পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০০ ধ্ৰুপ্রবাসী ; S99āు মূলগন্ধকূট বিহার, কুটস্থ যিনি মায়ার দ্বারা বা ছলনার দ্বারা বদ্ধ, অথবা যিনি গৃহে বা দেহে অবস্থিত অর্থাৎ জীবাত্মা ! গীতার ১৫।১৬ শ্লোকে অক্ষর বা অবিনাশী আত্মাকে কূটন্থ বলা হইয়াছে। পরমাত্মার যে অবিকারী অংশ জীবত্মাতে অনুপ্রবিষ্ট হইয়া আছে পঞ্চদশী নামক পরবর্তী বেদান্তশাস্ত্রে তাহাকেও কুটস্থ নামে অভিহিত করা হইয়াছে। গীতার ৬৮ গ্লোকে কুটস্থ শৰ যোগীর বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় অবিচলিত, অপ্রকম্প, নির্লিপ্ত ইত্যাদি অর্থই সঙ্গত। জ্ঞানবিজ্ঞানতৃপ্তাত্মা শব্দের অর্থ যাহার আত্মা অতুভবসিদ্ধ জ্ঞান ও তত্ত্বজ্ঞান অর্থাৎ যুক্তিবিচারসিদ্ধ জ্ঞান দ্বারা তৃপ্ত হইয়া সংসার প্রতি ধাবমান হয় না। তৃতীয় অধ্যায়ের ৪১ শ্লোকে জ্ঞান বিজ্ঞান শব্দের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য। - রামমোহন রায় বলেন, “যোগারূঢ় তিন প্রকার হয়েন। প্রথম ( যদাহি নেঞ্জিয়ার্থেষু ইত্যাদি ৬৪ ) যেকালে সকল সঙ্কল্পকে মনুষ্য ত্যাগ করে, অতএব ইন্দ্রিয়বিষয়সকলে ও কৰ্ম্মে আসক্ত না হয় সেকালে তাহাকে যোগারূঢ় কহা যায়। এ প্রকার ব্যক্তি কনিষ্ঠ যোগারূঢ় হয়েন।. পরে গীতাতে পূৰ্ব্ব হইতে শ্রেষ্ঠ যোগান্ধঢ়ের লক্ষণ কহিতেছেন। ( জ্ঞানবিজ্ঞানতৃপ্তাত্মা ইত্যাদি ৬৮ ) অর্থাৎ গুরূপদেশ জ্ঞান ও পরোক্ষামুভব ইহার দ্বারা র্তাহার অন্তঃকরণ তৃপ্ত হইয়াছে, অতএব নিৰ্ব্বিকার ও বিশেষরূপে ইন্দ্রিয়ঙ্গয় বিশিষ্ট হয়েন এবং মুক্তিক পাষাণ ও স্বর্ণ ইহাতে সমান দৃষ্টি তাহার হয়, তাহাকে যুক্ত যোগারূঢ় কহি। যুক্ত যোগান্ধঢ়কে পূৰ্ব্বোক্ত যোগারূঢ় হইতে উত্তম কহিলেন যেহেতু আত্মজ্ঞানে সম্পূর্ণ তৃপ্তি ও নিৰ্ব্বিকার ভাব ও বিশেষরূপে ইঞ্জিয় জয় ও পাষাণ ও স্ববর্ণে সমভাব এ সকল বিশেষণ কনিষ্ঠ যোগারূঢ়ে নাই, এ নিমিত্ত তেহো যুক্ত যোগারূঢ়ের তুল্য গণিত হয়েন না। পরে মধ্যম যোগারূঢ় হইতেও শ্রেষ্ঠের লক্ষণ কহিতেছেন (স্বহৃষ্মিত্রা ইত্যাদি ৬৯) অর্থাৎ স্বভাবত যিনি হিতাকাজী ও স্নেহবশে যিনি উপকারী হয়েন ও বৈরী ও উদাসীন এবং মধ্যস্থ ও ভেষের পাত্র ও সম্পৰ্কীয় ও সদাচার ব্যক্তি ও পাপী