পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রধারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (S ) কল্যাণীয়াস্ন অনেক দিন চিঠি লিখিনি। শরীর মন ও সংসারের উপর দিয়ে বিস্তর উৎপাত গেছে। সেজন্তে বিলাপ পরিতাপ করা আমার অভ্যাস নয়, করিও নি । কিন্তু সাধারণভ, মনকে বাইরের নানা কৰ্ত্তব্যের মধ্যে বিক্ষিপ্ত করতে এখন আর একটুও ইচ্ছা করে না। যে কৰ্ম্মসাধনার মধ্যে অনেক দিন মন কেন্দ্রীভূত, তাকে কোনো কারণেই বর্জন করা দুৰ্ব্বলতা এবং সেটা লজ্জাজনক— তার মধ্যে নিবিষ্ট থাকতে হয়েচে, অথচ তার সঙ্গে নিঃসংসন্ত আছি। নানা মতামত নিয়ে তোমার সঙ্গে অনেক তর্ক করেচি, সেও তোমাকে স্নেহ করি বলেই। তোমার চিঠি থেকে আমার দেশের অনেক কথা জানতে পেরেচি—তার কোনো অংশ সুন্দর, কোনো অংশ নিরালোক এবং অনাৰ্য্য—সেটার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকা সম্ভব নয় উচিতও নয়। সেইজন্তে তা নিয়ে আলোচনা করেচি, তোমাকে দলে টানবার জন্তে নয় কিন্তু কৰ্ত্তব্যবোধে। আঘাত অনেক পেয়েচ, সে আমার ভালো লাগেনি। এ সব তর্ক এখানেই শেষ হল । ক্লাস্ত লেখনীকে আর খাটিয়ে মারতে ইচ্ছা করে না । আমার সম্পর্কে কোনো ব্যবহার করার মধ্যে ঐহিক ও পারত্রিক সঙ্কোচের কারণ তোমার মনে আছে। আমি তার উপলক্ষ্য হতে ইচ্ছা করিনে—তোমাকে অঙ্কত্রিম স্নেহ করি বলেই। আমার চিন্তার,আমার সাধনার, আমার জীবনযাত্রার পথ তোমার থেকে অনেক দূরে। তুমি সম্পূর্ণ তাকে বুঝতে পারবে না। তা নিয়ে আক্ষেপ করা মুঢ়তা। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তুমি আমাকে যদি শ্রদ্ধা করতে পার সে কম কথা নয় পরলোকগত ত্রিবেদী-মশায় আমার সেই রকম বন্ধু ছিলেন। আমার মতের জন্তে নয়, সকল তর্কবিতর্কের বহিস্কৃত মনুষ্যত্বেরই জন্যে। সেই অকৃত্রিম মৈত্রীর স্বাদ আমি উার প্রতি থেকে অমুভব করেছিলুম। অতএব জানি সংসারে সেটা স্থলভ হলেও অলভ্য নয়। তোমার ছেলেমেয়েকে আমার অস্তরের আশীৰ্ব্বাদ দিয়ে । ইতি ৩১ আগষ্ট, ১৯৪২ ৷ ( २ ) কল্যাণীয়াস্ক তোমার কয়েকটি চিঠি পড়ে দেখলুম। আমার সঙ্গে মডাস্তর নিয়ে তোমার মন অত্যন্ত অশাস্ত হয়েচে । কোনো উপায় নেই, কারণ মত তো গায়ের চাদর নয় যে, কাউকে খুশি করবার জন্তে বদল করা চলে। বুঝতে পেরেচি তোমার মন এমন অবস্থায় এলেচে, আমার সম্বন্ধে তোমার সহিষ্ণুতা বেশিক্ষণ টিকবে ন-ভুল বুঝতে আরম্ভ করেচ শেষকালে সম্পূর্ণ উলটো বুঝবে। তার পূৰ্ব্বেই সম্পূর্ণ স্তব্ধ হওয়াই ভালো। স্নেহের বন্ধনকে বিরক্তিতে নিয়ে যাওয়া শ্রেয় নয়। দুই-একটি কথা পরিষ্কার করে দিতে চাই, আর কেউ হলে কোনো কথাই বলত্তেম না । তুমি সাম্যতত্ত্ব নিয়ে আমাকে খোট দিয়েচ । আমি সাম্যনীতির চুড়াস্তে উঠেচি এমন অহঙ্কার কখনো করি নে, কিন্তু তাই বলেই যতটা পারি তাও ত্যাগ করতে হবে একে স্বযুক্তি বলে না। আমি মানুষট স্বল্লাশী, জানি ভূরিভোজন মনের শক্তি হ্রাস করে ; জনরব এই যে কোনো একজন পওহারী বাবা না খেয়ে সাধনা করেন। তুমি যদি বলে, আপনি যখন পবন আহার করে থাকতে পারেন না তখন স্বল্পাহারের বড়াই করেন কেন— এমন খোচা চুপ করে স্বীকার করে নিলেও অগৌরব হবে না । তুমি লিখেচ, দরিত্র ও অস্পৃশুদের জার্থিক