পারস্য-ভ্রমণ _ শ্ৰীকেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় এদেশে আসবার আগেই এখানকার অনেক বিষয়ের সম্বন্ধে খুব কৌতুহল ছিল। দেশটা কি রকম, এখানকার লোকজনই বা কেমন, তাদের আচার-ব্যবহার ধরণধারণ এসবই বা কি রকম ? এদের মধ্যে ইয়োরোপীয়দের সঙ্গে সাদৃপ্ত দেখতে পাব, না আমাদের দেশের নকল মোগল, পারসীক ও তুর্কীদেরই অতি উৎকট "ডবল ডিষ্টিল্ড" সংস্করণ পাব ? ইংরেজী ভাষার মারফৎ এদের সাহিত্যের যেটুকু পরিচয় পেয়েছিলাম তাহাতে ত কয়েকটি তৃষ্ণান্ত দার্শনিকের মায়াবাদ-কিংবা অন্যদিকে ঘোরতর বস্তুতন্ত্র—এবং উন্মত্ত প্রেমিকের দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর বিশেষ কিছু পাইনি। অবশ্ব র্যাদের পারসী ভাষায় এবং তত্ত্বে জ্ঞান আছে ব’লে শুনেছিলাম তাদের কাছে এই সবের অন্য অর্থও পেয়েছিলাম এবং সেই টাকার সাহায্যে অনুপম এক মায়াপুরীর একটি আবছায়া ভাবও দেখতে পেয়েছিলাম। তবে নিজের দেশের সম্বন্ধে বিদেশীদের বর্ণন, মতামত এবং ভালমন্দ দুই রকমই টাকাটিপ্পনী পড়ে এটা বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, আসল পারস্ত—আসল ভারতবর্ষের মতই—ইংরেজী বইয়ের পারস্ত থেকে অন্যরকম কিছু একটা হবে । পশ্চিম দেশে এখন বিশেষজ্ঞের যুগ চলেছে, কাজেই তাদের বর্ণনায় প্রাচ্যজগতের মধ্যে হয় বিশেষভাবে দোষ দেখান আছে কিংবা বিশেষভাবে গুণ দেখান আছে, দুইয়ের মাঝামাঝি কিছু লেখা তাদের ধাতে আসে না। সাক্ষাৎ পরিচয়ে চোখে দেখা পারস্তে বই-পড়া জিনিষ থেকে অনেক প্রভেদ দেখা গেল। তবে এখানেই বলে রাখা ভাল যে, দু-মাস মায় দেশ দেখে তার সমস্ত বিষয়ে সৰ্ব্বঙ্গের মত সঠিক খবর দেওয়া ইংরেজ বা আমেরিকান ভবঘুরে ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব নয় এবং উক্ত মহাপুরুষদের খবর যে কতটা খাটি হয় তাও এখন অনেকেই জানেন। সুতরাং এই বৃত্তাস্তে যা লেখা আছে সেটার যাচাই পাঠক ঐ হিসাবেই করবেন। যাই হোক, প্রথমে এদেশের লোকের কথাই বলা যাক। এদেশটার অধিকাংশ লোকই আমাদের দেশের মত নুতন পারস্তের সেনানায়ক অতি দরিদ্র, কায়ক্লেশে কঠোর পরিশ্রমের ফলে বেঁচে আছে মাত্র। অন্যদিকে খুব অল্পসংখ্যক এক দল আছেন যারা খুবই ধনী—আমাদের দেশের রাজা-মহারাজা, জমিদারশ্রেষ্ঠদের মত—যাদের ঐশ্বর্ঘ্য বিদেশীরও চোখ ঝলসাইয়া দেয়। মৃত্তন আমলে অনেকেরই অবস্থার হেরফের হচ্ছে, কিন্তু ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ সেই রকমই এখনও রয়েছে, খাটি মধ্যবিত্ত আমাদের দেশের মতই এদেশেও নেই বললেই চলে। তবে এদেশে
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।