পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাগুন পকেট হইতে একটি আধ-পোড়া বিড়ি বাহির করিয়া ভূবন জনতাকে উদ্দেশ করিয়া বলিল,—দাও দিয়াশলাইটা! তাই আমরা বলাবলি কচ্ছিলাম, বলি, না বাপু, এ ত আর স্কুখের মরা নয়, ওর যা-খুলী তাই করুক। সাধারণ যা না কল্পে নয় তা কত্তে হবে বই কি ? তারপর মাছটা একটু বেশী ক’রে কোরে । সধবার মৃত্যু কি-না। বাসু, তসুলেই হবে। দক্ষিণে-টক্ষিণে দিয়ে আর কাজ নেই, বুড়োধুড়ী মরে ত বলি–হঁ্য, দক্ষিণে দাও । বলি।াই সে টে-টো করিয়া সশন্ধে বিড়িটা বারকতক টানিয়াই পেট: শঙ্কুর হাতের দিকে আগাইয়া দিয়া বলিল,— পাও । মাছ আজকাল পাচ আনা ছ-আনা সেৱ । মণ দুই হলেই ভেসে যাবে। আর ইঁ্য, ভালকথা মনে পড়েছে, ইষ্টিশনের পাশের ওই ব্যাট বজরং মাড়োয়ারীর দোকানে ঞ্জিনিষপত্ৰ যেন কিনো না—ব্যাটা ডাহা চোর । রামাই এতক্ষণ চুপ করিয়া ছিল, এবার কহিল, ‘না না, না না, তোমার কৰ্ম্ম নয়, তুমি ছেলেমানুষ, জিনিসপত্তর ভাল দেখে-শুনে তুমি কিনতে পারবে না। তোমার বিঃকাকাকে পাঠিও, আর না হয়ত, বলে আমিও সঙ্গে হ’ব । ধি-টা আজকাল দেখে-শুনে কেনা উচিত । তারকব্ৰহ্ম ভাগবতরত্ব পাশের রাস্ত দিয়া পার হইতেছিলেন, তাহার এক হাতে লণ্ঠন ও অন্যহাতে একটি বাটি। বোধ করি দোকানে কি যেন কিনিতে যাইতেছিলেন, মজলিসের একপাশে বীরেনকে চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়া দাড়াইলেন।–“নারায়ণ! নারায়ণ । ভায় বড় মুষড়ে পড়েছ মনে হচ্ছে ? আহা-হা তা ত হবারই কথা । কতই-বা আর বয়েস তোমার ? কি আর করবে বলে, সবই সেই নারায়ণের ইচ্ছা।” এই বলিয়া তিনি তাহার হাতের লণ্ঠনটি নামাইয়া বীরেনের কাছ ঘেষিয়া বসিয়া পড়িলেন। বাটটি তাহার গম্বুজাকৃতি পেট ও পায়ের মাঝখানে চাপিয়া রাখিয়া গঠনের পলিতাটি টযুৎ খাটো করিয়া দিয়া বলিলেন,— 'শুর জন্তে ছঃখুটুঃখু করে লাভ নেই ভায়, ভাল জিনিয আমাদের টেকে না । তোমার নিজের জীবনটা যাতে থাকে তা’র ব্যবস্থা কর। অনেক সাধ-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ওরা যায় । কবচ-টবচ ধারণ ক’রে ভাল ক’রে শুদ্ধ হয়ে, খেলাঘর ᏔᏠᏱ দেখে-শুনে একটা— বয়সটা আর কিই-বা তোমার, এ বয়সে অনেকে-” বীরেনের অলক্ষ্যে রামাই ক্রমাগত ভাগবতরত্নকে চোখ টিপিতে লাগিল । ভাগবতরভু অগত্যা কৰচের কথাতেই ফিরিয়া গেলেন ।—কবচ-টবচ ধারণ করেছ নাকি ? বীরেন ঘাড় নাড়িয়া কহিল, "না।’ —অষ্কায় কবেছ, মহা অন্যায় করেছ । আজিকালকার ছেলে কি-না, বিশ্বাস করো না ; না ? কিন্তু তুমি ত শিক্ষিত, ভায়া, বিশ্বাস ত তোমার করা উচিত । বীরেন ভাল-মন কিছুই বলিল না । ভাগবতরত্ন বলিতে লাগিলেন, “আমার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু যখন হ’ল তথম আমিও ভেবেছিলাম, স্ত্রী ত ! এতদিন ধ’রে যার সঙ্গে ঘর করলাম সে আর আমার কি অনিষ্ট করবে ? কিন্তু তা কি আর বলবার জো আছে ? মরবার দিন-পনেরো পরেই হবে, গেলাম এক জায়গায় ভাগবত পাঠ করতে । তিন দিন পরে ফিরে আসছি। বৈকালে যে-ট্রেনটা আজকাল আসচে, ওই ট্রেনটাই আসতে তখন ঠিক ‘মুখ-দ্রাধারি’র সময় ! ইক্টিশানে নামলাম। অন্ধকার রাত। হাতে লণ্ঠন নেই। একা । সঙ্গে কিছু জিনিষপত্তর আছে। ভা লাম, কি আর হবে, চলে যাই । ভাবতে ভাবতে এগোতে লাগলাম। কখনও আপন মনেই গান ধরি, কখনও-বা কিছু ভাবি,— এমনি ক'রে ভাবতে ভাবতে ত পথ চলেছি। তারপর ওই ষে ঐ হরিশপুরের কাছে, মাঠের মাঝখানে বেঁটে একটা পলাশের গাছ আছে, ওইখানে আসভেই মনে হ’ল যেন পলাশ গাছটার তলায় শাদ। ধবধবে কাপড় পরে একটি নারীমূৰ্ত্তি ধাড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করলাম, কে ? কে গো তুমি ? কোনো সাড়াশা পেলাম না, পলাশ গাছটার পাতাগুলো শুধু মড়মড় ক’রে নড়ে উঠলো। বাস। সেই নারীমূৰ্ত্তিটিকেও আর দেখতে পেলাম না। গাটা চমূ করে উঠলো। সেদিক পানে আর ফিরে না তাকিয়ে ‘নারায়ণ নারায়ণ’ বলতে বলতে চলে এলাম। কিন্তু এমনি মজা, মনে হ’ল কে যেন আমার পিছু পিছু আসচে, পষ্ট পায়ের শব্দ ! পেছন ফিরে তাকাতেও পারি না, অথচ এগোতে গেলেও পা-দুটো যেন জড়িয়ে - আসে ।