পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চায়তের বিচার শ্ৰীব্ৰহ্মানন্দ সেন বাড়িতে সকলের কাছেই আমার জুনর্গম—আমাকে কোন কাজে পাঠাইলে আমি আধ ঘণ্টার কাজে তিন ঘণ্টা ব্যয় করিয়া তবে বাড়ি ফিরি। সেজন্ত আমাকে অনেক গালাগালিও সহ করিতে হয়। তা হউক । কিন্তু বাড়ির বাহির হইলে এক-এক সময়ে পথেঘাটে এমন এক-একটি কৌতুকপ্রদ দৃপ্ত চোখে পড়ে যে, তাহা উপভোগের পর বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া সমবেত সকলের গালাগালিও আমার তখনকার মনের আনন্দ ছাপাইয়া মনের পাতে কোন আঁচড় কাটিতে পারে না। এমনি একটি কৌতুককর ঘটনার কথাই আজ বলিব । তখন বিকাল বেলা । একটা কাজ সারিয়া ভিন্ন গ্রাম হইতে ফিরিতেছি। কিছু দূর আসিয়া দেখি রাস্ত হইতে খানিকটা দূরে একটা খালি জায়গাতে একখানা ছেড়া সামিয়ান টাঙান। তাহার নীচে দুই-চারিজন গ্রামবুদ্ধ বসিয়া রহিয়াছেন। র্তাহাদিগকে ঘিরিয়া সকল বয়সেরই অনেক লোক। এক পাশে একটু তফাতে একটি বৃদ্ধা স্ত্রীলোক ও সাত বৎসরের ছোট একটি মেয়ে বসিয়া । আর এক পাশে একটা খুঁটির সঙ্গে বাধা একটি ছাগল। স্বাভাবিক কৌতুহলবশত আমি রাস্ত ছাড়িয়া সেখানে গিয়া হাজির হইলাম। দেখিলাম গ্রাম্য পঞ্চায়ং বসিয়াছে এক ছাগল-চুরির মামলার বিচার করিতে। আমার বরাত ভাল। মামলার গোড়া হইতেই শুনিবার সুযোগ হইল। ঠিক তখনই বিচার আরম্ভ হইল। একটা স্থবিধামত জায়গা লইয়। চাপিয়া বসিলাম। এ মামলায় বাণী জীবন সুত্রধর এবং বিবাদী অনাথ を設I পঞ্চায়তের মোড়ল বা প্রধান বিচারকর্তা বাদীকে জিজ্ঞাসা করিলেন-ওহে জীবন, এ ছাগল যে তোমার তার প্রমাণ কি ? সাক্ষী-সাৰুদ কিছু আছে ? জীবন বলিল—আজ্ঞে কৰ্ত্ত, সাক্ষী-সাৰুদ থাকবে কি ক'রে ? তার ফুরসং দিল কোথায়? সবে জামতলীর হাট থেকে কিনে এনেছিলাম। ফিরতে সন্ধ্যা হ’ল। বাইরের আঙিনায় বেশ বড় বড় ভাজা দুৰ্ব্ব আছে, চরে খাবে—এই ভেবে সেখানটায় একটা খুটি পুতে বেঁধে দিলাম। সকালবেলায় উঠে দেখি ছাগল নেই। খুঁজতে খুঁজতে এদিকে এসে দেখি অনাথের বাড়ির সামনে আমার ছাগল বাধা আছে । মোড়ল। কি ক’রে চিনলে এ ছাগল তোমার } জীবন। আজ্ঞে ঐ কান দুটো দিয়ে। আমার ছাগল ঐ রকমই ছিল । গোটা শরীরটা কালো আর কান দুটো সাদা । মোড়ল । তোমার ছাগলের যে এই রং ছিল তার প্রমাণ ? জীবন । আজ্ঞে কৰ্ত্তা, এখানে আর প্রমাণ কোথায় পাব ? যার কাছ থেকে কিনেছি সে হয়ত বলতে পারত। কিন্তু তাকে আর এখানে কোথেকে পাব ? আর তার মুখও তো চিনে রাখিনি। যদি আগে জান; থাকৃত যে অনাথ আমার ছাগল চুরি করবে তবে না হয় তার নামধাম জিজ্ঞেস করে রাখতাম । বাদীর বসিবার অনুমতি হইল। এবারে বিবাদীর পালা। মোড়ল বলিলেন--কিহে অনাথ, জীবনের কথা তো শুনলে ? এখন তোমার বক্তব্য কি বল । অনাথ বলিল—আজ্ঞে দেবতা, ওর ছাগল সম্বন্ধে আমি কিছুই জানিনে । এ ছাগল আমার । মোড়ল। এ ছাগল তুমি কোথায় পেলে ? অনাথ । আজ্ঞে কিনেছিলাম। মোড়ল । কতদিন আগে ? অনাথ। এই দু-মাস আগে । মোড়ল । কার কাছ থেকে ? অনাথ । আজ্ঞে দেবতা, গুামবিহারীর কাছ থেকে।