পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ను ছিলেন, কিন্ঠ অহঙ্কার বা আত্মগৰ্ব্ব ছিলেন -ു.-- আত্মাভিমানী না। যে কোন লোক তাম্বার সঙ্গে আলাপ করিয়াছেন তিনিই তার শিষ্টাচার ও শীলতায় মুগ্ধ হইতেন। বাহিক ভণ্ডামি, কপটতা, ও বিলাসিতাকে তিনি অত্যন্ত ঘৃণা করিতেন। চরিত্রবান মানুষ কাৰ্য্যশক্তি বলে কতদূর নিজের উন্নতি ও জ্ঞানলাভ করিতে পারেন, ও কত কাজ করিতে সক্ষম হন—আমরা দেবেন্দ্রনাথের জীবনীতে তাহারই অতি স্পষ্ট উদাহরণ পাই। লোকশিক্ষা | মাননীয় শ্ৰীযুক্ত গোখলে মহাশয় ভারতবর্ষে লোকশিক্ষা বিস্তারের জন্য ভারত গবর্মেন্টের নিকট যে প্রস্তাব উপস্থিত করিয়াছিলেন, তাহা এখন কিছুদিনের জন্য তাকে তোলা রহিল। ইহাতে দুঃখিত হইব কি না সেই চিন্তা উপস্থিত श्रृङ्ग्रेग्रोप्छ । বড় দেশের বড় নজির দেখাইয়া অক্লেশে প্রতিপন্ন করা যাইতে পারে, আজিকার দিনে সমাজের নিম্নতম স্তর পৰ্য্যন্ত শিক্ষার বিস্তার না ঘটিলে বিংশ শতাব্দীর জীবনসমরে টিকিয়া থাকিবার উপায়ান্তর নাই। প্রস্তাপকর্তা স্বয়ং রাশি রাশি নজির উপস্থিত করিয়াছিলেন ; পুনরুথাপনের প্রয়োজন নাই। শিক্ষা যখন মানুষের গায়ে বল দেয়, অশিক্ষিত যখন দুৰ্ব্বল, এবং জীবসমাজে যখন দুৰ্ব্বলের স্থান নাই, তখন শিক্ষাবিস্তারের আবশ্যকতা স্বতঃসিদ্ধ সত্য ; ইহাতে কোনরূপ বাকচাতুরীর অবসর নাই। বড় বড় দেশে সকলেই এই স্বতঃসিদ্ধ সত্য মানিয়া লইয়া আপামর সাধারণকে শিক্ষিত করিয়া জীবনযুদ্ধে বলীয়ান করিয়া লইবার চেষ্টা করিয়াছে ওঁ করিতেছে; রাষ্ট্রভাণ্ডারে অর্থাভাব বা অন্য কোন অভাব এই চেষ্টার প্রতিকূলতা করিতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে অবস্থাভেদে ব্যবস্থা স্বতন্ত্র হইয় থাকে। কাজেই গোখলে মহাশয়ের প্রস্তাবের সদগতি দেখিয়া বিস্মিত হইবার সম্যক হেতু নাই। প্রস্তাব পরিত্যক্ত হওয়াতে বিস্ময় নাই বটে, কিন্তু কি জানি যদি নুতন ব্যবস্থাপক সভা প্রস্তাবটা গ্রহণ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭ । ১০ম ভাগ । করিয়াই বসেন এবং ভারত গধর্মেন্টও তদনুসারে দেশের ছেলেগুলাকে দশটা হইতে পাঁচটা পর্যন্ত পাঠশালায় পূরিবার ব্যবস্থা করিয়া ফেলেন, এই আশঙ্কা একটু না ছিল, এমন বলিতে পারি না। বিশেষতঃ দেশের সমুদয় খবরের কাগজ যখন সমস্বরে বলিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, ভারত জুড়িয়া শিশু-কারাগার স্থাপন ভারতউদ্ধারের পক্ষে নিতান্ত আবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে। - আমার বক্তব্য এই যে লোকশিক্ষার আবশ্যকতা স্বতঃসিদ্ধ স্বীকার করিয়া লইলেও পাঠাগারের নামে কারাগার স্থাপনকে অত্যাবশুক বলিয়া গ্রহণ করিতে কিঞ্চিৎ ংকোচ হইতে পারে। এবং দেশে বর্তমানকালে যে নিয়শিক্ষার প্রণালী বর্তমান আছে, তাহাতে পাঠশালার