পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ মাতৃ-খণ S్చరిని মিনিট দুই সে একেবারে স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া হিল। তাহার পর গলা পরিষ্কার করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার মা ফিরলেন কখন ?” মিহির বলিল, ‘আজ সকালে । কাল বিকেলে হঠাৎ টেলিগ্রাম এসে হাজির, তিনি ষ্টার্ট করেছেন। বাবা বারণ করবারও আর সময় পেলেন না ।” প্রতাপ জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন আছেন তিনি ?” মিহির বলিল, “ভালই ত দেখলাম। আরও কিছু দন থেকে এলে ভাল ক’রেই সেরে আসতেন । কি য র্তার জরুরী বিজনেস পড়ল, অমনি সাততাড়াতাড়ি মলে এলেন ৷” অন্য সময় হইলে মিহিরের কাণ্ড দেখিয়া প্রতাপের রাসি পাইত। কিন্তু আজ আর তাহার হাসিবার ক্ষমতা ছল না। জ্ঞানদার আকস্মিক প্রত্যাবৰ্ত্তন, আর iামিনীর কাতর অশ্লাবিত মুখ, দ্ব-ই সে মিলাইয়৷ দখিল। বুঝিল ভবিষ্যৎ তাহার অন্ধকার, ঘোর নরাপ্ত ও দুঃখে পূর্ণ। সে চিরদিন সংগ্রামে অভ্যস্ত, সে হয়ত এই অন্ধকারের ভিতর দিয়াও পথ করিয়া চলিবার চেষ্টা করিতে পারিত, কিন্তু যামিনী পারিবে কি ? প্রভাপ মনে কোনো আশার বাণী শুনিতে পাইল না। মিহিরকে পড়াইতে আর তাহার মন উঠিল না। গার কট দিন বা ? মাস শেষ হইতে আর চার-পাচ দণ আছে, এই ক'ট দিনই তাহার মেয়াদ। এ বাড়ীর ৰাঁর যে তাহার নিকট রুদ্ধ হইতে চলিয়াছে, তাহা প্রতাপ বুঝিতেই পারিতেছিল। কি উপায়ে ভদ্রত বজায় রাখিয়া চট্‌ করিয়া বিদায় লওয়া যায় সেইটুকু ভাবিয়া স্থির করিতে পারিলেই হয়। ভদ্রতা করিবারও প্রয়োজন হইত না, যদি না যামিনী ইহার ভিভর জড়িত থাকিত। বাড়ীর মেয়ের সঙ্গে প্রেমে পড়িয়াছে বলিয়৷ ছেলের মাষ্টারকে বিদায় করিয়া দেওয়া হইল, এ-কথা নিতান্ত প্রকাশ করা চলে না, তাই অন্য একটা ছুতা দেখিতে হুইবে। মিহিরকে ইংরেজী তর্জমা করিতে দিয়া প্রতাপ বলিয়া আকাশ-পাতাল ভাবিতে লাগিল। জ্ঞানদা ফিরিয়া আসিয়াছেন এবং যামিনী ও প্রতাপের ভালবাসার কথা জানিয়াছেন ইহাও নিশ্চিত, না হইলে যামিনী কাদিয়া-কাটিয়া আমন চেহাস্থা করিবে কেন ? এখন প্রতাপের কি করা কৰ্ত্তব্য ? জ্ঞানদাকেই তাহার ভাগ্যনিয়ন্ত্রী হইতে দেওয়া, না নিজে পুরুষের মত সংগ্রাম করিয়া দেখা ? বিনা সংগ্রামে সে যামিনীকে লাভ করিতে পারিবে না তাহা ত জানাই ছিল, স্বতরাং এখন পশ্চাৎপদ হইলে চলিবে না। কিন্তু কিছু করিবার আগে যামিনীর মন ভাল করিয়া জানা প্রয়োজন। সে কি এই কণ্টকাকুল পথে প্রতাপের হাত ধরিয়া বাহির হইতে রাজী হুইবে ? প্রতাপের মন সায় দিল না। যামিনী যেমন ফুলের মত দেখিতে, তেমনই ফুলের মত কোমল । সংসারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়িবার শক্তি তাহার ভিতর কোথায় ? পিতামাত তাহাকে যে পথে চালাইবেন, সেই পথেই সে চলিবে । হৃদয় হয়ত তাহাব ক্ষতবিক্ষত হইয়া যাইবে, জীবনের সব আশা সব আলো নিবিয়া যাইবে, কিন্তু মুখ ফুটিয়া সে কিছু জানাইতে পরিবে না, কোনো প্রতিবাদ করিতে পারিবে না । সে যেন উপকথার বন্দিনী রাজকন্যা, লৌহকারা ভাঙিয়া তাহাকে বাহুবলে হরণ করিয়া আনিলেই এক তাহাকে অকরুণ ভাগ্যের হাত হইতে রক্ষা করা যায়। কিন্তু সে ক্ষমত, সহায়ুসম্পদহীন প্রতাপের কোথায় ? মিহিরকে পড়ান কোনোগতিকে শেষ হইল, প্রতাপ উঠিয় পড়িল। বাহির হইরা আবার যামিনীর জানালার দিকে তাকাইল, কেহ কোথাও নাই। বাড়ী ফিরিতে ইচ্ছা করিল না। ময়দানে গিয়া একটা গাছের তলায় চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। ঠিক এইখানে বসিয়াই কয়েকদিন আগে হতভাগ্য প্রতাপ কি অমরাবতীর স্বপ্নই না দেখিয়াছে। জগতে কিছু তাহার অসাধ্য বোধ হয় নাই, কোন ঐন্দ্রজালিকের মায়াদণ্ডের স্পর্শে ধরণী তাহার নিকট আশ্চৰ্য্য নূতন রূপ ধরিয়া উঠিয়াছিল। আজ সে ঘোর আবার হঠাৎ কাটিয়া গেল, নিজেকে পূর্বের রূপেই সে আবার দেখিতে পাইল । দরিদ্র, হতভাগ্য, সহায়হীন প্রতাপ। জীবনে