পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক আচল ११ ইহা তাহার ইচ্ছাকৃত অপরাধ নয়, এ অপরাধ তাহার চরিত্রের। তাই সে শুধু শুষ্ক হাসি হাসিয়া চপ করিয়া রহিল। কারবার তুলিয়া দিয়া দেনা করিয়া যেদিন তাহাকে ফিরিয়া আসিতে হইল, দাদার গম্ভীর হইয়া সরিয়া গেলেন, মা অদুষ্টের উপর দোষারোপ করিয়া নিৰ্ব্বাক হইয়া রছিলেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও ইসারা-ইঙ্গিত অবারিত কয়েক দিন ধরিয়া চলিতে লাগিল ৷ ছাগলকে দিয়া যব মাড়াইতে গিয়া গুহুস্থের হইল আর্থিক ক্ষতি । তা ত হইলই, কিন্তু ইহার আড়ালে যে-কথাটা স্পষ্ট হইয়া উঠিল, তাছা কাহারও চোখ এড়াইল না । পুথিবীতে সে যে কাজ করিতে আসে নাই, সংগ্রাম কোলাহল এবং জীবনের যে-দিকটায় মানুষের একটা বৈষয়িক সমারোহ দেখা যায়, সে-দিকটা যে তাহার ক্ষাকা, এ কথাটাও যামিনী আজ হৃদয়ঙ্গম করিল। তাহার মনে হইল, হেরম্ব স্বামী হইতে জানে, কিন্তু দায়িত্ব লক্টতে জানে না । ইহাকে লইয়া সে কি করিবে ? অবহেলায় ইহাকে দূরে সরানো যায় না, কারণ হৃদয়ের দিক হইতে সে যথেষ্টই ঐশ্বৰ্য্যবান, অথচ সানন্দে এই লোকটিকে লইয়া সংসারযাত্রা নির্বাহ করাও চলে না, ইহার মত অকৃতী, অনভিজ্ঞ, দুনিয়ার-বা’র পুরুষও সে কখনও দেখে নাই। যামিনী উদাসীন হইয়া চুপ করিয়া থাকে। ঘরে আবার জঞ্জাল জমিয়াছে। বিছানাগুলি অপরিষ্কার ও অবিন্যস্ত হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে । ছেড়া কাগজ, দেশলাইয়ের কাঠি চারিদিকে ছড়ানো। ছবিগুলি ঝাড়িয়া-বুড়িয়া পরিচ্ছন্ন করিবার কথা ছিল, কিন্তু তাহা আর হইয়া উঠিতেছে না। ঘরের কয়েকটা আসবাব,— গোটা-দুই আলমারি, স্বচুকেস, টিপয়, খান-দুষ্ট চেয়ার, একটা ড্রেসিং টেবল ইত্যাদি কিনিবার কথা ছিল, কিন্তু তাহাও আর আসিল না। কে আনিবে ? দেওয়ালের পেরেকে যে ঝুলিট টাঙান ছিল, তাহা তেমনই রহিয়াছে, কেবল তাহার ভিতর হইতে একখানা গেরুয়া কাপড়ের কিয়দংশ বাহির হইয়া সংসারের অনিত্যতা সম্বন্ধে ইঙ্গিত করিতেছিল। এই কয়দিন ধরিয়া সে যেন ভিতরে ভিতরে একটা যন্ত্রণা অনুভব করিয়া অস্থির হুইয়া উঠিয়াছে। বাস্তবিক, গ্রহ-তারকার ঘূণীপাকে এ সে কাহার হাতে আসিয়া পড়িল । জীবনে তাহার মত উচ্চ আশা আর যে তাহার পরিচিত কোনো মেয়েরই ছিল না ! স্বামীর ভালবাস নারীর সম্পৰ্ছ কিন্তু আরও একটা দিক সে যে মনে মনে কামনা করিয়াছে । সেখানে অবারিত মরুভূমির মধ্যে সে কি চিরজীবন ধরিয়া তৃষ্ণায় হ৷ ই করিতে থাকিবে ? বর্ণের ঔজ্জ্বল্য, আড়ম্বর, গুঙ্গ-বিলাস, আরাম, স্নিগ্ধছায়া—এগুলিকে সে কি শুধু ভালবাসা পাইয়াই ভুলিয়া থাকিতে পরিবে ? প্রম সে ত আনন্দের কথা, কিন্তু বাহিরের পরিচয়টা ? দিন চলিয়া যায়, রাত্রি নামিয় আসে । দুইটি নরনারীর মধ্যে মনোমালিন্ত নাই, বিচ্ছেদ নাই অথচ কোথায় যেন একটি অভাব রি-রি করিডে থাকে । প্রতিমুহূত্তের, প্রতি পদক্ষেপের । হেরম্ব একদিন কহিল, ধামিনী, গঙ্গার ধারে যাবে ? যামিনা কহিল, গঙ্গার ধারে ? কেন বল ত ? —এমনি, বেড়াতে । নদী আজকাল ছাপাছাপি, এখন শরৎকাল নীল আকাশ,—চল না, তার ধরে ধরে অনেকদূরে যাব । —কি হবে গিয়ে ?—যামিন জানালার বহিরে তাহার দৃষ্টি প্রসারিত নেই । হেরম্ব কহিল, সব চেয়ে মুস্থ থাকা উচিত মন, হৃদয় । এই মন আর এই হৃদয় ছাড়া পায় নদীর ধারে, মাঠে, আকাশের দিগন্তজোড়া অবকাশে । যামিনী, আমার মনে হয় তুমি সেখানে গেলে আনন্দ পাবে। নারীর আবহমান কালের প্রশ্নের কৈফিয়ং nিয়। ঘামিনী কহিল, না, ভেতরে যার কিছু নেই, বাইরে গিয়ে তার পক্ষে আনন্দ পাওয়া কঠিন। আমার অভাব আর আনন্দ দুই-ই ঘরের মধ্যে । হেরম্ব তাহার প্রশান্ত দুইটি চক্ষু তুলিয়৷ একবার তাকাইতেই যামিনী কহিল, তুমি একটা কাজ করতে পার? একটা সেলাইয়ের কল আর একটা চরকা আমায় এনে দেবে ? —সেলাইয়ের কল ? চরকা ? কেন যামিনী ? সে অভাব করিয়া পুনরায় বলিল, কোন লাভ