পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলায় কাপাস উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা ঐছুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বালা দেশে অতি সামান্ত পরিমাণেই তুলা জন্মে । বাংলায় মোট ৭৭,••• একর জমিতে কাপাস তুলা জন্মে। এই কাপাস অতি নিকৃষ্ট প্রকৃতির ও অপ্রচুর। কাপড়ের কর্মে এই তুলায় কাজ হয় না বলিলেই চলে। কাজেই বাংলার. মিলগুলি বাহির হইতে তুলা আনিয়া বস্ত্র উৎপাদন করে এবং ভবিষ্যতেও করিবে যদি বাংলায় ষথেষ্ট পরিমাণে ভাল তুলা না জন্মে। বাংলার দেশহিতৈষী নেতারা কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন। ইতিমধ্যে কাহারও কাহারও নামে মিল প্রতিষ্ঠিত হইতেছে। এককালে বাংলা দেবকাপাস উৎপাদন করিয়া সেই ভুলায় যে সূক্ষ্ম সূতা উৎপাদন করিত, তাহা জগতের শীর্ষস্থানীয় ছিল বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। সেই বাংলা দেশে হাজার হাজার বিধা পতিত জমি থাকাতেও বাংলার মিল তুলা আনিবে বাহির হইতে ! জগতের মধ্যে সূক্ষ্মতম মসলিনের সুতা উৎপাদন করিত বাংলা । তথনকার তুলার আঁশ এত স্বল্প, কোমল ও চিকণ ছিল যে, তাহাতে মসলিনের সূক্ষ্মতম স্থতাও উৎপন্ন হইতে পারিত। আজ বাঙালীরা যে মিল প্রতিষ্ঠিত করিতেছেন তাহার তুলা জোগাইবে কি বেহারীর, পাঞ্জাবীরা অথবা মারাঠীরা ? বাংলায় কি যথেষ্ট জমি নাই, না, বাংলার জল-হাওয়া তুলা উৎপাদনের অনুকুল নয় ? পরিধেয় বস্ত্র বিষয়ে আমাদের যেমন স্বাধীনতা প্রয়োজন সেইরূপ তুলা উৎপাদনের দিক দিয়াও আমাদের আত্মনির্ভরতা থাকিবে না কেন ? যাহারা বাংলাকে ভালবাসেন, বাংলার পয়সা যাহারা বাংলাতেই রাখিতে ইচ্ছা করেন তাহারা বাংলা কাপাস জন্মাইবার উপায় করুন, বাংলার মিলের যে পরিমাণ ভাল তুলার দরকার হইবে সেই পরিমাণ কাপাস বাংলাই জোগাইৰে । সেইজন্ত আজ বাঙালীকে বাংলার চতুৰ্দ্ধিকে তুলা চাষের প্রবর্তন করিতে হইবে । সাধারণ লোকদিগকে এই সম্বন্ধে উৎসাহিত করিতে হইবে, কাপাস চাষ সম্বন্ধে উপদেশ দান করিয়া ইহাকে অর্থনীতির উপবে দাড় করাইতে হইবে। সাধারণ লোকে আজ ভূল চায সম্বন্ধে একরূপ অজ্ঞ বলিলেই চলে, কাজেই বাংলায় প্রকৃত পরিমাণে উত্তম জাতীয় কাপাস উৎপাদন করিতে ইষ্টলে শিক্ষিত স্বদেশামুরাগী ব্যক্তিগণকে লইয়া একটি বোর্ড গঠন করা উচিত। এই বোর্ডের নাম হুইবে বঙ্গীয় কাপাস সমিতি । এই সমিতি বাংলায় প্রভূত পরিমাণে উত্তম জাতীয় ভুল উৎপাদন করিবার প্রাণপণ চেষ্টা করিবেন। এই সমিতির নিজস্ব একটি ব্যাঙ্ক থাকিলেই কাজের সুবিধা হুইবে, কারণ সমিতি গ্রামে গ্রামে ঋণদান দ্বারা শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে অনেকগুলি কাপাস উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির জন্মদান করিতে পারেন । আর দরিদ্র দেশের পক্ষে সমবায় সমিতির মধ্য দিয়া কাজ না করিলে কোন বড় কাজ করা যায় না । গ্রামের মধ্যে এইরূঞ্চ সমবায়ু সমিতির জন্ম দিতে পারিলে, এই সব সমবায় সমিতির কাৰ্য্যকলাপ ও কৃষি-পদ্ধতি দেখিয়া এবং ভূলা চাষে লাভ আছে বুঝিয়া, সাধারণ চাষীরা ইহার চাষে মনোনিবেশ করিবে। এইভাবেই দেশময় কাপাস চাষ বিস্তার লাভ করিতে পারে । বঙ্গীয় কার্পাস সমিতি সৰ্ব্বপ্রথমে দেখিবেন কোন কোন জেলায় প্রচুর পরিমাণে কাপাস জন্মিতে পারে। কারণ বাংলায় অনেক জেলা আৰ্দ্ৰ বলিয়া কার্পাসের পক্ষে অমুকুল নয়। যে-ধে জেলায় এখনও কার্পাস জন্মায়, সেই সেই জেলায় ইহার আদর্শ কৃষিক্ষেত্র প্রতিষ্ঠিত করিয়া প্রত্যেক কেন্দ্রে দশ বার জন শিক্ষিত যুবককে লইয়া কাৰ্য্যারম্ভ করিতে পারেন। এই আদর্শক্ষেত্রগুলিতে শ্রেষ্টজাতীয় ও স্থানীয় ভাল কার্পাস লইয়া পরীক্ষা চলিবে, কোন জাতীয় কাপাস সেই স্থানে উত্তম