পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দূরত্ব সন্ধান করিবার জন্ত-জ্যোতিষীরা যে, উপায়, অবলম্বন করিয়াছেন তাহ দ্বারা পৃথিবী হইতে নক্ষত্রের দূরত্ব নির্ণয় করা যায় না, তবে তাহদের পরম্পর আপেক্ষিক দূরত্ব সম্বন্ধে কিছু কিছু জ্ঞানলাভ করা যায় মাত্র। ভিন্ন ভিন্ন তারকার জ্যোতির উজ্জ্বলতার তারতম্য অনুসারে তাহীদের পরম্পরের দূরত্বের পরিমাণ কতকটা অনুমান করিতে পারা যায়। লুব্ধকের (Sirius) মত একটি তারার দূরত্ব যদি দশ গুণ বাড়িয়া যায় তবু ইহাকে খালি চোখেই দেখা যাইবে। এক শত গুণ বাড়িয়া গেলে মাঝারি রকম দূরবীণে দেখা যাইবে। এমন কি হাজার গুণ দূরে গেলেও ইহা আমাদের নিকট একেবারে অদৃগু হইবে না, তখন বড় বড় দূরবীণে তাহার দেখা পাওয়া যাইবে । কাজেই আমরা এই সিদ্ধান্তে সহজেই উপনীত হইতে পারি যে বড় বড় দূরবীণগুলিতে যে সকল তারা দেখা যায় তাহীদের অনেকগুলিই আমাদের নিকট হইতে লুদ্ধক অপেক্ষা প্রায় হাজার গুণ দূরে আছে। ডা: গিল ও ডাঃ এলকিন উত্তমাশা অন্তরীপে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা লুব্ধকের দুরত্ব স্থির করিয়াছেন। তাহারা দেখাইয়াছেন যে লুব্ধক হইতে আলোক রশ্মি প্রতি সেকেণ্ডে ১,৮০,০০০ মাইল বেগে আসিয়া পৃথিবী পৌছিতে অন্তত ৯ বৎসর সময় লইয়া থাকে। অর্থাৎ আমরা যখন লুব্ধকের দিকে তাকাই আমরা বর্তমানে তারাটি যেমন আছে তাহা দেখিতে পাই না, ৯ বৎসর পূৰ্ব্বে সে যেমন ছিল তাহাই জানিতে পারি মাত্র। আজ লুদ্ধকের যে আলোক রশ্মি আমাদের চোখে পৌছিতেছে তাহা ৯ বৎসর পূৰ্ব্বে তারাটি হইতে আমাদের দিকে আসিতে আরম্ভ করিয়াছে। পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে যে এরূপ তারা অনেক আছে যেগুলি আমাদের নিকট হইতে লুব্ধক অপেক্ষাও সহস্র গুণ দূরবর্তী হইয়াও বড় বড় দূরবীণের সাহায্যে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় ; কাজেই এরূপ সিদ্ধান্তে কোন ভুলই হইবে না যে আজ স্ববৃহৎ দূরবীণের সাহায্যে সেই অতি দূরবর্তী তারাগুলির যে আলোক দেখিতে পাইব তাহ ৯,০০০ বৎসর পূৰ্ব্বে তারাগুলি পরিত্যাগ করিয়া আমাদের দিকে আসিতে আরম্ভ কলিয়াছে। প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭ । | >०भ ७१ ।। কথাটা কি বিস্ময়কর। আজ রাত্রে আমরা এই প্রকারের যে তারাগুলিকে দেখিতেছি তাহারা আজি যেমনটি আছে তাহ দেখিতেছি না ৯,০০০ বৎসর পূৰ্ব্বে যেমনটি