পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ মন নয়। এভাবে যদি এ গ্রামে তাহার খ্যাতির প্রচার হয় এবং ফলে তাহার পপার বাড়ে তাহাতে আপত্তি কি ? হয়ত এই উদ্দেশ্যেই তিনি এই পঞ্চায়তে উপস্থিত ছিলেন । অনাথ অঙ্গুরোধ করিবামাত্র কথক-ঠাকুর মোড়লমহাশয়ের অহুমতির অপেক্ষা না করিয়াই তাহার স্বাভাবিক স্বকণ্ঠে ভাবগদগদম্বরে গান ধরিলেন— কাল অঙ্গ যাবে আমার, রাই তুয়া রূপে গৌর হব । রাধে তোমার হেম কাস্তি সৰ্ব্বাঙ্গে মাখিব ॥ অার এক কথা শোন প্রিয়া, রুক্মিণী মোর বিষ্ণুপ্রিয়, ধরে রবে একাকিনী আমি চলে যাব ৷ যুগধৰ্ম্ম হরিনাম কলিযুগে প্রচারিব, রাধা রাধা রাধা ব’লে প্রেমধন আস্বাদিব, আপনি কাদিয়ে কলির জীবে কাদাব ॥ ভক্তলোকের মুখে এ গান শুনিয়া সকলেরই মন ভক্তিভে পূর্ণ হইল। কাহারও বা চোখ ছলছল করিয়া উঠিল। সবাই কথক-ঠাকুরের মুখের দিকে তাকাইয়া আবিষ্ট চিত্তে নিঃশব্দে বসিয়া রহিল । মোড়লেরও মন ভাবাপ্লুত হইয়াছিল। কিন্তু এ সভায় তিনি বিচারক । তাই তাহাকে জেরা করিতে হইল। বলিলেন, এ গানে তো শ্ৰীকৃষ্ণ রাইয়ের রূপ নিয়ে গৌর হবেন বলা হয়েছে। কিন্তু তিনিই যে গৌর হয়েছিলেন তার প্রমাণ কোথায়, ভাগবতরত্ন-মশায় ? কথক-ঠাকুর বলিলেন - সে কথা শ্ৰীগৌরাঙ্গদেব নিজের মুথেই ব’লে গেছেন । এই বলিয়া তিনি আবার গান ধরিলেন— রাই কালো ভালবাসে না । (আমায়) কালো দেখে বলেছিল কুঞ্জে যেন এস না । রূপের বড় গরব করে রাই, দেখব এবার মন যদি তার পাই, এবার গৌর হয়ে ধরব পায়ে আর তো কালো রইব না। বড় অভিমানী রাই, বাণী ছেড়ে কেঁদে ফিরি তাই, যোগ-বেশে ফিরব দেশে ঘরে তো মন বসে না। গান শেষ হইল। শ্রোতৃমণ্ডলী নীরব। কথক-ঠাকুর ۹۹-- 8 পঞ্চায়ভের বিচার శిeS বলিলেন,—শুধু তাই নয়। যে-সব ভক্তের কাছে তিনি র্তার স্বরূপ প্রকটিত করেছেন তারাও এ বিষয়ে ব’লে গেছেন।—বলিয়া তিনি তৃতীয় বার গান ধরিলেন । এসেছে ব্রজের ফঁাকা কাল সখা দেথবি আয় তোদের এই নদীয়ায় । র্তার রং ফিরেছে ঢং ফিরেছে কালো এখন চেনা দায় ॥ র্তার কাল অঙ্গ নাই রাই অঙ্গ সঙ্গ পেয়ে গৌর হয়েছে তাই সেথাকার ব্রজের খেলা খেলতে এসেছে হেথায় ॥ প্রেমে ঋণী হয়েছে, ( তারা তাই ) হাতের বঁাশী কেড়ে নিয়ে বিদায় দিয়েছে, রাধানাম সাধবে কিসে ( বঁাশী নাই সাধবে কিসে ) তাইতে মুখে গুণ গায় ॥ ব্রজের কুল-ললনা, বঁাশী শুনে ভুলত কুলের গৌরব রাগত না, সেই রাধার সাধের নাগর ( সে রাধার প্রেমের সাগর ) ( সে রাধার রসের সাগর ) এখন গেীর নাম ধরায় । কাঙাল বিশ্বরূপে কয়, শুধু রাই-অঙ্গ সঙ্গ পেয়ে গৌর হলে নয়, ত্রিভুবন উদ্ধারিলে, ( জনে জনে উদ্ধারিলে ) (আচণ্ডালে উদ্ধারিলে ) তবেই খালাস ঋণের দায় ॥ মৃতক্ষণ গান হইল ততক্ষণ পঞ্চায়ত বিচারসভার পরিবর্তে হরিসভায় পরিণত হইল। চারিদিকে ভক্তমণ্ডলীর হরিবোল-ধ্বনির মধ্যে গান শেষ হইল । তারপর অনেকক্ষণ ধরিয়া সভা নীরব । মোড়ল-মহাশয় বুদ্ধ ব্রাহ্মণ। তাই কথক-ঠাকুরের গান তাহাকে বেশী করিয়াই অভিভূত করিয়াছিল । খানিকক্ষণ পরে ভাবের ঘোর কাটিয়া গেলে তিনি পঞ্চায়তের অন্য চারিজন বিচারকের দিকে চাহিয়া বলিলেন—বাদী-বিবাদীর সওয়াল-জবাব শেষ হইল। এবারে আমাদের রায় দিবার পালা। আপনারা সবাই শুনলেন, বাদী এই ছাগলকে নিজের ব’লে প্রমাণ করবার মত কোন সাক্ষী-সাবুদই উপস্থিত করতে পারেনি। পক্ষান্তরে বিবাদী এই ছাগল নিজের ব’লে প্রমাণ করবার জন্ত যথেষ্ট সাক্ষী উপস্থিত করেছে। খামবিহারী, অনিল