পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ কবি মনোমোহন বস্তু Abr(? সম্পাদকের নামও রাখা হইয়াছিল ‘মধ্যস্থ' ; ইহা কল্পনার কথা না বাস্তবিক, তাহ বলা কঠিন । সাধারণ সংস্করণ ভিন্ন অতিরেক মধ্যস্থও বাহির হইতে থাকে, ২রা আষাঢ় হইতে। প্রতি সংখ্যায় বিদেশ হইতে মূল্যের প্রাপ্তিস্বীকার থাকিত, তাহা হইতে জানা যায় যে প্রথমাবধি গ্রাংক-সংখ্যা ভালই ছিল ; বহরমপুরের রামদাস সেন মহাশয় প্রথম হইতেই গ্রাহক ছিলেন, তিনি আবার নাম রাখিয়াছিলেন, ‘মিডিয়েটার’ ( Mediator ) । ঢাকার মি: সেমূয়েল লংডে, ইন্দোরের স্থধ্যকুমার বন্ধ, আসাম সদিয়ার কোরকান আলি প্রভৃতি হিন্দু মুসলমান খ্ৰীষ্টান নিৰ্ব্বিশেষে মধ্যন্থের গ্রাহকসংখ্যা ভুক্ত ছিলেন। গ্রাহক ভিন্ন দেশহিতৈষা অনেকে “মধ্যস্থ'কে পত্রসম্পাদনে ও গ্রন্থপ্রকাশে সাহায্য করিতেন। পত্র দুই মাস চলিতে-নাচলিতেই শোভাবাজার রাজবাড়ার মহারাজ কমলকুষ্ণ দেব একটি উত্তম লৌহযস্থ, একটি কাষ্টধন্থ, কয়েক প্রকার মূতন শু পুরাতন অক্ষর ও বিবিধ সরঞ্জাম মধ্যস্থকে উপহার দেন ; মহারাণ স্বর্ণময়ী মধ্যস্থের জন্ত পঞ্চাশ টাকা অভিরেক দান করেন ; রাণী শরৎক্ষন্দরী মধ্যস্থের জন্য বিশ টাকা আমুকুল্য করেন এবং রামাভিষেক নাটকপাঠে খুশী হইয় গ্রন্থকারকে দশ টাকা পারিতোষিক দেন ; কাঞ্চিনার কুমার মহিমারঞ্জন বাধিক মূল্য ছাড়া এককালীন ত্রিশ টাঙ্ক দান করেন এবং পুস্তকগুলি পড়িয়া আরও দশ টাকা পাঠান ; তুষভাণ্ডারের জমিদার রমণীমোহন মধ্যস্থের জন্ত বিশ টাকা দেন ও রামাভিযেকের জন্য পাচ টাকা পারিতোষিক দেন, মনোমোহন বাবুর বক্তৃতা ও বিজয়ার কোলাকুলি সম্বন্ধে কবিতা পড়িয়া আরও দশ টাকা পুরস্কার পাঠাইয়া দেন ; দিনাজপুরের রাণী শুামমোহিনী মধ্যস্থের জন্ত পচিশ টাকা এবং প্রণয়পরীক্ষাদি লেখার জন্য পুরস্কারস্বরূপ গ্রন্থকারকে দশ টাকা পাঠাইয় দেন। সেকালে সাহিত্যিকের আদর এইভাবেই করা হইত। দক্ষিণার পরিমাণের উপর নয়, দক্ষিণ-দানের উপরই সমাদর নির্ভর করিত। বহু সন্ধান্ত লোকের আমুকুল্য হইতে বুঝা যায় মধ্যন্থের গুণ কত অধিক ছিল। প্রথম ছয় মাল মধ্যস্থের রয়েল আটপেঞ্জী দুই ফম। বা ১৬ পৃষ্ঠায় কুলাইত না, অতিরেক পৃষ্ঠার দরকার হইত। ছয় মাস পূর্ণ হইলে এই ষোল পৃষ্ঠা বাড়াইয়া বিশ পৃষ্ঠা হইল। ইহাতেও কুলায় না, ১২৮২ আষাঢ় শ্রাবণে ক্রোড়পত্র ছাপা হয়। মধ্যস্থ নামেই পত্রের মধ্যপথ গ্রহণ স্বচিত্ত করিতেছে,— “নবীনভাবাক্ষপলান্নবান্নবে স্বয়সোহপাহ চিরাগত প্রিয়াণ । নিরীক্ষণ ভিন্ন প্রকৃত নমুনতঃ মধ্যস্থ ইথং যতত্তে সমন্বয়ে ” মধাস্থের প্রবন্ধগৌরব মন্দ ছিল না। প্রকৃতি পম্যালোচনা, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, ঐতিহাসিক প্রবন্ধ সবই বাহির হইত। "কেড়েলের জীবন" নাম দিয়া সম্পাদক নিজের জীবনের কথা বলিয়াছেন। এাহ্মসমাজ সম্বন্ধে তাহার সমালোচনা যে বিশেষ তীব্র ছিল তাহ "নাগাশ্রমের অভিনয়” পড়িলেই বোঝা যায়, নাটকেও মাঝে মাঝে স্ত্রী-স্বাধীনতার প্রতি কটাক্ষপাত আছে । “দৃষ্টান্ত দেখিবে যদি, এস মোর সহ, ভারত-আশ্রম মামা নাগাশ্লমে এস, শইরূপ স্বাধীন স্বাধীন ভ্ৰাত শুল্পী দেখিয়া জুড়াবে আঁখি-হুইবে অবা ” শুধু ব্ৰাহ্মসমাজের স্ব-স্বাধীনতার নয়, ব্রিটিশ রাজনীতিরও তাত্র স্পষ্ট নিভীক সমালোচনা করিতে মলোমোহন কোনও দিন কুষ্ঠিত হন নাই । ১২৮১ সালের প্রথমেই প্রশ্ন,—“ইংলগু কি যথার্থই প্রজাহিতৈষী ?” নেপিয়ারের সিন্ধুজয় লইয়া ১২৮২-এর ভাদ্র সংখ্যায় এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়,—"সিন্ধু জয়, না হরণ?” তাহার পূৰ্ব্বে আষাঢ় শ্রাবণ সংখ্যায় “মুখোষার বরদা পুস্তক” এই সঙ্গে পঠিতব্য ; কেঁড়েলের ববম্বমূ-জৰ্জাষ্টকম্‌”ও এই বিষয়ে সাক্ষা দিবে। তাহার প্রথম দুই লাইন এই – বশ্বম্বমূ ক্যাম্বেলিবংশ-অবতংশ জর্জবমূকি বিচিত্র চাকচিত্র চরিত্রস্ত মাহাত্ম্যম্। ১২৮২ সালের পূর্বেই মনোমোহনের স্বাস্থ্য ভাঙিয় পড়িতেছিল। পত্রসম্পাদনেও যথেষ্ট ক্রটি হইতেছিল। জ্যৈষ্ঠের মধ্যন্থে সম্পাদক এইজন্য দোষ স্বীকার করিয়াছেন। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদে ১২৮২ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস পর্যন্ত মধ্যস্থ আছে । তাহার পর উই। আর বাহির হুইত কি-না জানার উপায় নাই ।