পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬০

  • ബ്--

তিনি উঠেন, বার্ট বলিলে তিনি বসেন, এশন এই অবস্থা দাড়াইয়াছে-বাটি তাহাকে যেন কি মন্ত্ৰে বশ করিয়াছে! বার্টি প্রায়ই মধ্যে মধ্যে পালাইত, চার পাচ দিন যে কোথায় থাকিত কোনো খোজ পাওয়া যাইতনা -- তারপর একদিন অপরিচ্ছন্ন পোষাকে শ্রান্তকান্তভাবে বিমর্ষবদনে ফ্র্যাঙ্কের সামনে আসিয়া হাজির হইত। খুব সম্ভবত এই সময়টা সে লণ্ডনের নীচলোকের সংসর্গে বদমাইসি করিয়া কাটাইত—ফ্র্যাঙ্ক তাহ ঘূণাক্ষরে জানিতে পারিতেন না। বাট ফ্যাঙ্ককে এ দলে টানিতে পারিত না, সে জানিত ফ্র্যাঙ্ককে লইয়া আর যাহাই করিতে পারি নীচ সংসর্গে কিম্বা নীচ আমোদে তাহাকে কখনই ভিড়াইতে পারিবনা, সেই জন্য সে সেই মন্দ সংসর্গ ও আমোদ, মধ্যে মধ্যে মুখ বদলাইবার জন্য, একলার উপভোগের জন্যই রাখিয়াছিল। বার্টি যে কটা দিন কাছে থাকিত না ফ্র্যাঙ্কের সে কটা দিন অত্যন্ত কষ্টে কাটিত। মনে হইত যেন তাহার জীবনের সব মুখ চলিয়া গেছে। তিনি সে কয় দিন বাড়ী হইতে বাহির হইতেন না, কোনো কাজে তাহার উৎসাহ থাকিত না –কেমন মন-মরা হইয়া থাকিতেন। বাটির নিজের হাতে সাজানো বৈঠকখানায় বসিয়া যখন গালে হাত দিয়া ভাবিতেন তখন সে ঘরের প্রত্যেক জিনিসগুলা তাহাকে বার্টির কথাই স্মরণ করাইয়া দিত—তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিতেন। এই সময়ে তাহার মনে একটা অনুশোচনী জাগিয়া উঠিত যাহা আর কোনো সমৃদ্ধ উঠিত না তাহার জীবনট তিনি কি তুচ্ছভাবেই কাটাইতেছেন। কোনো লক্ষ্য নাই, কোনো কৰ্ত্তব্য নাই, কোনো বন্ধন নাই—কেবল অসারতা, নিষ্কৰ্ম্মত, মলিনতা ! তাহার চোখের সামনে তখন ছেলেবেলার স্মৃতি ফুটিয়া উঠিত ; সেই শান্তিময় স্নিগ্ধ গৃহ—সেই কোমলহৃদয় স্নেহশীল জনক জননী, কত অপরিমেয় তাহদের ভালোবাসা, কত, পবিত্র তাহদের জীবন। আর তিনি কি! কত দূর র্তাহার অধঃপতন ! তিনি কি তাহাদেরই মতো হইতে পারেন না–তেমনি নিৰ্ম্মল, তেমনি পুণ্যাত্মা তেমনি পবিত্র । প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭। তার আর কোনো কাজই করা হয় না। বাট বলিলে [ ১০ম ভাগ } সম্মুখে একটা উচ্চ লক্ষ্য রাথিয়া জীবন পথে চলিবার ক্ষমতা কি তাহার নাই ? তিনি এইবার আলস্য ত্যাগ করিবেনবিলাসিতার মোহ কাটাইয়৷ তুলিবেন-বাটি কে বিদায় করিয়া দিবেন। কিন্তু বাট যখন ফিরিয়া আসিত তখন সব গোলমাল হইয়া যাইত—সে র্তাহার উপর আবার মায় প্রভাব বিস্তার করিয়া বসিত। তখন তাহার বোধ হইত বাটিকে ছাড়িয় তিনি কিছুতেই থাকিতে পারেন না। বাটিকে ছাড়িলে একদণ্ড চলিবেন । কথায় কথায় একদিন বাটি বলিল—“চলন নরওয়ে বেড়াতে যাওয়া যাক ৷” বার্টির পক্ষে লওনের আমোদ আর ভালো লাগিতে ছিলনা, তাই সে এ কথা বলিল। ফ্রাঙ্ক ভাবিলেন কথাট মন্দ নয় । বিদেশে গেলে দৈনিক