সহিত কারাগারের ভেদকল্পনায় কিছু অতিরিক্ত বুদ্ধি থরচ করিতে হয় । শিক্ষার উদ্দেশ্বের মহত্ব সম্বন্ধে প্রকাও একথান । বহি লেখা যাইতে পারে, অথবা বহি লিথিয়া একটা লাইব্রেরি করা যাইতে পারে ; কিন্তু লোকশিক্ষার উদেখা কি, তৎসম্বন্ধে সকলেরই একটা মোটামুটি ধারণা আছে। সে বিষয়ে বাগ্‌ বাহুল্য অনাবশুক। মনুষ্য জন্মলাভ মনুষ্যের পক্ষে দুর্ভাগ্য কি সৌভাগ্য সে । বিষয়ে মতভেদ থাকিলেও, যখন নিতান্তই বাধ্য হইয়া জন্ম । গ্রহণ করিতে হইয়াছে, তখন যতদূর পারা যায় জন্মকে । সার্থক করিয়া যাওয়া কৰ্ত্তব্য, এ বিষয়ে বড় মতভেদ নাই। কিরূপে উহা সার্থক হইবে, এ বিষয়ে মতভেদ আছে বটে। সৎপথে থাকিয়া জীবনের কৰ্ত্তব্যগুলা যথাস্তান ও যথাশক্তি সম্পন্ন করিয়া যাইতে পারিলেই হাজারের মধ্যে ন—শ নিরনকাই জনের পক্ষে যথেষ্ট ! যথেষ্ট, কেননা এই কৰ্ত্তব্য সাধনের পথেও নানা বিঘ্ন, নানা অন্তরায়। তার্কিক এইখানে তর্ক তুলিতে পারেন, জীবনের কৰ্ত্তব্য কি, তাহ স্পষ্টভাবে বলিয়া দাও, কেননা তাহাতেও পণ্ডিতে পণ্ডিতে মতভেদ রহিয়াছে। - তর্কের মধ্যে এই কৰ্ত্তব্য যেরূপই নিৰ্দ্ধারিত হউক না, সেই কৰ্ত্তব্য যথাজান ও যথাশক্তি সাধিত হইলেই জীবন । সফল হইল, ইহা স্থল কথা। ইহাতে কেহ তর্ক তুলিবেন F| | - |

১ম সংখ্যা । ] "যথাঞ্জান ও যথাশক্তি’ এই দুইটা কথাতেই শিক্ষার সমস্ত নিহিত আছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হইতেছে জ্ঞানের বৰ্দ্ধন ও শক্তির বর্দ্ধন । তাছার কর্তব্যসাধনে সফলতাও ততটা। বিধাতা সকলকে সমান পরিমাণে জ্ঞান অথবা শক্তি দিয়া জগতে প্রেরণ করেন নাই। তবে তাহার অনুগ্রহ এই, যে অধিকাংশকে একবারে বঞ্চিত করেন নাই। তিনি কিছু দিয়াছেন, এবং বসিয়া বসিয়া দেখিতেছেন, চেষ্টা দ্বারা আমরা তাছা বাড়াইয়া লই কি না ! বস্তুতঃ আমরা চেষ্টা দ্বারা জ্ঞান ও শক্তি উভয়ের পরিমাণ বাড়াইয়া লইতে পারি, এবং সেই উদ্দেশ্যেই পৃথিবীর যাবতীয় পাঠশালা স্থাপিত হইয়াছে। নানাবিধ জ্ঞানের মধ্যে নিজের শক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান একটু বিশেষ আবখক। আমাদের মধ্যে যে শক্তি নিগুঢ় ভাবুে সঞ্চিত আছে, তাহা আমরা অনেক সময় জানিতে পারি না ; এই জ্ঞানটাকে ফুটাইয়া তোলা শিক্ষার একটা বিশেষ উদ্দেশু । ব্যক্তির হিতের জন্ত, সমাজের হিতের জন্য এইরূপ জ্ঞান বৰ্দ্ধনাথ ও শক্তি বৰ্দ্ধনার্থ শিক্ষার ব্যবস্থা কল্পিত হইয়া থাকে। কিন্তু এই কল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা কোথাও সম্পূর্ণ ফল লাভ করিতে পারে নাই। দুঃখের বিষয় যে কল্পিত শিক্ষা প্রণালী ব্যবস্থাদোষে অনেক সময় উদ্দেশ্যের প্রতিকূল হইয়া দাড়ায় এবং মনুষ্যত্বের উৎকর্ষ সাধনে সাহায্য না করিয়া বরং বিঘ্ন উপস্থিত করে । লেখা, পড়া ও খড়ি, পাতা মানবজাতির শিক্ষাঘটিত