পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ ঐন্দ্রিলাকে কলিকাতায় পড়িতে পাঠাইয়াছিলেন, বীণার সে-কথা অজানা ছিল না, একটু বিস্থিত হইয়া বলিত, “এত বড় জমিদারের ঘরের মেয়ে, ওর ভাবনা কি পিসীমা, ; একটা বড়লোক জামাই ধ’রে বিয়ে দিয়ে দিও।” হেমবালা বলিতেন, “তা তোমরা দিতে দেবে কি-না বাছা, আমাদের কথায় এ-কালে আর কিছু হবার জে৷ নেই। কবে কা’র পেছনে ছুট দিয়ে কোন খোলার ঘরে গিয়ে উঠবে, আমরা হয়ত টেরও পাব না তাছাড়া ও যতবড় জমিদারের মেয়েই হোক, ওর বিয়েতে একটি টাকাও আমি খসাব না, তা ঠিকই ক’রে রেখেছি।” এইখানটায় বীণা হঠাৎ চুপ করিয়া যাইত। নীচে হইতে বীণার গলা শোনা গেল, ইলুকে আসতে বল, খাবার তৈরি হয়েছে ।” হেমবালা বলিলেন, “শুনছিস ?” ঐঞ্জিলা শুনিল কি-না বোঝা গেল না । তাহদের বাড়ীর সম্মুখে লাল স্বরকির পথটা যেখানে দূরে মাঠের মাঝখানে বড় রাস্তার সঙ্গে গিয়া মিলিয়াছে, সেইদিকে তাকাইয়া সে হঠাৎ কোন অব্যক্ত আবেগে শিহরিয়া উঠিল। প্রথমে মনে হইল, ভুল দেখিয়াছে, কিন্তু ক্রমে আর সন্দেহ রহিল না। দূরের মাস্থ্যটি একটু একটু করিয়া কাছে আসিতে লাগিল। ঐন্দ্রিলা বুঝিল, একাগ্র প্রখর দৃষ্টিতে সে তাহাকেই দেখিতেছে। তাহার সেদৃষ্টিকে সহ করাও যায় না অথচ সে দৃষ্টির দিক্ হইতে চোখ ফিরাইয়া লওয়াও অসাধ্য। সে কি তাহাদেরই বাড়ীতে আসিতেছে ? তাহাকে ত কেহ এ বাড়ীতে আসিতে ডাকে নাই ? শুষ্ক চোখমুখ, ধূলিধূসরিত পা, রুক্ষ অসম্ভৃত চুল, এ তাহার কি মুঠি ] কি সে চায় ? কি তাহার এই দৃষ্টির অর্থ ? ঐন্দ্রিলার কেমন ভয় ভয় করিতে লাগিল । হেমবালা আবার ডাকিলেন, “কি হ’ল তোর ইলু ?” “এই যে যাচ্ছি, বলিয়া একঝটকায় মুখ ফিরাইয়া লইয়া কম্পিত দ্রুতপদে ঐজিল নীচে নামিয়া গেল। বীণাকে | কিছু বলিল না, কিন্তু ইহার পর বহুক্ষণ তাহার বুক দুরু “পিসীমা, | ছক্ল করিয়া কাপিতে লাগিল । অজয়কে যতদূর হইতে দেখিয় ঐজিলা চিনিতে श्रृंखल ՀԳԳ পারিয়াছিল, ঐন্দ্রিলাকে ততদূর হইতে অজয় চিনিতে পারে নাই । তাহার কারণ অজয় চলিতেছিল এবং চলমান মানুষকে চেনা সহজ। ঐন্দ্রিলা একে ছিল দাড়াইয়া, তাহার উপর অজয়ের ধারণ খানিকটা দূর হইতে প্রায় সব বাঙালীর মেয়েরাই দেখিতে একরকম। তাছার একই রকম করিয়া চুল বাধে, একই ধরণে শাড়ী ঘুরাইয়া পরে এবং একই ভঙ্গিতে প্রায় দাড়ায়। অজয় জানিত ঐন্দ্রিলার বালিগঞ্জের এই দিকৃটাতেই কোথাও থাকে। প্রথমে ভাবিয়াছিল ঐন্দ্রিলা, তারপর ভাবিয়াছিল আর কেহ, শেষে ভাবিয়াছিল বীণ এবং সাহসে ভর করিয়া অগ্রসর হইতেছিল। কিন্তু নিঃসনোেহ ভাবে ঐজিলাকে চিনিতে পার মাত্র তাহার আর সম্মথে চলিতে পা উঠে নাই । আজও প্রায় সমস্ত দিন নিজেকে ভুলিবার চেষ্টায় পথে পথে সে ঘুরিয়াছে, তাহার উপর এই আকস্মিক ভাবাবেগের আঘাতে তাহার দেহ অবশ হইয়া আসিতেছিল। বুকের মধ্যে দারুণ শুষ্কত, নাক জলিতেছে, নিঃশ্বাস দ্রুত পড়িতেছে, এমনই অবস্থায় সে বালিগঞ্জের রেলষ্টেশনে একটা বেঞ্চিতে আসিয়া বসিল। গাড়ীর দেরী ছিল, দুই করতলে মুখ ঢাকিয়া সে তাহার ক্লান্ত দেহনন-ইঞ্জিয়কে একটুখানি বিশ্রাম দিবার ব্যর্থচেষ্টা করিতে লাগিল । ঐন্দ্রিলার পাওয়া শেষ হইতেই স্বলতা আসিয়া পৌছিলেন। সোজা খাবার ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, “সব শেষ করেছ, না আছে কিছু ?” "ওম, সব শেষ হবে কি ?” বলিয়া বীণ। তাড়াতাড়ি এক রেকাবি ভরিয়া খাবার সাঙ্গাইয় তাহার সম্মুখে রাখিল । স্থলত বসিয়া ছিলেন, উঠিয়া পড়িয়া বলিলেন, “দেখ বাণি, তুই রোজরোজ আমায় এইরকম অপমান করে অপমান করবি ?” ঐন্দ্রিল হাসিয়া উঠিল । বীণা বলিল, “সে কি, অপমান আবার কখন কবুলাম ?” “আমি কি এতগুলো খাই ?” “বেণী খাওয়াটা বুঝি ভারি অসম্মানের কথা ?” _ “তা বই কি, এরিউক্ৰাটুরা বেশী খায় না, বলিয়া