ছিল তাহাই দেখিতেছি। এই তারাগুলির যে আলোক আজ আমাদের চোথে পৌছিতেছে নক্ষত্ৰলোক হইতে সৌরলোকে প্রতি সেকেণ্ডে ১,৮০,০০০ মাইল বেগে আসিতে সেই আলোক ৯,০০০ বৎসর সময় লইয়াছে। তারাটি যদি | ইতিমধ্যেই নিৰ্ব্বাপিত হইয়াও গিয়া থাকে তবু আমরা । তাহাকে তাহার আপন স্থানে দেখিতে পাইব । তাহার নির্বাপিত হওয়ার পর যতদিন ন৷ ৯,০০০ বৎসর উত্তীর্ণ হয়, সেই তারক প্রেরিত শেষ আলোক রশ্মিটি যে পৰ্য্যন্ত না আমাদের নিকট পৌছায় ততদিন তাহার নির্বাপিত হইয়া যাইবার সংবাদ আমাদের নিকট অজ্ঞাত থাকিবে। এ পর্যন্ত যতদিনের মানবেতিহাস সংগৃহীত হইয়াছে তাহার বহু শতাব্দী পূৰ্ব্বে নক্ষত্রগুলি যে আলোক বিকীর্ণ করিয়াছিল তাহা এখন আমাদের নিকট পৌছিতেছে ; আজ সেই নক্ষত্রগুলি যে আলোক প্রেরণ করিতেছে তাহ পৃথিবী পর্য্যন্ত পৌছিবার যখন সময় আসিবে তখন পৃথিবী কোথায় থাকিবে কে জানে ? এই কথাটিই আর এক প্রকারে বলা যাইতে পারে। ধর ঐ অতি দূরবর্তী তারাগুলিতে বুদ্ধিমান জীব বাস করে এবং ধর তাহারা বিজ্ঞানে এত উন্নতি করিয়াছে যে তাহারা তাহাদের বড় বড় দূরবীণে পৃথিবীর উপরিভাগ বেশ ভাল করিয়া দেখিতে পায়। তাহারা আমাদিগের এই পৃথিবীকে কি অবস্থায় দেখিবে ? ৯,০০০ বৎসর পূৰ্ব্বে পৃথিবী যেমনটি ছিল আজ তাহারা পৃথিবীকে তেমনি দেখিবে । তাহার দেখিবে, পৃথ্বীবাসীরা এখনো অজ্ঞানান্ধকারে আবৃত, জ্ঞানের আলোক এথনো ফুটে নাই ; সভ্যতা এখনো দেখা দেয় নাই ; মিশরের পিরামিড় এখনো প্রস্তুত হয় নাই ; ইংলণ্ডের অসভ্য বৰ্ব্বরদিগের দ্বারা অধুষিত বনগুলি আজো পরিষ্কৃত হয় নাই ; অসংখ্য সৌধ পরিপূর্ণ নগরগুলি এখনো পৃথ্বীবক্ষ প্রপীড়িত করিয়া নিৰ্ম্মিত হয় নাই এবং স্বাথান্ধদিগের সংগ্রামের কোলাহলে চতুৰ্দ্দিক শান্তিহীন হইয়৷ উঠে নাই। আমরা যে জ্যোতিদ্ধ পদার্থগুলির কথা বলিয়া আসিলাম সেগুলি ভিন্ন সমুদ্রবেলার বালুকার ন্যায় ২য় সংথ্যা । ] ংকলন ও সম মিথুন রাশির ছবি। নক্ষত্র আছে তাহারে ইয়ত্তা অসংখ্য আরো কত নাই । তারপর নক্ষত্রগুচ্ছগুলি । সহস্ৰ সহস্র তারকা একত্র দলবদ্ধ হইয়া আছে, ইহাদের প্রত্যেকটিই এক একটি স্বৰ্য্যের মত ;–সহস্ৰ সহস্ৰ সূৰ্য্য মিলিত হইয়া এক একটি গুচ্ছ প্রস্তুত হইয়াছে। সুৰ্যোর স্থানে এইরূপ একটি তারকগুচ্ছ পাইলে গ্রহগুলি কি অবর্ণনীয় শোভাই না ধারণ করে ! এই তারকগুচ্ছগুলি ভিন্ন আরো নানা প্রকারে সজ্জিত অনেক নক্ষত্রপুঞ্জ আছে তাছাদের এক