পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৮ বিধবা অমূল্যর মায়ের দিকে তাকাইয়া মোড়ল বলিলেন–কিগো মা ? অনাথের কথা কি ঠিক ? অমূল্যর মা বলিল-ই বাবাঠাকুর । আমার এই বোনবিটি শিশুবয়সে বেশ কালো ছিল । এখন আপনাদের আশীৰ্ব্বাদে ওর এই রং দাড়িয়েছে। মোড়ল। কি ক’রে কালো রং এতটা ফর্সা হ’ল মা ? অমূল্যর মা। কে একজন আমার বোনকে বলেছিল, শ্বেত সৰ্বষে ভেজে কাচা দুধের সঙ্গে বেটে নিয়ে সেটা সমস্ত গায়ে মাখিয়ে বেশ খানিকক্ষণ রাখতে হয় এবং তারপর স্বানের সময়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। এ রকম কিছুদিন মাখলেই গায়ের রং আস্তে-আস্তে ফরসা হয়। আমার বোন তো প্রথমে এ কথা কিছুতেই বিশ্বাস করেনি। শেষে একদিন ভাবল, দিয়েই দেখি না কি হয়। না-হয় ফরসা না-ই বা হ’ল। ক্ষতি তো আর কিছু হবে না এতে। তারপর দিনকতক এই রকম মাখিয়ে মাখিয়েই ন-কি এই রং ইয়েছে। এই সহজ প্রক্রিয়াতে ধে দেহের কালো রং ফরসা হইতে পারে ইহা সকলেরই ধারণার অতীত ছিল। এখন চোখের সাম্নে প্রমাণ পৰ্য্যন্ত উপস্থিত দেখিয়া সকলেরই বিস্ময়ের সীমা রহিল ন, অনাথ কিন্তু এখানেই ক্ষাস্ত রহিল না। বলিল— এ তে সামান্ত পশু ও মানুষ । স্বর্গের যে দেবতা তাদেরও অবধি গায়ের রং বদলায় । স্বয়ং নারায়ণ যে কেই ঠাকুর, তাকেও চেষ্টা-চরিত্তির করে তার কালে৷ অঙ্গ সাদা করতে হয়েছিল । মোড়ল। সে আবার কি হে অনাথ ? তুমি যে রূপকথা ফেদে বসলে ? অনাথ আবার জিভ কাটিল । বলিল-আজ্ঞে দেবতা, কি যে বলেন । আপনারা হচ্ছেন শাস্ত্রের মালিক ! আপনাদিগকে রূপকথা শোনাব আমি ? ৰেষ্ট ঠাকুর কালো ছিলেন বলে রাধা তাকে দেখতে পারতেন না ; এমন কি তাকে কুঞ্জে যেতেও বারণ ক’রে দিয়েছিলেন। তাই কেষ্ট ঠাকুরকে উঠে-পড়ে লাগতে হয়েছিল তার কালো অঙ্গকে সাদা করবার জl a S99āు তাইতেই না তাকে সেই জীবনের অস্ত করে গৌররূপে নূতন জন্ম নিতে হ’ল। এ তে আপনাদের শাস্ত্রেই লেখা আছে । আমি আর এ বিষয়ে কি বলব ? স্বয়ং কথক-ঠাকুর মহাশয় এখানে উপস্থিত আছেন। তিনিই এ বিষয়ে বলতে পারবেন । আহা ! সেবারে যে ঠাকুর-মশায় গামখান গেয়েছিলেন তা এখনও আমার কানে লেগে আছে –সেই ষে ‘রাই কালো ভালবাসে না।’ ভারপর কথক-ঠাকুরকে জোড়হাতে অনুনয়-বিনয় করিয়৷ বলিল—ঠাকুর-মশায়, যদি আর একবার দয়া ক’রে সে গানখানা গান তবে এখানে সকলেই কৃতাৰ্থ হয়ে যায় । এই কথক-ঠাকুরের কথকতায় না কি নাম আছে। এ গ্রামে তিনি এর আগেও একবার আসিয়াছিলেন এবং র্তাহার সাত্বিক ব্যবহারে এবং স্বমিষ্ট কণ্ঠের কথকতায় সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করিয়াছিলেন । এবারে তিন দিন হইল তিনি এখানে আসিয়াছেন। কোন কু লোক সভায় বসিয়া গোপনে রটাইতেছিল, অনাথ না-কি আক্ত সকাল-বেল উঠিয়া দুইটি টাকা চাদরের কোণে বাধিয় লইয়া একেবারে কথক-ঠাকুরের আস্তানায়ু গিয়া হাজির হইয়াছিল এবং টাকা দুইটি ঠাকুরের পায়ের উপর রাখিয়৷ সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া পদধূলি লইয়াছিল। ঠাকুর-মহাশয় খুশী হইয়া বলিয়াছিলেন—“আরে কর কি, কর কি ? অনাথ তাহার উত্তরে বলিয়াছিল—“আঙ্কে দেবতা, আপনাদের মত সাধু-সন্ন্যাসীর পায়েই যদি প্রণাম করতে না পারলাম তবে আমাদের রোজগার কিসের জন্ত ।” তারপর এ-কথা সে-কথায় ঐগৌরাঙ্গ সম্বন্ধে নানা কথা জানিতে চাহিয়া এবং বার-বার উদেশে উাহাকে প্রণাম করিয়া কথক-ঠাকুরকে পটাইয়া ফেলিয়াছিল। তারপর সে কৌশলে পঞ্চায়ভের কথা পাড়িয়া তাহাকে সেখানে উপস্থিত হইবার জন্ত নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিল এবং প্রয়োজন হইলে পঞ্চায়তের সমক্ষে তাহাকে শ্ৰীকৃষ্ণের কালো রং পরিবর্তন করিয়া শ্ৰীগৌরাঙ্গরূপে জন্ম লইবার কথা বলিবার জন্যও রাজা করিয়াছিল। কিন্তু বিবাদী ধে সে নিজেই তাহা বলে নাই। - কখক-ঠাকুরও বোধ হয় ভাবিয়াছিলেন, এ এক রকম