ইতিহাসে এই তিনটা অতি অদ্ভূত উদ্ভাবনা। জ্ঞানবৃদ্ধির ও শক্তিবৃদ্ধির এমন উৎকৃষ্ট উপায় আর উদ্ভাবিত হয় নাই। যে লিখিতে পড়িতে ও খড়ি পাতিতে শিথিয়াছে, সে যেন একটা নূতন জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কৰ্ম্মেন্দ্ৰিয় লাভ করিয়াছে। বিধাতা যে কয়ট ইন্দ্রিয় দিয়াছেন, ইহা তাহার উপর অতিরিক্ত লাভ । এই কৃত্রিম ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে মমুষ্যের বল কতটা বাড়িয়া গিয়াছে, তাহার ইয়ত্তা করা যায় না। এই কৃত্রিম ইঞ্জিয়লাভে কাহাকেও বঞ্চিত রাখা সাধাপক্ষে উচিত নহে । প্রত্যেক বালকবালিকা যাহাতে এই নূতন সামর্থ্যলাভের সুযোগ পায়, তজ্জন্য সমাজের (אל লোকশিক্ষা । জ্ঞান ও শক্তি যাহার যতটা, >ዓ সমবেত চেষ্টার প্রয়োগ করা কৰ্ত্তব্য। লোকশিক্ষা নানকল্পে এই ত্রিবিধ বিদ্যাতে – লেখাপড়া ও পড়ি পাতাতে-আবদ্ধ হওয়া উচিত। কিন্তু নুনিকল্পে যাহা আবশ্বক তাহারও স্বব্যবস্থার জন্য এতদিন পর্য্যস্ত কোন দেশে কোন সমাজ বা রাষ্ট্র সমুচিত চেষ্টা করিয়া উঠিতে পারে নাই । অল্প দিন হইল, কয়েকটা দেশে, যেখানে রাষ্ট্রশক্তি অত্যন্ত সুব্যবস্থ ও বলীয়ান হইয়া উঠিয়াছে—সেইরূপ কয়েকটা দেশে, আপামর সাধারণকে নিম্নশিক্ষালাভে বাধ্য করিবার চেষ্টা হইতেছে ; এবং সেই নজির দেখিয়৷ আমাদেরও চোখ ফুটিয়াছে, এবং দেশের রাষ্ট্রশক্তি যাহাদের করায়ত্ত, তাহাদের দ্বারে নিম্নশিক্ষা বিস্তারের ব্যবহার জন্থ দরখাস্ত দাখিল করিতে আমরাও উদ্যত হইয়াছি। বলা উচিত, হালের নিম্নশিক্ষা, কেবল লেখাপড়া ও খড়িপাতাতেই আবদ্ধ নাই। এখন উহাকে আর একটু উচ্চ স্তরে তুলিবার চেষ্টা হইয়া থাকে। পাঠশালার ছাত্র লিখিতে পড়িতে শিথিবামাত্র তাহাকে পুথির সাহায্যে বা শিক্ষকের সাহায্যে খানিকট অতিরিক্ত জ্ঞানদানের চেষ্টা করা হয়। যতটুকু দান করা যায়, জীবনের পথে চলিবার সময় তাহাতে ততটুকুই সাহায্য ঘটবে, এই উদ্দেশু । বাহ্যজগতের সঙ্গে কারবারের জন্য আপনার শরীরটা মুস্থ ও সবল রাখা অত্যন্ত আবখ্যক ; কাজেই জীবনতত্ত্ব ও জগতত্ত্ব সম্বন্ধে, দুই দশটা মোটাকথা জানিলেই লাভ । সামাজিক জীবকে সমাজের সঙ্গে কারবার করিতে হইবে, অতএব নিজের দেশের সম্বন্ধে সমাজের সম্বন্ধে, রাষ্ট্রের সম্বন্ধে যাহা কিছু জানা যায়, তাহাই লাভ ; আর নিজের দেশ সমাজ ও রাষ্ট্রের বাহিরে যে অন্ত দেশ, অন্ত সমাজ ও অল্প রাষ্ট্র বর্তমান আছে, তাহার সম্বন্ধেও যতটা স্পষ্ট ধারণ থাকে তাহাও লাভ । সেই সঙ্গে সমাজের সহিত মামুষের যে দেন পাওনা আছে, অর্থাৎ কৰ্ম্মশালায় প্রবেশ করিলে সমাজ প্রত্যেকের উপর যতটুকু দাবি রাখিবে এবং সমাজের নিকট প্রত্যেকে যেটুকু প্রত্যাশা করিবে, সেটুকু কিছু পূৰ্ব্ব হইতে জানিয়া রাখিলেও মন্দ হয় না। লাভ আছে বলিয়াই আজকাল নিম্নশিক্ষার মধ্যে ভূগোল ইতিহাস