একটি দেখিয়৷ চমকিত হইবার জিনিষ। কতকগুলি নক্ষত্রপুঞ্জ এরূপ আছে যে তাহাদের নক্ষত্রগুলিকে একটি একটি করিয়া দেখা যায় না বলিয়া সেগুলিকে নীহারিক বলা হয় । এগুলির দূরত্ব অত্যন্ত অধিক ; যথেষ্ট শক্তিশালী দূরবীণ ভিন্ন এই সকল তারকাপুঞ্জের তারাগুলিকে পৃথক পৃথক করিয়া দেখা সম্ভব হইবে না। অনেকে বলেন, এই সকল অতি দূরবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জগুলি স্বাতিপথের ন্যায় তারা সমষ্টি মাত্র। স্বাতিপথের তারাগুলি আরো দূরবর্তী হইলে ইহাদেরই স্থায় নীহারিকার মত বোধ হইত। . নক্ষত্র লোকের যতটুকু আমরা দেখিতে পাই তাহা লোচন—ক্যাঙ্গারুর আত্মকাহিনী । >8○ দৃষ্টিশক্তি যদি অতি সঙ্কীর্ণ ন হইত তাহ হইলে আমরা আরো উজ্জ্বল আরো সুন্দর কত জ্যোতিষ্ক দেখিতে পাইতাম তাহা কল্পনা করিলেও আনন্দ হয় । কিন্তু আমাদের দৃষ্টিশক্তি কি সঙ্গীর্ণ। এই স্বৰ্যময় নক্ষত্ৰলোকের যেটি বৃহত্তম স্বৰ্য্য পারে যে এ জগতের বৃহত্তম দূরবীণেও সে উকি দেয় না এবং সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ফোটোগ্রাফীর প্লেটেও তাহার ছবিরূপে একটি অতি স্বল্প শ্বেত বিন্দুও পাওয়া যায় না। আমাদের সঙ্কীর্ণ শক্তিতে আমরা যে দূরবীণ প্রস্তুত করিয়াছি তাহাতে যতদূর দৃষ্টি পরিচালন করা যায় তাহারো সীমা অতিক্রম করিয়া যে অসংখ্য নক্ষত্র এক একটি স্বর্য্যের স্থায় বিরাজ করিতেছে একথায় আর সন্দেহ জন্মে না। অনন্ত এই বিশ্বকাশ, ইহার ভিতর দিয়া দৃষ্ট পরিচালনা করিবার জন্ত আমরা কতই না আয়োজন করিয়াছি; যাহা দেখিয়াছি তাহা যাহা দেখিতে পারি নাই তাহার তুলনায় কিছুই নহে। অনন্ত ব্ৰহ্মাও অনন্ত দেবের স্বষ্টি, তাহাকে জানিতে গিয়া বাক্য ফিরিয়া আসে, তাহার স্বষ্টিকে জানিতে গিয়াও আমাদের শক্তি প্রতিহত হয়, কুল কিনারা পায় না। ॐछ । ক্যাঙ্গারুর আত্মকাহিনী। (পিয়ার্স" ম্যাগাজিন হইতে ) আমি এক এক বার আমার অদৃষ্টের কথা ভাবি। আমার মনে হয় বিপদের সঙ্গে চিরদিন সংগ্রাম করিবার জন্তই বুঝি পরমেশ্বর আমাকে স্বজন করিয়াছেন। আমার অতীত জীবনের সব ঘটনাই আমার বেশ স্পষ্ট মনে আছে । উঃ, কি ভয়ানক জীবন! আমি ঘাড়ের লোমের নীচে কত দস্তাঘাত ও ক্ষতচিহ্ন দেখাইতে পারি। এ সকলই আমার যুদ্ধের চিহ্ন। কতবার আমাকে কতপ্রকার বিপদে পড়িতে হইয়াছে ! কতবার আমাকে সৌদর্ঘ্যের હઃ দুরন্ত খনি। আমাদের - , সেটিও আমাদের নিকট হইতে এতদূরে থাকিতে ।