পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ স্বাগত সুন্দরী, কিন্তু সে অসম্পূর্ণ সম্পূর্ণ স্মৃতি ও সম্পূর্ণ হৃদয় বিকশিত না হইলে তাহাকে বিবাহ করিয়াও কোন মুখ নাই । কয়েক দিনের পর হরিনাথ রেলে করিয়া নবাবগঞ্জে ! চলিল। প্রথম প্রথম তৃতীয় শ্রেণীর গাড়ীতে চড়িতে তাহার মন সরিত না, তাহার পর গঙ্গাধরের শিক্ষায় আর কোন দ্বিধা হইত না। তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট কিনিয়া গাড়ীতে চড়িল । সেই গাড়ীতে দেওয়ান ত্ৰিলোচন জমিদারীর কোন জরুরী কাজে কোথাও যাইতেছিলেন। তিনি ছিলেন সেকেণ্ড ক্লাগে, কাৰ্ত্তিকও র্তাহার সঙ্গে ছিল। গাড়ীতে উঠিবার সময় হরিনাথ তাহাদিগকে দেখিতে পায় নাই । কীৰ্ত্তিকের তামাক সিগারেট খাওয়া অভ্যাস। বাপের সঙ্গে এক গাড়ীতে থাকিলে সেট চলে না। একটা ষ্ট্রেশনে নামিয়া কাৰ্ত্তিক তাহার পিতাকে বলিল, আমি একবার পাশের গাড়ীতে যাচ্চি, এর পরের ষ্টেশনে আসব। ত্ৰিলোচন ছেলের বিদ্যা জানিতেন, তিনি আর কিছু বলিলেন না। পাশের একখানা তৃতীয় শ্রেণীর গাড়ীতে উঠিতে গিয়া কান্ত্রিক দেখে হরিনাথ বসিয়া আছে। তাহাকে দেখিয়া কান্ত্ৰিক বলিল, এই যে, আপনি কোথায় যাচ্চেন ? হরিনাথ বলিল, আমি একবার নবাবগঞ্জে যাচ্চি। তুমি কি এইখানে উঠলে ? —ন, ন, আমরা সোনাপুর থেকে নদী পার হয়ে গাড়ী ধরেচি। বাবা আছে সেকেণ্ড ক্লাসে, তা সেখানে ত লিগারেট চলবে না, তাই একবার এ গাড়ীতে এলাম । কাৰ্ত্তিক একটা সিগারেট বাহির করিয়া ধরাইল । সিগারেট টানিতে টানিঙে বলিল, আপনার সঙ্গে সেই যে আর একজন ছিলেন তিনি কোথায় ? —লে আর একটা জায়গায় একটা কাজে গিয়েচে । হরিনাথ কলিকাতার উল্লেখ করিল না। কাঞ্জিকের সঙ্গে কথা কহিতে কহিতে তাহার চক্ষে কয়লার গুড়া পড়িল। হরিনাথ তাড়াতাড়ি পকেট হইতে রুমাল বাহির করিয়া চোক মুছিতে লাগিল। স্বাগত্তা S3) রুমাল টানিয়া বাহির করিতে গিয়া হরিনাথের পকেট হইতে একথানা কাগজ পড়িয়া গিয়াছিল সে তাহ দেখিতে পায় নাই। কান্তিক সেখানা দেখিতে পাইয়ু, হরিনাথকে দিবার জন্য তুলিয়া লইল। কাগজের দিকে একবার চাহিয়াই কাস্ট্রিঞ্চ অতিমাত্র বিস্মিত হইল । আবার ভাল করিয়া দেপিল । কাগজখান। স্বাগতার ফোটোগ্রাফ। কাক্টিক বিস্ময় গোপন করিবার চেষ্ট ন! করিয়া কহিল, এ আপনি কোথায় পেলেন ? হরিনাথ রুমাল দিয়া দুই চক্ষু রগড়াইতেছিল, রুমাল সরাইয়া দেগিল কার্ভিকের হাতে স্বাগঙার ফোটোগ্রাফ ! তখন তাংরি মনে পড়িল ফেটোগ্রাফশানা ব্যাগে না রাখিয়া পকেটে রাখিয়াছিল। গঙ্গাধর বার-বার সাবধান করিয়া দিলেও সে সাবধান হইতে পারে নাই। কার্টিকের প্রশ্ন শুনিয়া হরিনাথের মনে হইল হয়ত তাহার অসাবধানতা হইতেই কিছু স্বফল হইতে পারে। সে বলিল, কেন, ফোটোগ্রাফ পাওয়া কি বড় শক্ত ? একখানা কাৰ্ত্তিক কিছু বেগের সহিত কহিল, সে কথা হচ্ছে না। ফোটোগ্রাফ তো যার তার কাছে থাকে। এর ফোটোগ্রাফ আপনার কাছে এল কেমন করে ? so যে স্থতার খেই একবার গঙ্গাধরের হাতে ঠেকিয়াছিল সেটা যেন সড় সড় করিয়া হরিনাথের হাতে চলিয়া আসিতে আরম্ভ হইল। সেবারে হ্যামাচরণের নাম শুনিয়াছিল কান্ত্রিকের প্রসাদে, এবার হয়ত তাহারই মুখ দিয়া আগাগোড়া সব কথাই বাহির হইয়া পড়িবে। হরিনাথ মনের ব্যগ্রতা চাপিয়া, সাবধানে, সহজভাবে জিজ্ঞাসা করিল, ওঁকে কি তুমি চেন ? —চিনিনে ? কি বলেন, মশায় ? আমাদের দেশে ওঁকে আবার কে না চেনে ? —তুমি কার কথা ভাবচ ? —এতে আবার ভাববার কি কথা আছে ? এত চৌধুরাণী ঠাকরুণের ছবি। আম্বন না, বাবাকে দেখাবেন, তা হলেই বুঝতে পারবেন উনি কে । —সে পরে হবে, এখন তুমিই সব কথা বল না শুনি। ওঁর নাম কি, আর উনি কে ?