জীবনের কতকটা পরিবৰ্ত্তন হইবে এবং খরচও অনেক বাচিয়া যাইবে—লওনের বাবুয়ানিতে খরচ ভয়ঙ্কর । এই মনে করিয়া তিনি নরওয়ে যাওয়া স্থির করিলেন । ঠিক হইল, বাটিও তাহার সঙ্গে যাইবে । দ্বিতীয় ভাগ । প্রথম পরিচ্ছেদ । ডনথজেম নগরের হোটেলে মধ্যাহ্ন ভোজন শেষ করিয়া দুই বন্ধু রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িলেন –পথ প্রশস্ত, নির্জন, আশেপাশে ছোটাে ছোটাে কাঠের বাড়ী ! কিছু দূর অগ্রসর হইলে এক বৃদ্ধ ও র্তাহার সঙ্গে এক যুবতী তাহাদের নজরে পড়িল। বন্ধুদ্বয় যেখানে যাইতেছিলেন, মনে হইল তাহারাও সেইখানকার যাত্রী ! এ রকম স্থলে বেশি পরিচয়ের আবশুক করেন, তাহারা সকলে একই হোটেলে থাকিতেন ইহাই যথেষ্ট মনে করিয়া র্তাহীদের দেখিবা মাত্রই দুই বন্ধু সম্ভাষণের জন্য টুপি খুলিলেন। বৃদ্ধ তৎক্ষণাৎ ইংরাজি ভাষায় জিজ্ঞাস করিলেন—“আপনারা জিট্রঞ্জেল্ড এর রাস্ত চেনেন ?" মেয়েটির সঙ্গে বৃদ্ধের এই পথের বৃত্তান্ত লইয়া তর্ক চলিতে ছিল। যুবতীর কথার সঙ্গে বৃদ্ধের মিল হইতেছিল না-- যুবতী একখান লাল রংয়ের কেতাব খুলিয়া পথের বিবরণ | | | s


| . | ২য় সংখ্য। । , বুদ্ধকে শুনাইতেছিলেন। বৃদ্ধের সংশয় দূর না তিনি বন্ধুদ্বয়কে প্রশ্ন করিলেন । ফ্র্যাঙ্ক উত্তর করিলেন যুবতীর কথাই ঠিক ! যুবতী তখন লাল কেতাবখানি মুড়িয়া ফ্র্যাঙ্কের দিকে চাহিয়া বলিলেন–“বাবা আমার কথা কিছুতেই মানেন না, ওঁর ভয় আমি ওঁকে নিরাপদে পথ দেখিয়ে কোথাও নিয়ে যেতে পারিনে।" ফ্র্যাঙ্ক বলিলেন—“পথঘাট কি আপনার সব চেনা ?” যুবতী হাসিয়া বলিলেন—“চেনা বই কি ” বার্টি প্রশ্ন করিল, পথ কতদূর এবং পথের শেষে আছেই বা কি। কারণ ফ্র্যাঙ্কের সহিত চরকির মতো ঘোরা তাহার পক্ষে অসহ্য হইয়া উঠিয়াছিল। এই কয়েক মাস বন্ধুর সহিত বসবাসে নিজের গরীবয়ান ঢাকিতে গিয় তাহার চাল এত বড়মানুষি হইয়া গিয়াছিল যে চেয়ারে ঠেসান দিয়া চুরুট ফোকার চেয়ে কিছু বেশি পরিশ্রম করিতে তাহার অত্যন্ত কষ্ট হইত। কোনো রকম পরিশ্রমকেই সে ভারি ডরাইত। কিন্তু দেশভ্রমণে বাহির হইয়৷ চুপটি করিয়া হোটেলে বসিয়া থাকাতো চলেন।--তাহাকে চলিতে ফিরিতেই হইত। অধিকাংশ সময় পদব্রজে যাইতে হইত— কাহাতকই বা ঘোড়ার পিঠে আড়ষ্ট হইয়া বসিয়া থাকা যায়। বার্টি ভাবিত এ রকম করিয়া থালি দৌড়ধাপ করা নিতান্ত বোকামি ! এতে কি আমোদ বাপু ! এর চেয়ে হোয়াইট্‌ রোজ কটেজ ছিল বেশ! ফ্র্যাঙ্ক কিন্তু মোটেই অসন্তুষ্ট ছিলেন না—স্বাস্থ্যপ্রদ পরিষ্কার বায়ু, খট্‌খষ্ট্রে রৌদ্র, তাহার মাঝে ঘোরাঘুরি তাহার কাছে অত্যন্ত আরামের জিনিস হইয়া উঠিয়াছিল—মনে হইত তিনি সেগুলোকে খুব আনন্দের সহিত উপভোগ করিতেছেন এবং বেশ যুক্তিতে আছেন। বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিলেন—“আপনার কি ইংলিশম্যান ?" ফ্র্যাঙ্ক