পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१७ SSD9āు মুহূৰ্ত্ত বইয়ের পাতায় মন বসে নাই, বাড়ী ফিরিয়াও শান্তি পাইতেছে না। ইচ্ছা করিতেছে, এখনই আবার কোনও একদিকে ছুটিয়া বাহির হইয়া পড়ে, কিন্তু যাইবার মত জায়গাও কি ছাই পুথিবীতে কোথাও একটা उषitछ् । তাহার অপরাধের মধ্যে কাল সমস্ত রাত নানা দুশ্চিস্তায় জাগিয়া কাটাইয়া প্রভাতে উঠিয়া মায়ের কাছে পিতার সংবাদ লইতে গিয়াছিল। “তোমার বাবা ভাল আছেন," কোনও প্রকারে এই কথা-কয়টি মাত্র বলিয়া মা এমন মুখ করিয়া রহিলেন, যে, আর কিছু তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে তাহাব সাহসেই কুলাইল না। সমস্ত দিন তাহার মুখের সেই কি-এক অদ্ভুত-ধরণের বঠোরতার ছাপকে সে নিজের মনে বহিয়া বেড়াইয়াছে। মায়ের ভ্র কুটিকুটিল কালো চোখের অন্ধকার তাহার চিত্তাকাশ ব্যাপিয়া কোন অশুভ ছায় বিস্তার করিয়াছে, তাহার আসল রূপটাকে সে জানে না বলিয়াই তাহা আরও বেশী ভয়াবহ। কি হয় যদি সমস্ত নীরবতার আড়াল ভাঙিয়া দিয়া তাহার মা তাহাকে অনাবৃত নিৰ্মম সত্য যাহা তাহার সঙ্গে মুখোমুখি করিতে দেন ? পৃথিবীতে এমন কি অকল্যাণ থাকা সম্ভব, এই কয়দিন কল্পনায় বারে বারে সাহসের সঙ্গে যাহার সম্মুখীন তাহাকে না হইতে হইয়াছে ? যে-শাস্তি নীরবে দিনের পর দিন তাহাকে বহন করিয়া চলিতে হইতেছে, তাহা হইতে বেশী কঠোর আর কি আধাত পুথিবীর মানুষের মুখের দুইটি কথা হইতে সে পাইতে পারে ? পারে না সে পিতার কাছে ছটিয়া গিয়া এই যন্ত্রণার অবসান করিতে ? তিনি কখনও মিথ্যা বলিবেন না, ঐঞ্জিলার দিন কত দুঃখে কাটিতেছে তাহা জানিতে পারিলে সত্য-গোপন করিতেও চাহিবেন না।--অন্ততঃপক্ষে তাহাকে চিঠিও একটা লেখা চলে ? তা-ই সে লিখিবে, এবং পিতারই নিকট হইতে সত্য যাহা তাহা সে জানিয়া লইবে ।--কিন্তু দেশ ছাড়িয়া আসিবার পূৰ্ব্বে কয়েক দিন ধরিয়া পিতার পলাইয়া বেড়ানো মনে পড়িল । চকিতে দু-একবার তখন তাহার ভীত-বিষণ্ণ মুখ সে ঐজিলা না বুঝিয়া অসতর্কে আরও মর্খাম্ভিক কোনও দুঃখ হয়ত র্তাহাকে দিয়া বসিবে। যে-দেবতাকে শৈশব হইতে পিতার আসনে স্থাপন করিয়া সে পুজা করিতে শিখিয়াছিল, উহাকে ডাকিয়া বলিল,আমার এই নিষ্কলুষ জীবনে এত দুঃখ আমার পাওনা হইতে পারে না। আপনার জন পুথিবীতে আমার ত বেশী নাই, আমার স্নেহময় পিতাকে তুমি আমার নিকট হইতে ছিনাইয়া লইও না। হেমবালা ছতলায় তাহার ঘরে বসিয়া সেলাই করিতেছিলেন। মন্দিরা তাহার পাশে বসিয়া পরিত্যক্ত কাপড়ের ছাট সংগ্ৰহ করিয়া স্বভদ্রের কাছ হইতে পাওয়া তাহার নূতন পুতুলটিকে নানা বিচিত্র বেশে সাজাইতেছিল। অন্যদিন এমন সময় ঐন্দ্রিলা একবার আসিয়া অন্ততঃ মায়ের খবর লইয়া যায়, আজ সন্ধ্যা অবধি সে আসিল না দেখিয়া তিনি নিজেই ধীরপদে একবার তেভলায় আসিলেন। বলিবার মত কথা কিছু ছিল ন', বলিলেন, “বীণাকে একটু না-হয় গিয়ে সাহায্যই কৰু ইলু। বেচারী সারাটা বিকেল ঠাকুরের সঙ্গে আগুনের অঁাচে পুড়ছে।” ঐন্দ্রিলা বলিল, "ঘাচ্ছি মা," কিন্তু গেল না। ঘরের কাজ যাহা-কিছু প্রয়োজন হইলে বীণাই করিত, হেমবালা মন্দিরাকে দেখিতেন, তিনি যখন ছিলেন না আয় দেখিত, ঐঞ্জিলা পারতপক্ষে কোনও-কিছুতে হাত দ্বিত না। পারিতও না, তাহার ভালও লাগিত না। বীণা সুবিধা পাইলে তাহাকে কথা শোনাইতে ছাড়িত না বটে, কিন্তু আসলে দেও ঐজিলাকে সহজে কিছু করিতে দিত না । এই লইয়। ঐন্দ্রিলার অসাক্ষাতে হেমবালার সঙ্গে সে ঝগড়া করিত। বীণা বলিত, “আমরা যখন কলেজে পড়তাম তখন আমরাই কিছু কি কোনোদিন করেছি ? কলেজের পড়া করে আবার নাকি কিছু করা যায়।” হেমবালা বলিতেন, “তা যদি না যায় বাছ, ত এরপর পড়াশোনা চুকলে, ঘরসংসার হলে তখন নিজের ঘরের কাজ নিজে গুছিয়ে করবে না ত কি পাড়ার লোকে এসে ক'রে দিয়ে যাবে ?"