এ সকলে সমান বুদ্ধি যাহার তিনি সৰ্ব্বোত্তম যোগারূঢ় হয়েন। যেহেতু এ সকল লক্ষণ না মধ্যমে না কনিষ্ঠ ষোগারূঢ়ে প্রাপ্ত হয়।" ( রামমোহন রায় গ্রন্থাবলী ২৯৩-২৯৪)। শঙ্কর-প্রমুখ ব্যাখ্যাকারগণ তিন প্রকার যোগারূঢ়ের উল্লেখ না করিলেও ৬৯ শ্লোকের বিশিষ্যতে শব্দের সর্বাপেক্ষা উত্তম এই অর্থ ধরিয়া যোগান্ধঢ়ের শ্রেণিবিভাগ স্বীকার করিয়াছেন । রামমোহন রায় ৬১ শ্লোকে যুক্ত শব্দকে মধ্যম যোগারূঢ়ের বিশেষণ করিয়াছেন। পাতঞ্চল যোগ সূত্রের ভাষ্যকারগণ যোগমাগী সাধকদিগের মধ্যে উচ্চাধিকারী সাধককে যোগারূঢ় বলেন। "যোগারূঢ়ের’ তাহারা কোন শ্রেণিবিভাগ করেন নাই। ৭, ৮ এবং ৯ শ্লোকে যে-সকল লক্ষণ বলা হইয়াছে তাহা মুক্ত পুরুষের অর্থাৎ সিদ্ধাবস্থার লক্ষণ অতএব তাহা ‘যোগারূঢ়" অবস্থার প্রতি প্রযুক্ত হইতে পারে না। এই জন্যই ৬৮ শ্লোকে সিদ্ধাবস্থায় ‘যোগীর বিশেষণ রূপে যুক্ত শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। যুক্ত' শব্দ যোগারূঢ়ের বিশেষণ নহে । ৬৪ গ্লোকে যোগারূঢ়ের নির্বচন দেওয়া হইয়াছে এবং তৎপরেই ৬৫-৬ শ্লোকে যোগারঢ়ের প্রতি আত্মজ্ঞান লাভের চেষ্টার উপদেশ আছে। যোগান্ধটের শ্রেণিবিভাগ দেখাইতে হইলে মধ্যে এই দুই শ্লোক আসিত না । পুনশ্চ যাহার শীত-গ্রীষ্ম, মান-অপমান সমান হইয়া মৃত্তিকাকাঞ্চনে সমবুদ্ধি হইয়াছে ও যিনি কুটস্থ, বিজিতেন্দ্রিয় ও জ্ঞানবিজ্ঞানতৃপ্তাত্মা বলিয়৷ অভিহিত হইয়াছেন তাহার যে সমাজের বিভিন্ন মন্থয্যের প্রতি সমবুদ্ধির উদয় হয় নাই একথা মনে করিবার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ নাই। ৮ ও ৯ উভয় শ্লোকেই সমবুদ্ধির কথা আছে, অতএব এই দুই শ্লোকে বিভিন্ন অধিকারীর কথা বলা হইতেছে মনে হয় না। শঙ্কর ৬৯ শ্লোকে বিশিষ্যতে স্থানে বিমুচ্যতে এইরূপ পাঠান্তরের উল্লেখ করিয়াছেন। ইহাতেও যোগারূঢ়ের শ্রেণিবিভাগ সমর্থিত হয় না। যষ্ঠ অধ্যায়ে যোগী যোগারূঢ় ও যুক্ত এই কয়টি শব্দের পার্থক্য সৰ্ব্বদা স্মরণ রাখিতে হইবে। যিনি পাতঞ্জল যোগের সাধনা করেন তিনি যোগী ; নিম্ন উচ্চাধিকার ভেদে যোগী আরুরুঙ্গু ও ধোগারূঢ় নামে অভিহিত হন। চিত্তবৃত্তি নিরোধে সফল হইলে সাধক যোগযুক্ত হন অর্থাৎ যোগন্ধপ উপায় তাহার আয়ত্ত হয় ;