ডোমের নীচেকার আটটি ত্রিকোণগুয়ালা জায়গায়। বিষয় ছিল “মানব-জীবনের অষ্ট ধাপ”। মূল বড় ডোমের সঙ্গা আমাদের চার জনকেই একসঙ্গে করতে হয়েছিল ; যদিও প্রত্যেকেরই স্বাকবীর বিষয় ছিল স্বতন্ত্র। রণদা উকিল একেছেন পরাজিত পুরাজের সহিত বিজয়ী আলেকজাণ্ডারের আলাপন। স্থধাংশু চৌধুরীর আকবর বিষয় ছিল সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের মহিলা সৈনিকদের কাছ থেকে অভিবাদন গ্রহণ। আমাকে আঁকতে হয়েছে সম্রাট অশোকের কন্যা সঙ্ঘমিত্রকে সিংহলদ্বীপে বৌদ্ধধৰ্ম্মপ্রচারে প্রেরণ : সঙ্গে বোধিবৃক্ষ ও অন্যান্ত বৌদ্ধশাস্ত্রপুস্তকাদি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে । ললিত সেন একেছেন সম্রাট আকবর দরবারে বসে আছেন ও স্থপতি ফতেপুরসিক্রির পরিকল্পনা বাদশাহকে দেখাচ্ছে। আমরা ষ্টুডিওতে পাতলা বড় বড় কাগজ ডুইং বোড়ে আটকে ডিজাইন বা পরিকল্পনা সুরু করলাম । এক একটা ছবির মাপ ছিল ৩০ স্কোয়ার ফুট থেকে আরম্ভ করে ১৩০৷১৬০ ঙ্গোয়ার ফুট। ছবির ফিগারগুলো সত্যিকারের সাধারণ লোকের চেয়েও বড়। পাতল কাগজে প্রথম ডিজাইন করতে আমাদের সকলেরই প্রায় ন-দশ মাস লেগেছিল। ষ্টডিওতে মাঝে মাঝে আমরা শিল্পীদের চায়ের নিমন্ত্রণ করতাম, এতে পরিচয় হবার স্থধোগ হ’ভ। রয়েল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রায়ই এসে আমাদের কাজ দেখত। পূজনীয় রবীন্দ্রনাথ যখন ১৯৩১ সালে লণ্ডনে ছিলেন তখন তাকে ও তার পুত্রবধূ ত্রযুক্ত প্রতিম দেবীকে আমাদের ষ্টুডিওতে চায়ের নিমন্ত্রণ ক’রে আমাদের ডিজাইন দেখাই। আমাদের কাজগুলো দেখে তাদের খুবই ভাল লেগেছিল। গবন্মেন্টের সঙ্গে আমাদের ব্যবস্থা ছিল যত “, তুলি, কাগজ, কাঠের মাচা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় সবই পূবন্মেন্ট দেবেন। আর আমরা দেওয়ালে আঁকবার হন্তে এক পাউণ্ড বা ১৩০ টাকা হিসাবে পাব। অবশু *াজের হিসেবে প্রডি স্কোয়ার ফুটে আরও বেশী টাকা ওয়া উচিত ছিল। লোহার নল স্কুড়ে জুড়ে ফ্রেম ক’রে 'ঃার উপর কাঠের লম্বা লম্ব তক্তা পরম্পর বসিয়ে মাচা লণ্ডলে ইণ্ডিয়া হাউসের দেওয়াল-চিত্র సిd বাধা হ'ল। আকবার দেওয়ালে তেলের একটা আস্তর লাগান হয়েছিল কারণ প্রথমে তৈলচিত্র-পদ্ধতিতে থাকবার কথা ছিল। কলেজে যে-সব পাট পাঠিয়েছিল তার মধ্যে কতকগুলোতে তেলের আস্তর লাগান ছিল । আমরা ৭ । লীন প্রস্থ তৈলচিত্র-পদ্ধতিতে এবং এগ টেম্পারাতে একে পরীক্ষা ক'রে দেখতে পেলাম এগটেম্পারাতেই ভাল কাজ হবে, বিশেষ ক'রে আমরা যে-ধরণে ৪ মে-ভাবের ছবি একে থাকি। ভারতীয় অঙ্কন-পদ্ধতির রেপাই হ’ল একট: বিশেষত্ব। তৈলচিত্র-পদ্ধতিতে পেষ্ট রেখার গতি রাখা বড় কঠিন। স্বাকবার সব দেওয়াল থেকে সেইজন্য শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘসে তেল উঠাতে হয়েছিল। ৯ই এপ্রিল ১৯৩১ সালে দেওয়ালে ছবি আঁকতে আরম্ভ করি। প্রথমে পাতলা কাগজে ডিজাইনের উণ্টে দিকে ভাল ক'রে গুড়ো লাল রং লাগিয়ে সেটাকে অঁাকবার দেওয়ালে ছবির দিকটা উপরে রেখে বেশ টান ক'রে ধরে আঠা দিয়ে লাগাতে হয়েছিল। তারপর শক্ত পেন্সিল দিয়ে ছবির লাইনের উপর চাপ দিয়ে দেগে দেওয়ালের গায়ে দাগ ফেলেছিলাম। সব ছবিটা দাগ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে ধীরের আঠা খুলে পাতলা কাগজখানা সরিয়ে ফেলতেই দেওয়ালের উপর লাল রঙের লাইনে সব ছবিটাকে বেশ দেখতে পেলাম ।
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।