বলিলেন যে তাহারা ডছ বটেন কিন্তু লওনেই বসবাস করেন। কথাগুলার ভিতর বৃদ্ধের সহিত একটা আত্মীয়তা দেখাইবার ভাব লুকানো ছিল—কথাটা এই, যেন তাহার এক দেশেরই লোক ! একসঙ্গে পথ চলিতে চলিতে পরম্পরের মধ্যে প্রাকৃতিক দৃপ্তের আলোচনা ও তাহার সৌন্দর্য বর্ণনা চলিতে লাগিল। তাহাতে সকলের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠত জমিয়া উঠিল । বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি হওয়াতে সংকলন ও সমালোচন—ভাগ্যচক্র । ১৬১ ৷ --SumitaBot (আলাপ) ১৮:২০, ২৫ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি)------- জোরে হোরে পা ফেলিয়া চলিতে লাগিলেন, মেয়েটি খুব থাড়া হইয়া স্থাটিতে লাগিলেন–র্তাহার গায়ের নীল বসন বাতাসে থেলিয়া বেড়াইতে লাগিল। সকলেরই প্রাণে বেশ একটা ফুৰ্বির আভাষ ফুটিয়া উঠিল। বার্টি কিন্তু বুঝিল না ইহার মধ্যে আমোদের কি আছে। যাহা হউক সে কোনো রকম আপত্তি তুলিল না। মধ্যে মধ্যে অতি অল্পই কথা বলিল। যাহার সহিত মাত্ৰ ঘণ্টা কয়েকের পরিচয় এবং যে আলাপের শেষ ঘণ্টাকয়েক পরেই, সেই পরিচিত ব্যক্তি কিম্বা সেই আলাপের উপর বেশি জোর দিবার সে কোনো আবশ্বকই বোধ করিত না। সেই জন্য সে এত অল্প কথা কহিতেছিল। এবং ফ্র্যাঙ্ক যখন বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি বা তাহার কন্যার সঙ্গে খুব উৎসাহের সহিত আলাপ করিতেছিলেন তখন সে তাহাতে একটু আশ্চৰ্য্য বোধ করিতেছিল। হঠাৎ একটা জিনিস তাহার নজরে পড়িল—ফ্র্যাঙ্কের ধরণধারণ, কথা কহিবার ভঙ্গী, শিষ্টাচার-কি চমৎকার! কি ভব্যতাপূর্ণ! কত অমায়িক! কেমন সহজ স্বন্দর—এতটুকু কৃত্রিমতা নাই। আর তার নিজের আচরণ, নিজের শিষ্টাচার সবটাই জোর করিয়া করা, সবটাই কৃত্রিমতায় ভরা। এই খানে তার সঙ্গে ফ্র্যাঙ্কের কত তফাৎ ! ফ্র্যাঙ্ক সদ্বংশে জন্মগ্রহণ করার দরুণ এবং সৎসঙ্গে মেলা মেশার জন্ত যাহা নিজের থেকে লাভ করিয়া উজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছেন সে সেই ঔজ্জ্বল্য বাহিরে পালিশ ঘসিয়া বাহির করিয়াছে। ফ্র্যাঙ্কের তুলনায় তাহার এই হীনতা আজ তাহার বুকে অত্যন্ত বাজিল। বহুমূল্য পোষাকপরিচ্ছদে আবৃত থাকিয়াও তাহার মনে হইতে লাগিল পথের ভিখারী হইতেও সে দীন ! এই হীনতার ভাব সে আর সহ করিতে না পারিয়া তাড়াতাড়ি বৃদ্ধের দিকে অগ্রসর হইয় গেল—এবং দেহের সমস্ত শিরা দৃঢ় করিয়া, ফ্র্যাঙ্কের চেয়ে সে যে কোনো অংশেই হীন নয় তাছাই প্রমাণ করিবার জন্য তাহার সহিত মধুর ভাষে শিষ্টtলাপ আরম্ভ করিয়া দিল। পাহাড়ের বাকা-চোরা ও চড়াই পথ ভাঙিতে বৃদ্ধ ক্রমেই পিছাইয়া পড়িতে লাগিলেন। ফ্রাঙ্ক ও মেয়েটি অগ্রসর হইয়া গেলেন। ক্রমে বাটি ও বৃদ্ধ অনেক পশ্চাতে পড়িয়া রছিলেন। তখন মেয়েটি সংযত আগ্রহের সহিত ফ্র্যাঙ্ককে জিজ্ঞাসা