পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮২ বা কার কাছ থেকে ? সে মূল্য দেবার শক্তি আছে ক’জনের ?” বাহিরে হেমপ্ত অপরাহের নিৰ্ম্মল রৌদ্রে শুভ্ৰ মেঘখণ্ডগুলিকে কে যেন সেদিন ধৌতবস্ত্রের মত করিয়া মেলিয়া দিয়াছিল। অজয়ের ঘরের সম্মুথে যে ছোট বারানাটিতে বিমান ফুলের টব সাজাইয়া বাগান করিয়াছিল, সেখানে চড়ুই-দম্পতির প্রণয়বিহার অধীর হইয়৷ জমিয়া উঠিয়াছে। একসারি ধক পাথ। ঝাপটাইম্বা অজয়ের জানালার নীল অতিবাহিত করিয়া চলিয়া গেল, কাহার নীলাম্বরায় ভাজে ভাজে যেন আলে। পড়িয়া ঝলকিয়া উঠিল। এতক্ষণ ক্লাব বসিবার আয়োজন হইতেছে। একটি জরীপাড়-বসানো গরদের জাম এবং জরীপাড় অমল শুভ্র শাড়ী অজয়ের মনে পড়িল। দুটি নিটোল বাহুমৃণাল ঘেরিয়া লোহিডাভ পাথরের কঙ্কণ ঝলমল করিয়া উঠিল । সম্মুখের খোলা পুথির পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া সে ভাবিতে লাগিল, আজ হয়ত সে মন্ড পরিয়া আসিবে, কিম্বা পার্পল, কিম্ব ময়রকষ্ঠ । হাতদুটি মুক্তার ব্রেসলেটে জড়াইলে কেমন দেখাইবে । সেদিন সে কি কপালে সি দুরের টিপ পরিয়া আসিয়াছিল, হয়ত আসে নাই, কিছুতেই কেন মনে পড়িতেছে না ? কিন্তু সিঁদুর পরিলে তাহার টলটলে সুন্দর কপালটিতে নিশ্চয় বেশ মানায় । ক্রমে তাহার পরিশ্রান্ত চৈতন্যকে ঘিরিয়া এস্রাজের স্বর জমিয়া উঠিল, পাখোয়াজে গুরুগম্ভীর ঘা পড়িতে লাগিল, আর সমস্ত ধ্বনিকে আবুত করিয়া, সমাচ্ছন্ন করিয়া, অলক্ষ্য সূত্রে জটিলতর সমন্বয়ে কোন সঙ্গীতের সঙ্গতিতে সেগুলিকে গাথিয়া গাথিয় কাহার কলহাসা তাহার দেহের শিরায় শিরায় ঝঙ্কত হষ্টতে লাগিল, মুখরিত হইতে লাগিল। অজয় সেদিন প্রথম ক্লাবে গান গাহিয়াছিল, “বন্ধু, তোমার হাসির ছোয়াচ লাগে মনে, সকল ব্যথা পাশরণে।" বিমান শুনিয়া বলিয়াছিল, “এ ত ব্রহ্মসঙ্গীত নয়, বন্ধুটি যদি দেবতা হন ত নিতান্তই নীটুশের দেবতা, হাসতে যখন পারেন, নাচতে গাইতেও পারেন মনে হচ্ছে।” অজয় স্বভাবতঃ লাজুক, কিন্তু একবার কোনওরূপে S99āD বাধ ভাঙিতে পারিলে তাহার চিত্তবেগ প্লাবনের মত প্রপর গতিতে সমস্ত সঙ্কোচ-কুষ্ঠাকে ডুবাইয়া ভাসাই। বহিয়া চলে। হাসি-পরিহাস, বিশ্রস্তালাপ, কপট কলহ, মান অভিমানে বীণার সঙ্গে এমন ব্যবহার সেই হইতে সে করিয়া চলিয়াছে যেন আশৈশব তাঙ্গকে সে জানে। লাজুক বলিয়াই ক্লাবের অপর কাহারও সঙ্গে সে মিশে না, কথা বলে না, অখণ্ড মনোধোগ দিয়া এই একটি মাতুষকে সারক্ষিণ ধিরিয়া রাখা সেইজনাই তাহার সহজ হয় । যখন বীণার সঙ্গে বলিবার কথা ফুরাইয়া যায় তখন মন্দিরাকে জুটাইয়া আনে, তাহাকে উপলক্ষ্য করিয়; আবার কথার শ্রোত এবং কলহাস্যের বান ডাকিছে থাকে। নিজের উপর আরোপিত মাতৃত্বের এমন-সনস্থ অধিকারকে মন্দিরা অকুষ্ঠিত-চিত্তে সারাক্ষণ প্রচার করে, যাহা অতি বড় লজ্জাহানেরও কর্ণমূল আতপ্ত করিয়া তুলিবার পক্ষে যথেষ্ট। সেইগুলিকে আশ্রয় করিমু নিভৃত সদ্ধা ভরিয়া কত সলজ্জ দৃষ্টি-বিনিময়, কত অস্ফুট হাসির আদান-প্রদানের লুকোচুরি গেলা চলিতে থাকে। পথসঙ্গিনী সেই অপরিচিত, কবরীভার-পীড়িত। গৌরীর মুখখানি অজয় প্রায় ভুলিয়াই গিয়াছে। চকিতে কোনও গৃহবাতায়নে অস্পষ্ট একটি মুখের আভাস মৃতন করিয়া তাহার বুকের রক্তে দোল লাগায়। রক্তস্রোভের সেই দ্রুত চাঞ্চলা বড় বেদনার মত হইয়া তাহার বুকে বাজে বলিয়। স্বেচ্ছায় সেই তরুণীর চিন্তাকে বেশীক্ষণ সে ধরিয়া রাখে না । কিন্তু নিজেকে লইয়া এই পলাইয়া বেড়ান বেশীদিন চলিল না । সেদিন আর কিছু করিবার ছিল না বলিয়। নিতাপ্ত নিরুপায় হইয়াই তিন বন্ধুতে বার বার দেখা ছবিগুলিকে আরও একবার দেখিবার সঙ্কল্প করিয়া বিমানদের ইস্কুলের প্রদর্শনীতে ঢুকিয়া পড়িয়াছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুভদ্রের জন-দুই চেলা জুটিয়া গেল, হামবাজারে তাহারা একটা কুস্তির আখড়া খুলিতে চায়, স্বভদ্রকে সে-কাজের গোড়ার দিক্কার ভারটা লইতে বলিতেছে। স্বভদ্র তাহাদের লইয়া রাস্তার দিক্কার বারান্দায় বাহির হইয়৷ গেলে ছবির ক্যাটালগ কিনিয়া ফিরিয়া আসিয়া অজয়