পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক দেখিল, হলের মাঝখানে ভক্তমণ্ডলী-পরিবৃত বিমান মঙ্গা উৎসাহে শিল্পকলার উপর সমষ্টি-মনের প্রভাব সম্বন্ধে বক্তৃতা করিতেছে। তাহার ঠিক পশ্চাতেই একটা থামের আড়ালে বসিয়া একটি তরুণী একমনে কতকগুলি উডকাটের প্রিন্ট উন্টাইতেছিল ; স্পষ্ট বোঝা গেল, বকুত তাহার শ্রুতিগোচর করাটাই বিমানের আসল উদ্দেশ্য। সযত্নে তাহাকে পরিহার করিয়া অজয় ছবি দেখাতে মন দিল । প্রায় আধঘণ্টা পরে হলের বহুদূর কোণ হইতে ফিরিয়া চাহিয়া দেখিল, বিমানের বক্তৃত থামিয়া গিয়াছে, স্থভদ্রকে লইয়। তাহার পশ্চাৎবর্কিনী সেই তরুণীর সঙ্গে সে পরিচয় করিয়া দিতেছে। থামের আড়াল হইতে শাড়ীর অঞ্চলপ্রস্তি মাত্র দেপিয়াছিল, এবার দেখিল, তরুণী তাহার পথপ্রবাস-সঙ্গিনী জ্যোতিৰ্ম্ময়ী সেই গৌরী। তাহার প্রথমেই মনে হইল, নামিয়া বাহির হইয় যায়, নতুবা বুকের মধ্যে রক্তস্রোতের প্রখর গভীর আলোড়ন এখনই যেন তাহার চেতনাকে বিকল করিয়া দিবে। কিন্তু স্বভদ্রের দুষ্ট এড়াইয়া পলায়ন সম্ভব হইবে না, কেন না সুভদ্রর যেখানে দাড়াইয়াছে, তাহার খুব কাছের জায়গা দিয়াই বাহিরে যাইবার পথ। তখন কতকটা নিরুপায় হইয়া এবং কতকটা তাহাকে উহার কেহ লক্ষ্য করিতেছে না বুঝিতে পারিয়া স্বপ্নাবিষ্ট্রের মত অজয় তাহার জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলিয়া যাহাকে বিশ্বাস করিত, তাহার অনিন্দ্যস্কন্ধর মুখকান্তি অপলক চোখের ক্ষুধিত দুষ্ট ভরিয়া দেখিতে লাগিল । কি আশ্চৰ্য্য, ঐ মুখখানিকে দেখিলেও দেখা হয় না, মনে হয় সমস্তটা দেখা হুইল না, মুপের মধ্যে সবচেয়ে যে সৌন্দৰ্য্যটুকু আসল দেখিবার মত ক্রমাগত সেইটুকু দেখিতে ভূল হইয়া যাইতেছে। কোন আনন্দ-বেদনাময় নিবিড় বিস্কৃতির আবরণ অদৃশ অশ্রজলের মত বারম্বার চোখের সম্মুথে নামিয়া আসিয়া সেই অবশেষ সৌন্দৰ্য্যটুকুকে আর দেখিতে দিতেছে না। পায়ে লাল রঙের পাঞ্জাবী জুতা, তাহার দেহুলতা ঘিরিয়া নবকিশলয়ের মত অস্ফুট সবুজ রঙের শাড়ী অস্ফুটতর হইয়া অজয়ের চোখে পড়িল। স্বন্দর বাছটির স্পর্শকুণ্ঠ কোমলতাকে পীড়িত করিয়া তরুণী একটি বাজু পরিয়াছে, শৃঙ্খল رع سوا কঙ্কণে হীরা জলিতেছে, কিন্তু তাহার দেহাভিরিক্ত কোন জ্যোতিঃ সে-সমস্তকেই অরুত করিয়া মান করিয়া অজয়ের সমস্ত চিত্তকে অধিকার করিয়া রহিল। ক্রমে সে অনুভব করিল, তাহার শিরা-উপশিরায় রক্তস্রোতের তাণ্ডব নষ্ট্রন থামিয়া গিয়াছে বটে, কিন্তু তাহার বুকের কাছে কি-একটা যেন সূচীবিদ্ধবৎ বিধিতেছে । তরুণীকে সে যত দেখিতেছে, তাছার বুক দমিয়া থাইতেছে। কে একটা ভীরু, কে একটা লোভী তাহার মনের মধ্যে লুকাইয়া ক্রমাগত বলিতেছে, তুমি অপূৰ্ব্ব, পৃথিবীতে তোমার তুলনা নাই, তুমি কোনওদিন আমার হইবে না, এতবড় ঐশ্বধ্য বিধাতা আমার দন্ত রাখেন নাই । সহসা সম্বিং পাইয়া বুঝিল, সুভদ্রর তিনজনেই কথ। থামাইয়া তাহার দিকে ফিরিয়া দেখিতেছে । তরুণার পৃষ্টির বিদ্যুৎ তাহার রক্তস্রোতের মধ্যে কি তীব্র বেদন জাগাইয়া বহিয়া গেল। চকিতে ফিরিয়া সম্মুখে যে ছবি দেখিল তাছাই লইয়। সে অতিশয় বিত্রত হইয়া পড়িল । বিমান পশ্চাৎ হইতে তাহাকে স্পশ করিল, কহিল, “যার ছবি এত মন দিয়ে দেখছ তিনি নিজে তোমাকে দেখতে চান, চিত্রের চেয়ে চিত্রকারিণীকে দেখে কিছু কমু ভাল লাগবে না তোমার। এস তুমি আমার সঙ্গে " অজয় অভ্যস্ত অদ্ভুত ব্যবহার করিল । এক ঝটুকায় বিমানের হাতটা সরাইয়া দিয়ু বলিল, "না, বিমান, না । আমি পারব না। আমায় মাপ কর তুমি।" বিমান হতবুদ্ধি হইয়। এমন ভাব দেখাইল, যেম প্রয়োজন হইলে বলপ্রয়োগেও ত:4:র আপত্তি নাই । কিন্তু বলপ্রয়োগ অজয়ই করিণ। বিমানকে টানিয়৷ একটু আড়ালে লইয়। গিয়া কহিল, “তুমি ত আর্টিষ্ট মাতুম, নিশ্চয় এখানে কুৎসিত রকমের একট। "সিন’ হতে দেবে না। আজ আমি কিছুতেই ওঁর সামনে ধেতে পারব না, খুব অভদ্রত হচ্ছে কিন্তু কি করব ? তোমায় পরে সব বলব, তুমি এখন যা-ছোক কিছু একটা বানিয়ে বলগে ।” বিমান দুই চোখ বিস্ফারিত করিয়া অজয়কে দেখিতেছিল, আজ কি ও দাড়ি কামায় নাই, না যথেষ্ট ফিট্‌ফাট