন করিলেন—“আর কেছ তীরে পহুছিয়াছে কি ?” লারসেন উত্তর করিলেন—“ন আমি এযাবৎ আর কাহাকেও তীরে দেখিতে পাই নাই।” তারপর মুলার তাহার বন্ধুকে তীরে যাইবার উপায় জিজ্ঞাসা করিলেন। বন্ধুর উপদেশ অনুসারে মুলার দুইখানি তক্তা অবলম্বন করিয়া সমুদ্রে সাতার দিলেন। সোৎসুক নেত্রে লারসেন মুলারের গতি লক্ষ্য করিতেছিলেন। একবার তিনি দেখিলেন তাহার বন্ধু একটা তরঙ্গে চূড়া হইতে বেগে সমুদ্রগর্ভে তলাইয়া গেলেন। দুর্ভাগ্য লারসেন অনেকক্ষণ কাতর নয়নে চাহিয়া রহিলেন বন্ধুর নাম ধরিয়া উন্মত্তভাবে ডাকিতে লাগিলেন কিন্তু আর তাহাকে দেখিতে পাইলেন না। সহসা তিনি বুঝিতে পারিলেন এই জন মানব শূন্ত ভীষণ প্রদেশে তিনি সঙ্গীহীন, সহায়হীন ও সম্পূর্ণ একাকী । - ক্ষুৎপিপাসা লারসেনকে পীড়া দিতেছিল—অসহায় লারসেন তথন আহার্যা সংগ্ৰহ করিতে চলিলেন। জাহাজের ধ্বংসাবশিষ্ট বহুদ্রব্য তাঁর ভাসিয়া আসিয়াছিল। তিনি কতকগুলি “নিভসফুড" ও হেরিং মাছের কোটা এবং অনেক বোতল “রাম মঙ্গ” কুড়াইয়া পাইলেন। আহার করিয়া কিঞ্চিৎ সবল হইয়া আবার সমুদ্র কুলে যাইয়া কতকগুলি পোষাক সংগ্ৰহ করিলেন। তিনি যে পরিচ্ছদগুলি পাইয়াছিলেন একজন নূতন বিলাসী সমুদ্র যাত্রী সে গুলির মালীক । যে কম-চওড়া জুতার চিহ্ন দেখিয়া অনুসন্ধান