জড়বুদ্ধি ছেলেমেয়েদের প্রতি আমাদের কর্তব্য ঐগিরিজাভূষণ মুখোপাধ্যায় অতি আদিম কাল হইতেই মনুষ্যসমাজের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে জড়বুদ্ধি ছেলেমেয়েদের লইয়া কি করা যাইতে পারে, এই কঠিন সমস্ত বরাবরই সমাজকে বিব্রত করিয়া আসিতেছে ; তাহাদের বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাহীদের স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অতি প্রাচীন কালে সমাজের অবস্থা এরূপ ছিল যে জড়বুদ্ধি সন্তানদের নির্বাতন দ্বারা বহিষ্কৃত বা নিহত করা হইত। ইউরোপে স্পার্ট দেশে ইহাদের খুব শৈশবাবস্থায় পৰ্ব্বতশিখরে ফেলিয়া দিয়া আসা হইত এবং গ্রীসের অন্যান্ত স্থানে নদীগর্ভে ইহাদের ফেলিয়া । দেওয়া হইত। মহামনীষী প্লেটোর মত এই ছিল যে, সমাজের ও ইহাদের উভয়েরই মঙ্গলের জন্ত ইহাদের মৃত্যুই একমাত্র উপায়। মহুষ্যপ্রকৃতি চিরকালই অত্যন্ত স্বার্থপর এবং জগতের সর্বজাতিই এইরূপ সন্তানদিগের উপর অযথা অবিচার করিতে কুষ্ঠিত হয় নাই। আমাদের দেশেও রাজা জড়ভরত ব্রাহ্মণবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াও ঐরূপ লাঞ্ছনা হইতে অব্যাহতি পান নাই। তাহার বৃত্তান্ত শ্ৰীমদ্ভাগবতের ৫ম স্কন্ধ নবম অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য । এই হতভাগ্যদিগের দাবি ইউরোপে ১৮০০ খৃষ্টাব্দে জনসাধারণের দ্বারা প্রথম গ্রাহ হয়। প্যারী ( Paris ) মূকবধির বিদ্যালয়ের অন্ধতম শিক্ষক ডাক্তার ইটার্ড ( Dr, Itard ) wtfscii ( Aveyron ) siivsta xa পণ্ডদ্বারা প্রতিপালিত একটি যুব পুরুষকে সম্পূর্ণ পশু অবস্থা হইতে শিক্ষিত করিবার জন্ত বিশেষ চেষ্টা করিয়াও অকৃতকার্ধ্য হন। কিন্তু তাহার অন্যতম হযোগ্য ছাত্র (ডাক্তার সেগুই ) Dr. Seguin জড়বুদ্ধি ছেলেদের শিক্ষা দিবার অত্যন্ত ফলবতী ৰয়েকটি প্রণালী বাহির করেন এবং তন্মধ্যে অধিকাংশই এতাবৎ কাল পর্ধ্যস্ত কার্ধ্যকরী হইয়া চলিয়া আসিতেছে । গত উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপ ও আমেরিকার সৰ্ব্বত্রই এই সকল ছেলেমেয়েদের জন্য বহুতর প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় এবং পাশ্চাত্য জগতের সকল জাতিই ইহা উপলব্ধি করেন যে এই সকল হতভাগ্য সন্তানদিগের জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিয়া শিক্ষাপ্রধান ও যত্ন ও পরিচর্য্যা কর, শুধু ইহাদের নহে, মানবজাতির পক্ষেও শ্বাশ্বত কল্যাণপ্রদ। এই সকল সস্তানকে কেবল মাত্র হতভাগ্য বলিয়া ঘৃণা বা উপেক্ষা করা এখন সভাজগতের সর্বত্রই বন্ধ হইয়া গিয়াছে, এবং সমগ্র জগতেরই মনস্তত্ত্ববিদগণ ও মনোব্যাধি বিশেষজ্ঞগণ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ একাগ্রচিত্তে সাধনার স্কায় বিশেষ গবেষণা দ্বারা এরূপ সপ্তানদের কি ব্যবস্থা বা কি চিকিৎসা বা কি উপায়ে ইহাদের প্রভূত কল্যাণ ও শাস্তি হইতে পারে তজ্জন্ত চেষ্টা করিতেছেন। যে সমাজের এক ফল ইহার, সেই সমাজেরই অবগু কৰ্ত্তব্য ও ধৰ্ম্ম ইহাদের ভার লওয়া, ইহাই ইহঁাদের মত। এই মতের অমুকুলে গুটিকতক যুক্তি এস্থলে লিপিবদ্ধ করা হইল। মানবজাতির হৃদয়ের মধ্যে ভগবান যে বিশ্বপ্রেমের অঙ্কুর নিহিত করিয়া দিয়াছেন এবং যে প্রেম সারা মনুষ্যজগতকে “সভ্যসমাজ” এই আখ্যার প্রকৃত অধিকারী করিয়াছে সেই প্রেমের প্রভাবে এই কথাগুলি আমাদের বিবেচনা করা ও সৰ্ব্বদা মনে রাখা উচিত :– ( ১ ) ইহারা আমাদেরই সন্তান। ইহাদের কল্যাণের ব্যবস্থা করিতে স্থায়ত ও ধৰ্ম্মত আমরাই দায়ী। একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে এরূপ নিঃসহায় অবস্থার জন্ত উহার নিজের মোটেই দায়ী বা দোষী নহে। প্রতীচ্য জগৎ তাহদের জ্ঞানালোক দ্বারা এই গৃঢ়তত্ত্বের অন্বেষণে নিয়ত চেষ্টা করিতেছেন, যে, কেন এরূপ সন্তান হয়, তাহার প্রকৃত প্রতিকার কি, চিকিৎসা কি, ইত্যাদি। আমাদের দেশে এরূপ সন্তানদের জন্ত কোনও
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।