পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাস্তন সে আজ চার বছরের কথা হবে। তারপর বছর দুই কেটে গেল। আমি কাজ শিখে এখন টিউব ওয়েলের ব্যবসা করি—ডিট্রিক্ট বোর্ড ও লোকাল বোর্ডের কাজ সংগ্রহ করবার জন্তে এখানে ওখানে বড় ছুটোছুটি করে বেড়াতে হয় ; বাড়িতে বেশীক্ষণ থাকা আজকাল আর বড় ঘটে না। সেদিন সন্ধ্যার গাড়ীতে কলকাতা আসব, আমার বিছানাপত্র বেঁধে রান্নাঘরে চায়ের জন্তে তাগাদ দিতে গিয়েচি–কানে গেল আমার বড় ভাই-বি বলচে—ও পেয়ালাটাতে দিও না পিসিম, বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও পেয়ালাটাকে দেখতে পারে না ছ চোখে— আমি বহুম—কোন পেয়ালাটা রে ? কি হয়েচে পেয়ালার ? আমার ভাই-কি পেয়ালা নিয়ে এল, মনে হ’ল কাকার কেনা অনেক দিনের সে পেয়ালাট । সে বলে—বৌদিদির অস্থখের সময় এই পেয়ালাট ক'রে দ্বধ খেতেন, তারপর বাবার সময়ও এতে ক’রে ওঁর মুখে সাৰু ঢেলে দেয়া হত—ম বলে, আমি ওটা দেখতে পারিনে— আমার এই জ্যাঠতুতে ভাইয়ের স্ত্রী কলকাতা থেকে আমাদের এখানে বেড়াতে এসে অস্বখে পড়েন এবং তাতেই মারা যান। এর বছর দুই পরে কাকাও মারা যান পৃষ্ঠত্রণ রোগে। কিন্তু এর সঙ্গে পেয়ালাটার সম্পর্ক কি ? যত সব মেয়েলি কুসংস্কার! পরের বছর থেকে আমার টিউব ওয়েলের কাজ খুব জেকে উঠল, জেলা বোর্ডের অনেক কাজ এল আমার হাতে। আমার নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই, দূর দূরান্তর পাড়াগায়ের নানা স্থানে টিউব ওয়েল বসানো ও মিস্ত্রী খাটানোর কাজে মহা ব্যস্ত—বাকী সময়টুকু যায় আর বছরের বিলের টাকা আদায়ের তদ্বিরে । সংসারেও আমাদের নানা গোলোযোগ বেধে গেল । কাক যত দিন ছিলেন কেউ কোনো কথাটি বলতে সাহস করেনি সংসারের পুরানো ব্যবস্থাগুলির বিরুদ্ধে। এখন— সবাই হয়ে দাড়াল কওঁ, কেউ কাউকে মেনে চলতে চায় না। পেয়ালা 6 جوي ঠিক এই সময় আমার ছোট ছেলের ভয়ানক অস্থখ হলো। আমার আবার সেই সময় কাজের ভিড় খুব বেশী। জেলা বোর্ডের কাজ শেষ হয়ে গিয়েচে, কিন্তু টাকার তাগাদ করতে হবে ঠিক ওই সময়টাতে। নইলে বিল চাপা পড়তে পারে ছমাস বা সাত মাসের জন্তে । আমি আজ জেলা, কাল মহকুমা ছুটোছুটি করে বেড়াতে লাগলুম, এ মেম্বর ও মেম্বরকে ধরি, যাতে আমার বিলের পাওনাটা চুকিয়ে দিতে র্তার সাহায্য করেন। কাজ মিটিয়ে যখন বাড়ি ফিরলুম, তখন এদিকেও কাজ মিটে গিয়েচে । ছেলেটি মারা গিয়েচে—অৰিঞ্জি চিকিৎসার ক্রটি হয় নি কিছু, এই যা সাত্বনা । বছরের শেষে আমি শহরে বাসা ক'রে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সেখানে নিয়ে এলাম। বাড়ির ওই সব ছৰ্ঘটনার পরে সেখানে আমাদের কারুর মন বসে না, তাছাড়। আমার ব্যবসা খুব জেকে উঠেচে—সৰ্ব্বদা শহরে না থাকৃলে কাজের ক্ষতি হয়। টিউব ওয়েলের ব্যবসাতে নেমে একটা জিনিষ আমার চোখে পড়েচে যে, আমাদের দেশের, বিশেষ ক’রে পাড়াগায়ের, লোকেদের মত অলস প্রকৃতির জীব বুৰি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এত অল্পে সস্তুষ্ট মাহব যে কি ক’রে হতে পারে সে ধারা এদের সঙ্গে পরিচিত নন, তাদের ধারণাতেও আসবে না। নিশ্চিত মৃত্যুকেও এরা পরম নিশ্চিন্তে বরণ করে নেবে, সকল রকম দুঃখ দারিদ্র্য, অস্থবিধাকে সহ করবে কিন্তু তবু দ্ব-পা এগিয়ে যদি এর কোন প্রতিকার হয় তাতে রাজী হবে না। তবে এদের একটা গুণ দেখেচি, কখন অভিযোগ করে না এরা, দেশের বিরুদ্ধেও না, দৈবের বিরুদ্ধেও না। বাইরে থেকে এদের দেখে ধারা বলবেন এর মরে গিয়েচে, এরা জড় পদার্থমাত্র, ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখলে কিন্তু র্তারা মত বদলাতে বাধ্য হবেন । এরা মরে নি, বোধ হয় মরবেও না কোন কালে । এদের জীবনীশক্তি এত অফুরন্তু যে, অহরহ মরণের সঙ্গে যুঝে এবং পদে পদে হেরে গিয়েও দমে যায় ন৷ এরা, বা ভয় পায় না, প্রতিকার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে না। সহজ ভাবেই সব মেনে নেয়, সব অবস্থা ।