পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१४~ ફેંક স্বলতা প্রায় এক নিঃশ্বাসে থালাভরা থাবার শেষ করিলেন। বলিলেন, “এ মালপো বীণার হাতের তৈরি ; মুখে দিয়েই তা বুঝতে পেরেছি।” ঐন্দ্রিলা অন্তমনস্ক হইয়া দাড়াইয়াছিল, স্থলভা তাহাকে হুকুম করিলেন, “ই ক’রে চেয়ে রয়েছিল কি ? কারুকে কোনোদিন থেতে দেখিসনি নাকি ? দে, চী ঢেলে দে।” চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে কহিলেন, “হ্য। রে বাণি, অজয়বাবু কি একলা এসেছিলেন ? কতক্ষণ ছিলেন ?” ৰীণা নিজের উদ্যত পেয়ালা ঠোটের কাছ হইতে নামাইয়া বলিল, “কে, অজয়বাৰু? কই, তিনি ত আসেন নি ?” স্বলতা বলিলেন, “বা রে, আমি পথে আসতে স্পষ্ট দেখলাম, তোদের বাড়ীর দিকৃ থেকে এসে বড় রাস্তায় পড়লেন, ভুল হবার ত কথা নয়। রসিকতা করছি { বুঝি ?” বীণা ব্যগ্রত লুকাইবার কিছুমাত্র চেষ্টা না করিয়াই বলিল, “ন, স্বলতাদি, না। কখন দেখলে ?” “এই ত কয়েক মিনিট আগে ।” বীণ। চঞ্চল হইয়া উঠিল, তবু বলিল, “রসিকতটা তোমার দিক্‌ থেকে হচ্ছে বুঝি ?” মূলত বলিলেন, "ভাল জাল, এত লোক থাকতে অজয় বাবুকে নিয়ে হঠাৎ রসিকতা করতে যাব কেন।” ঐন্দ্রিলা সচরাচর চা থায় না, এক পেয়ালা ঢালিয়া লইয়া বসিল। বীণা বলিল, “ইলু, তুই ভ বাইরে ছিলি, জানিস কিছু ?” ঐন্দ্রিলা বলিল, “অজয়বাবুরই মত একজনকে মনে হল - বীণ কহিল, “আমাদের বাড়ীর দিকে আসতে দেখেছিলি ?” “এই দিবেই ত আসছিলেন—” “আমায় আগে বলিসনি কেন ?” বলিয়া বীণা উঠিয়া পড়িয়া ঝি-চাকর সব ক'জনকে ডাকিয়া একসঙ্গে S99శు জড় করিল। সকলকে বারবার জেরা করা সত্ত্বেও কেহ স্বীকার করিল না, যে আজিকার দিনমানের মধ্যে দিদিমণিদের খোজ কেহ আসিয়া করিয়াছে। বীণার তৰু দৃঢ় বিশ্বাস হইল, নীচে দারোয়ান বেহার কাহারও সাড়া না পাইয়া অজয় ফিরিয়া গিয়াছে। দুঃথে অপমানে তাহার গলায় দড়ি দিয়া মরিতে ইচ্ছা করিতে লাগিল। কি মনে করিয়াছে ভদ্রলোক ? সব হইতে তাহার বেশী রাগ হইতে লাগিল ঐন্দ্রিলার উপর । অজয় আসিতেছে দেখিয়া তারপর একবার খোজ লইতে হয় সে ফিরিয়া গেল কি না। সত্যসত্যই সে যখন আসিল না দেখিল, তখনও কি সেকথা একবার মনে হইতে নাই ? কিন্তু ঐন্দ্রিলাকে মুখে সে কিছুই বলিল না। তাড়াতাড়ি মুখহাত ধুইয়া কাপড় বদলাইয়া স্বলতার সঙ্গে বাহির হইয়া গেল । তাহারা চলিয়া যাওয়ার পর ঐন্দ্রিল সেই যে ভেতলার বারানায় তাহার আগেকার জায়গাটিতে আসিয় দাড়াইল, শীঘ্র সেখান হইতে আর যে সে নড়িবে এমন ভরসা রছিল না। অজয় সভাই ফিরিয়া গিয়াছে। অনাহূত আসিয়াছিল, ঐন্দ্রিলা তাহাকে দেখিয়াও সরিয়া চলিখ গিয়াছে। চাকরটাকে পাঠাইয়াও তাহাকে ভিতরে আহবান করে নাই । তাহার আজন্মের সংঙ্গার-বহির্ভূত এ কি নিদারুণ অশিষ্টাচার সে আজ করিল ? ইহার কি প্রয়োজন ছিল ? নিজের ব্যবহার ভাবিয়া নিজেই সে এখন অবাকৃ হইয়া গেল । যাহার সঙ্গে একদিন পূৰ্ব্বে পর্য্যন্ত কোনও সম্পর্কই তাছার ছিল না, আজ কুত-অপরাধের অনুশোচনার সঙ্গে অলক্ষ্যে মিলিয়া গিয়া হৃদয়ের মধ্যে অত্যন্ত বড় হইয়া লে দেখা দিল । অজয় যে এ-জীবনে তাহার এই অনিচ্ছিত অপরাধকে কোনওদিন ক্ষমা করিবে না, ইহা মনে করিয়া তাহার বুকের ভিতরটা কেমন একরকম করিতে লাগিল। কোনও কিছুতেই খুব বেণী অধীর হওয়া তাহার স্বভাব নহে, অন্ধকারে বাহিরে দূরে মাঠের দিকে নিৰ্ণিমেয-নেত্ৰে চাহিয়া চিত্ৰাপিতের মত সে দাড়াইয়৷ রহিল । ক্রমশঃ