পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ويسb § ఎ99శు দিনে যে অস্থস্থত দেখা দিয়াছিল, নিজের বুদ্ধির দৰ্পে তিনি তাহা দূর করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। তিনি বুদ্ধ বলিয়াই বুঝিয়াছিলেন, বাহির হইতে ধৰ্ম্ম দেওয়৷ ষায় }, সেটা প্রতি-মানুষের নিজস্ব জিনিষ । একমাত্র অধৰ্ম্মকে আঘাত করাই যায়, ধৰ্ম্ম তারপর নিজেকে নিজে প্রকাশ করে । ঐন্দ্রিলা ভাবিতেছিল, বাংলাদেশের তরুণরা তরুণীদের শোনাষ্টতে বৌদ্ধধৰ্ম্ম আলোচনা করিয়া সত্যই কি কিছু সুখ পায় ? পায় হয়ত, কে জানে ? ক্রমে সে কৌতুহলী হইয়া অজয়ের কথায় মন দিতে চেষ্টা করিতে লাগিল । এত উৎসাহ করিয়া বলিতেছে, প্রত্যেকটি কথা অস্তরের সত্যকার উপলব্ধি হইতে বলিতেছে বলিয়াই মনে হয়, ন-শোনাটা নিতান্ত নিষ্ঠুর ব্যবহার হইবে। অজয় এই বলিয়া শেষ করিল, “অসত্যের বন্ধন থেকে দেশের মনকে বুদ্ধদেব আন্তরিকভার যে-ক্ষেত্রে মুক্ত ক’রে দিয়ে গিয়েছিলেন তাহারই উপর ধৰ্ম্মাশোকের সাম্রাজ্য, তাম্রলিপ্তির বৈভব, অজস্তার শিল্পের উদ্ভব সম্ভব হয়েছিল। তারপর দেশের মহাপুরুষেরা তাদের বিধি-বিধান নিয়ে যুদ্ধযাত্রা করলেন সেই মুক্ত আত্মার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। শাস্ত্রপঞ্জিকা তৈরি হল, মঠ-মন্দির গড়ল, মানুষের মনের জায়গায় পুরোহিতের বসলেন। সেদিন যে আত্মপ্রবঞ্চনায় দেশের মন অভ্যস্ত হল, আজও অবধি তার জের টেনেই আমরা চলেছি। আসল মাতৃঘটাকে কোথায় ফেলে এসেছি কেউ জানি না, জীবনের প্রতিক্ষেত্রে নকল মানুষটার হারমানার তার শেষ নেই।” ইহার পর কিছুক্ষণ আর কেহই কোনও কথা কহিল না। স্বভদ্র বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম বা ইতিহাস সম্বন্ধে কখনও গভীর করিয়া কিছু ভাবে নাই, ভাবিবার প্রয়োজনও অনুভব করে নাই। বিমানের বক্তৃতা দিবার প্রয়োজন যাহা ছিল তাহা সে আগেই সমাধা করিয়া লইয়াছে। কিন্তু তাহার কেহই জানিত না যে, অজয়ের কথার মধ্যেকার আবেগ অকস্মাৎ একটি নারীচিত্তে গিয়া প্ৰহত হইয়াছে এবং তাহার অভ্যস্ত নিবিড় সজাগ চৈতন্যে যে-দোলা লাগিয়াছে তাহা কিছুতেই আর থামিতে চাহিতেছে না। দেশের বিষয়ে ঐন্দ্রিলা কখনও যে, কিছু চিন্তা করে নাই তাহা নহে। কিন্তু যখনই ভাবিতে বসিয়াছে, দেশের বহুমুখী । সমস্তার বিপুল জটিলতায় তাহার হৃদয় অবসন্ন হইয়৷ * আসিয়াছে। তখন ইহাই মনে করিয়া নিজেকে সে সাত্বনা দিয়াছে, যে, ভারতবর্ষে আন্তরিকত, বুদ্ধি এবং শক্তি সম্পন্ন মানুষের ত অভাব নাই, তাহারা নিশ্চয় এই-সমস্ত সমস্কার কথা ভাবিতেছেন,সমাধানর্তাহাদেরই দ্বারা কোনওনা-কোনও দিন হুইবেই। কিন্তু দেশের দুর্ভাগ্যের স্বত্র যে এত দূর-অতীতকে অবলম্বন করিয়া রচিত হইরা থাকিতে পারে, এই সম্ভাবনা মাত্রেই তাহার কল্পন। উন্মুখ হইয়া উঠিল। অজয়ের দিকে দুই চোখের গভীর দৃষ্টি তুলিয়া সে বলিল, “আপনি কি তাহলে বলতে চান, বৌদ্ধধৰ্ম্মকে যে জায়গায় আমরা অস্বীকার করেছিলাম আবার সেইখানেই তাকে স্বীকার ক’রে আমাদের আরম্ভ করতে হবে ?” অজয় কিছুক্ষণ অবনত মন্তকে চুপ করিয়া রহিল। ঐন্দ্রিলার প্রশ্নের উত্তর ভাবিবার তাহার প্রয়োজন ছিল না, উত্তর তাহার জানাই ছিল। কিন্তু যুক্তিকে কেবল যুক্তির ক্ষেত্রেই একান্ত করিয়া না দেখিয়া, বাস্তব-জীবনে তাহাকে প্রয়োগ করিয়া পরীক্ষা করিবার নারীচিত্তের এই যে প্রয়াস, ইহার অত্যন্ত কঠোর কিন্তু মৰ্ম্মস্পর্শী সরলতা তাহার মনকে অভিভূত করিল। এতক্ষণ নির্বিচার আবেগ হইতে কথা বলিতেছিল, এবারে প্রত্যেকটি কথাকে তৌল করিয়া সাবধানে কছিল, “আমি ঠিক তা বলতে চাইনি। বৌদ্ধধৰ্ম্ম নিজেই একটা অস্বীকৃতি, তাকে নূতন ক’রে স্বীকার করবার কোনও অর্থ হয়ত নেই। নিজের ওপর, নিজের কৰ্ম্মফলের ওপর মানুষের যে চূড়ান্ত নির্ভর তা বৌদ্ধধৰ্ম্মে বিদ্রোহের রূপ নিয়ে প্রকাশ পেয়েছিল, সেই বিদ্রোহকে আমাদের দেশের মনে আবার জেগে উঠতে দেখলে আমি খুশী হই। সত্যকে অনাবৃত রূপে দেখবার যে ক্ষমতা, সমস্ত বিধি-বিধান নিয়ম-কান্থনের ওপর নিজের মনুষ্যত্বকে দপের সঙ্গে স্থাপিত করবার যে সাহস তাই আমার কাছে চিরকালের বৌদ্ধধৰ্ম্ম।” ঐজিলা বিশেষ-কিছু বুঝিল না, কিন্তু তাহার গায়ে কাট দিল। সে এইটুকু মাত্র অনুভব করিল যে, দেশের