ধবলগিরি নিখিলনাথ রায় হিমালয়ের তন্ত্ৰ তুষারাবৃত ধবলগিরি শৃঙ্গের কথা অনেকেই অবগত আছেন। কিন্তু আমরা যে ধবলগিরির কথা ললিতেছি, তাহা উড়িষ্যার একটি নাতু্যচ্চ পৰ্ব্বত। এই ধবলগিরি সাধারণত: ধৌলি পাহাড় নামেই প্রসিদ্ধ। উড়িষ্যার অন্যতম প্রধান তীর্থ ভূবনেশ্বর যে পৰ্ব্বতমালায় বষ্টিত, তাহা চারিটি প্রধান নামে অভিহিত হইয়। থাকে ; উদয়গিরি, খগুগিরি, নীলগিরি ও ধবলগিরি এই চারি নামে তাহাদিগকে নির্দেশ করা হয়। ইহাদের মধ্যে উদয়গিরি, খণ্ডগিরি এবং ধবলগিরি নানা প্রকার প্রাচীন তথ্যে পরিপূর্ণ, নীলগিরি সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না। বর্তমান প্রবন্ধে আমরা ধবলগিরি বা ধৌলীর কতক পরিচয় দিবার চেষ্টা করিতেছি । ভূবনেশ্বর তীর্থ এককালে থগুগিরি হইতে আরম্ভ করিয়া ধৌলি পৰ্য্যস্ত বিস্তৃত ছিল— “খণ্ডাচলং সমাসাদ্য যত্রাস্তে কুণ্ডলেশ্বরঃ । আসাদ্য বলহা দেবীং বহিরঙ্গেশ্বরাবধি ।” এই বহিরজেশ্বর ধৌলি পৰ্ব্বতেই অবস্থিত বলিয়। কথিত হইয়া থাকে। স্বতরাং ধৌলি এককালে ভূবনেশ্বর তীর্গের অন্তর্গতই ছিল। কিন্তু ভূবনেশ্বর তীর্থ প্রসিদ্ধিলাভ করিবার বহু পূৰ্ব্ব হইতে ধৌলি যে প্রসিদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল সে-কথা জানা যায়। মহাভারতের বনপর্কে পাগুবদিগের তীর্থযাত্রায় কলিঙ্গ দেশে বৈতরণী পার হইয়া স্বস্তুবন ও সাগরোখিত বিষ্ণুবেদীতে গমনের কথা আছে। এই স্বয়স্কৃবন ভুবনেশ্বর ও সাগরোখিত বেদী পুরীক্ষেত্র বলিয়া অনেকে মনে করেন। কোন সময় হইতে ভূবনেশ্বর প্রসিদ্ধ হইয়া উঠে তাহ নির্ণয় করা ছকঠিন, কিন্তু কোন সময়ে ধৌলি প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল তাহা বলিতে পারা যায়। মৌর্য্য-সম্রাট প্রিয়দর্শী অশোক বলিকে প্রসিদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। ধোলি পৰ্ব্বতগাত্রে :খাদিত তাহার অনুশাসন তাহাই জানাইয়া দিতেছে। আমরা ধৌলির অবস্থানের ও ভাহার বর্তমান অবস্থার কথা বলিয়া তাহার পুরাতত্ত্ব সম্বন্ধে আলোচনার চেষ্টা করিব । ধবলগিরি বা ধৌলি পাহাড় উড়িষ্যার পুরী জেলার ভূবনেশ্বর হইতে মূনাধিক তিন ক্রোশ দক্ষিণ-পূৰ্ব্বে দয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এই দয়া নদীর সহিত ভাগবী নদী আসিয়া মিশিয়াছে। ভূবনেশ্বর হইতে পুরী রোড ধরিয়া পূৰ্ব্বমুখে আসিয়া দয়া নদী পার হইয়া ধৌলি যাইতে হয়। পুরী রোড দয়া নদী অতিক্রম করিয়া চলিয়া গিয়াছে । উক্ত রোড হইতে দক্ষিণ দিকে নামিয়া দক্ষিণপশ্চিম দিকে ধৌলি গ্রাম হুইয়া পাহাড়ে যাওয়া যায়। ধৌলি পাহাড়ের উত্তর-পূৰ্ব্বে ধৌলি গ্রাম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে কৌশল্যাপুর। ধোলি পাহাড় তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত, উত্তর দিকের শ্রেণীই সৰ্ব্বোচ্চ। পাহাড়ে উঠিয়া দক্ষিণপূৰ্ব্ব দিকে বেত-বন, সেই বেত-বনের মধ্য দিয়া পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে গুহাগাত্রে অশোকের খোদিত লিপি দেখিতে পাওয়া যায়। গুহাগাত্র মন্ত্ৰণ করিয়! গিরিলিপি তিনটি সারিতে লিখিত হইয়াছে। পৰ্ব্বতের যে-ভাগে অশোক-লিপি থোদিত, তাহাকে অশ্বথামা পৰ্ব্বত বলে বলিয়া মিষ্টার কিটো উল্লেখ করিয়াছেন । এই কিট্রোই প্রথমে ধৌলির অশোক-লিপির আবিষ্কার করেন। ও ৩৮ খৃঃ অব্দে তিনি দুই বার ধৌলিতে গমন করিয়াছিলেন, ধৌলি পাহাড়ে তখন ভল্লুকাদি হিংস্র জন্তু বাস করিত। প্রথমবার তিনি একটি ভল্লুকী শিকার করেন, সে-বার তাহীর দুইটি শাবক পলাইয়া যায় ; দ্বিতীয় বারে তিনি সেই শাবক দুইটিকে বেশ বড় দেখিয়াছিলেন । এক্ষণে ধোলি পাহাড়ে সেরূপ ভাবে কোন হিংস্ৰ জন্তু বাস করে বলিয়া মনে হয় না, সময়ে সময়ে তাহাদের আগমন হইতে পারে। যে-গুহাগাত্রে অশোক-লিপি খোদিত, তাহার মাথা ভাঙিয়া যাওয়ায় এক্ষণে থাম দিয়া ছাদ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। গুহার উপরে একটি হস্তীর অৰ্দ্ধাঙ্গ רכלילצ
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।