পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খেলাঘর শ্ৰীসুবলচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শহর নয় । অথচ ক্রোশখানেক পশ্চিমে ঠাটিয়া গেলে ছোট শহরের সীমান্য স্থবিধা আছে। দিগন্তপ্রসারী অসমতল প্রাস্তরের বিস্তীর্ণ নীল রেপা—কোথাও শস্তহীন, আবার কোথা ৪-বা ছোট ছোট ধানের ক্ষেত, শাল আর মহুয়ার বনের ধারে ছায়া-ঢাকা ছোট-ছোট গ্রাম। পূৰ্ব্বপুরুষের বহু প্রাচীন আভিজাত্যের শেষ-সাক্ষীর মত জরাজীর্ণ একটি প্রাসাদ কোনোরকমে এখনও টিকিয়া আছে মাত্র । অসংখ্য ফাটলে অশ্বখ-চারার অবারিত সমারোহ–নোনাধরা দেয়ালে মাকড়সার জাল-রচনার বিরাম নাই, মাঝেমাঝে দু-একটি টিকটিকির শব্দ ছাড়া সেই ভীষণ নিৰ্জ্জনতার সঙ্গীও আর কেহ ছিল না । এহেন ভাঙা মন্দিরে দেবতার থাকিবীর কথা কবিতায় আছে,—কিন্তু মানুষ যে কেমন করিয়া থাকিতে পারে, তাহাই আশ্চৰ্য্য। কিন্তু বীরেন আর মাধবী ছিল । বীরেন ছাড়া ঐ বংশের আর কেহ অবশিষ্ট নাই এবং তাহারও থাকিবার বোধ করি অন্ত কোনো জায়গা ছিল না। দুই বেলা চারক্রোশ গটিয়া বীরেন টিউশানি করে ; মাসে মাসে সম্পত্তির সামান্যতম কিছু প্রাপ্তিও আছে । কাজেই এমন-কিছু অভাব নাই যে, অভিযোগ থাকিবে । মাধবী কাছে থাকিলে সমস্ত ভয়াবহ ভূঁইতা অপরূপ সৌন্দর্ঘ্যে রূপান্তরিত হইয়া উঠিবে, ভীষণ নিঃসঙ্গ নির্জনতাও রমণীয় হইয়া উঠিবে, জুইকুলের মত শাদা জ্যোৎস্নায় তামসী-রাত্রির ঘন অন্ধকার অকস্মাৎ রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিবে ! অন্ততঃ বীরেন তাহাই ভাবিয়াছিল। বিবাহের পর মাস ছয়েক ধরিয়া সে কবিতা লিখিবারও ও কসরৎ করিতেছিল। এখন সে একটা ইস্কুল-মাষ্টারি খুজিতেছে । নিরাভরণ যে-ঘরখানির মধ্যে আমাদের গল্পের যবনিকা সেখানকার বাতাসকে ভারাক্রান্ত করিয়া তুলিয়াছে । অসহ যন্ত্রণার মধ্যে গভরাত্রে মাধবী একটি মুক্তকন্তু প্রসব করিয়া নিজের মৃত্যুকে শিয়রের কাছে দাড়াইয়৷ থাকিতে দেখিয়া অকস্মাৎ চীংকার করিয়া উঠিয়াছে। জ্ঞান যখন হইয়াছে, নিতান্ত কোমল ভীরু ঐ ছোট দেহটি তাহার নিদারুণ পিপাসায় থরথর করিয়া কঁাপিয়া উঠিয়াছে, শরাহত পার্থীর মত সৰ্ব্বাঙ্গে তাহার অপরিসীম ধন্ত্রণা— স্বজনবান্ধবহীন বীরেন আর বেশীক্ষণ সেদিকে চাহিয়া থাকিতে পারে নাই । অবশেষে পাশের বাড়ির পিসিম যখন জোর করিয়া তাহাকে ডাক্তার ডাকিবার জন্য পাঠাইয়া দিলেন, তখন ভাড়াতাড়ি সে জামাটা উণ্টা করিয়! গায়ে দিয়াই পথে নামিয়; পড়িল । বহু পথ খুরিয়ুi ৬াভার-বাড়ি পৌছিয়া, ডাক্তারকে কি যে সে বলিয়াছে, তাহা নিজেই জানে না। ডাক্তারবাবুও তাহার মুখ-চোখের চেহারা দেপিয়া আর কোনে প্রশ্ন করেন নাই । ডাক্তারকে নীচে অপেক্ষা করিবার ইঙ্গিত করিয়া প। টিপিয়া টিপিয়া বীরেন ঘরে প্রবেশ করিল। পিসিম চোখ ফিরাইয়৷ উদগত অশ্রু গোপন করিবার চেষ্ট: করিলেন, বীরেন মাধবীর শধ্যাপ্রান্তে একেবারে ঝুকিয়া পড়িল। দেখিল মূর্ধমতী সেই শেফালি-শুভ্রতার পাণ্ডুর দুটি কপোল বহিয়া বিগলিত অশ্রীর ধারা তখনও শুকাইয় ষায় নাই—অসহায় দুটি চোখের পাতায় জমাট অন্ধকার নামিয়া আসিয়াছে। বীরেন ট্রাঙ্ক হইতে সশব্দে দুটি টাকা পকেটে ফেলিয়া নীচে নামিঃ আসিল। ডাক্তার বাবুর-উংস্থক উদ্বিগ্ন চোখের উপরে কঠোরভাবে চাহিয় নিল জ্বকণ্ঠে কহিল, Finished. তারপর পকেটে হাত দিতেই ডাক্তারবাবু বলিলেন,