ృు S90ళీe হাতে শুধু একট। চামড়ার ব্যাগ, ছেলেটি দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল,—যেতে দিন । ভদ্রলোক মুখ বিকৃত ক’রে বললেন,—যাও যাও, অন্য গাড়ী দেখগে । এখানে জায়গা নেই। ছেলেটি শাস্ত স্বরে বললে,—সে সম্বন্ধে ত আপনার কাছে কোনও উপদেশ চাইনি। জায়গা থাকৃ বা না থাকু আমি এই গাড়ীতেই যাব। ভদ্রলোক রাগে লাফিয়ে, ভূড়ি দুলিয়ে চীৎকার ক’রে বললেন,—ও, লাটসাহেব আর কি ! এই গাড়ীতেই যাব । যাও ত তোমার ঘাড়ে কটা মাথা দেখি । বলে তিনি দরজাটা আরও জুড়ে দাড়ালেন। ব্যাপার দেখে আমরা ছেলেটির সাহায্যের জন্য ভিড় ঠেলে এগুচ্ছি এমন সময় সে বললে,--আচ্ছ, never mind. গাড়ীর মধ্যে ঢুকবার আরও অনেক রাস্ত আছে। দেখি আপনি কি করে আঠুকান। বলে ছেলেটি মুহূর্তের মধ্যে একটা জানালার কাছে এগিয়ে এল। তারপর ব্যাগটা ভিতরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে, জানালায় দুহাত লাগিয়ে, অদ্ভুত কৌশলে ভিতরে এসে ঢুকল। কেউ কোনও রকম বাধা দেবার পর্য্যন্ত অবসর পেল না । গাড়ী তখন চলতে স্বরু করেছে। ভদ্রলোক তার ব্যৰ্থ কৌশল ও বৃথা দপের কথা স্মরণ ক’রে নিফুল আক্রোশে ফুলছেন। গাড়ীর বেগ বাড়ছে,--ভদ্রলোক এখনও দাড়িয়ে আছেন। ছেলেটি এগিয়ে এসে ভদ্রলোকের হাতখান ধরে ফেললে। বললে,—রাগ করতে আছে কি দাদা ? আমি আপনার ছোট ভাইটির মত। গাড়ীতে যদি উঠতে না পেতাম আপনিই পরে দুঃখ পেতেন । ভদ্রলোক এ কথাগুলিকে বিদ্রুপ মনে করে আরও বেশী জলতে লাগলেন । কথার কোনও উত্তর দিলেন না, কিন্তু চোখ দিয়ে যেন অগ্নিবৃষ্টি হ’তে লাগল। ছেলেটি কিন্তু নাছোড়বান্দা । বললে,—আপনাকে এমন রাগ ক’রে থাকৃতে আমি কিছুতেই দিতে পারি না। আস্থন কিছু খেয়ে নেওয়া যাক, নইলে আপনার মাথা ঠাগু হবে না। মার হাতের তৈরি চমৎকার ফুলকো লুচি, চিমভাঙ্গ, মিহিদানা বলতে বলতে তাকে এক রকম জোর করে টেনে এনে, মেঝেতে পাতা একট। বিছানার ওপর বসিয়ে দিলে। তারপর তার পাশে বসে এমন করে গল্প সুরু করে দিলে যেন কতকালের পরিচিত বন্ধু। বিছানাট। যে অপরের এবং এর মালিকের যে এ রকম অনধিকার উপবেশনের বিরুদ্ধে আপত্তি থাকতে পারে ত যেন তার ভাববার প্রয়োজনই নেই। ভদ্রলোক ক্রমে নরম হয়ে এলেন । ক্রমে সেই চামড়ার ব্যাগটা খুলে গেল ও তার ভিতরের একট। পিতলের চৌকো কেীট থেকে নান৷ রকম থাদ্যদ্রব্য ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করতে লাগল। ভদ্রলোক প্রসারিত পাদ্যদ্রব্যের দিকে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,—তোমরা ? ছেলেটি ঈষৎ হাসলে। তারপর সার্টের ভেতর থেকে শুভ্র যজ্ঞোপবীতের গোছাটি টেনে নিয়ে দেখাল । ভদ্রলোক লুচিস্তুদ্ধ হাতখানা মাথায় ঠেকিয়ে শশব্যস্তে বললেন,—‘ব্রাহ্মণ’! তারপর বিনা দ্বিধায় লুচির সঙ্গে ডিমভাজ সংযোগ ক’রে চৰ্ব্বণ করতে আরম্ভ করলেন । ভোজন-পৰ্ব্ব শেষ হয়ে গেল। গাড়ী তখন পূরে বেগে ছুটছে। বেশীর ভাগ যাত্রীই ঘুমের ঘোরে নান৷ ছন্দে চুলছে। শুধু গাড়ীর এক প্রান্তে অপর একজনের বিছানা অধিকার করে, এক প্রৌঢ় সগুম্ফ ভদ্রলোকের সঙ্গে এক গুম্ফশ্বাশ্রহীন যুবকের মুখদুঃখের আলোচনা নিবিড় হয়ে উঠেছে । খানিকক্ষণ পরে বোধ হয় ভদ্রলোকটিরও নিদ্রাকর্ষণ হ’ল ; যুবকটির উদ্দেশ্বে বললেন,–আচ্ছ ভায়, এবারে একটু শোবার যোগাড় করা যাক। আমি ত বাঙ্কের ওপর একটু জায়গা করে নিয়েছি, কিন্তু তোমারও ত একটু গড়িয়ে নিতে পারলে डॉर्ज इड। ছেলেটি হেসে বললে—বিলক্ষণ, আমার আবার ঘুম। সেই সাত বছর বয়স থেকে ট্রাভেল করছি কিন্তু গাড়ীতে কখন ঘুমোতে পারি না। এই ধরুণ না কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে কালকা গেলুম, কটা রাত ঠায় বলে, চোখের পাতাটি পর্যন্ত বুজিনি। বিস্ময়ের আবেগে ভদ্রলোকের চক্ষু দুটি বিস্ফারিত হয়ে উঠল, বললেন—ত ভায়, তোমরা ছেলেমাঞ্ছা!
- :