পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ প্রভাপাদিত্ত্যের কথা < হিন্দু ভূইয়ার নামোল্লেখও করিয়াছেন। কিন্তু সে-সম্বন্ধে বিশিষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ংশ-পরিচয় কুলগ্রন্থ, বল্প-মহাশয়ের গ্রন্থ ও বংশপরম্পরায় প্রচলিত বিবরণ হইতে প্রতাপাদিত্যের বংশ-পরিচয় জানিতে পার। যায়। এই বংশ-পরিচয়কে মানিয়া লওয়া যাইতে পারে । কোন কোন ইতিহাসের দ্বারা তাহার কোন কোন কথা সমর্থিতও হইয়াছে। রামচন্দ্র গুহ যশোর রাজবংশের আদিপুরুষ । তিনি পূৰ্ব্ববঙ্গ হইতে আসিয়া সপ্তগ্রামের নিকট বাস করেন, তথায় বিবাহ করিয়া রামচন্দ্র সপ্তগ্রামের কাননগো-দপ্তরের কায্যে নিযুক্ত হন । তাহার ভবানন্দ, “ণানন্দ ও শিবানন্দ নামে তিন পুত্র জন্মে। শিবানন্দও ননগে-দপ্তরের কায্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । ভবানন্দের মল্লি ও গুণানন্দের জানকীবল্লভ নামে পুত্র জন্মে। এই শ্ৰীহরির পুত্রই প্রতাপাদিত্য । ইহার সপ্তগ্রাম হইতে পরে গৌড়ে গমন করেন। সে-সময়ে স্থলেমান কররাণী গৌড়ের মসনদে উপবিষ্ট । তিনি দিল্লীর বাদশাহের অধীনতা স্বীকার করিলেও, একরূপ স্বাধীন নরপতি ছিলেন। তাহার পুত্র দায়ুদের সহিত শ্ৰীহরির পরিচয় ঘটে, দায়ুদের রাজত্বকালে শ্রীহরি তাহার প্রধান কৰ্মচারী হইয়৷ 'বিক্রমাদিত্য’ উপাধি লাভ করেন। সে সূত্রেই জানকীবল্লভও বসন্তরায়’ উপাধি পাইয়াছিলেন বলিয়া কথিত হয়। বিক্রমাদিত্য ও কতলু খাঁ দায়ুদের বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন । তবকাং-ই-আকবরী প্রভৃতি গ্রন্থ হইতে এ কথা জানিতে পারা যায় । ক তলু ও বিক্রমীদিত্যের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। যশোর-রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দায়ুদ বাঙ্গলার শেষ পাঠান নরপতি। ইনি স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া আকবর বাদশাহের বিরুদ্ধে উখিত হইলে, মোগলের তাহাকে অনেকবার পরাজিত করিয়া অবশেষে নিহত করে। মোগলদিগের সহিত সংঘর্ষকালে দায়ুদ গৌড় হইতে উড়িষ্যায় পলায়নকালে র্তাহার সমস্ত ধনরত্ন বিক্রমাদিত্যেব হন্তে অর্পণ করিলে, তিনি সে-সমস্ত নৌকা বোঝাই করিয়া দায়ুদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতে যাইতে, সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করেন। তবকাৎ-ই-আকবরী ও বস্থ-মহাশয়ের গ্রন্থ প্রভৃতি হইতে একথা জানা যায়। এখানে ইহা বলা আবশ্বক যে, তাহার। স্বন্দরবনের যেস্থানে, উপস্থিত হইয়াছিলেন, বস্থ-মহাশয়ের গ্রন্থ হইতে জানা যায়। যে, তাহা চাদ খা নামে কোন সম্বাস্ত মুসলমানের জায়গীর ছিল। তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় বিক্রমাদিত্য দাযুদের নিকট হইতে উহ। চাহিয়া লইয়৷ তথাকার জঙ্গলাদি পরিষ্কার করিয়া তাহাতে আবাসস্থান স্থাপনের চেষ্টা, করিতেছিলেন এবং ইহারই নিকটে যশোরেশ্বরী নামে। পীঠদেবতার স্থান ছিল । তাহার পর দাযুদের নিধন ঘটিলে, র্তাহার সেই সমস্ত ধনরত্ন লইয়া বিক্রমাদিত্য যশোররাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও যশোর-সমাজ গঠন করেন । র্তাহাদের রাজ্যের চিহ্ন ও যশোর-সমাজ আজও বিদ্যমান আছে। অবশেষে বাদশাহ-দরবার হইতে র্তাহারা তাহদের, জমিদারী মঞ্জুর করিয়া লইয়। ক্রমে ক্রমে একজন ভূইয়া, হইয়া উঠেন । প্রতাপের বাল্যজীবন গৌড়েই প্রতাপের বাল্যজীবন আরম্ভ হয় বলিয়া মনে হয় । তথায় তিনি পারসিকাদি ভাষা শিক্ষা করিয়া থাকিবেন এবং অস্ত্রশস্ত্র শিক্ষারও আরম্ভ হয়। পরে . যশোরে আসিয়া বিশেষভাবে অস্ত্রপরিচালনা করিতে" প্রবৃত্ত হন । বস্থ-মহাশয় বলেন, একদিন একটি উডডীয়মান, পক্ষীকে শরবিদ্ধ করিয়া নিপাতিত করায়, বিক্রমাদিত্য দুঃখিত ও ভীত হইয়া প্রতাপকে সভ্যভাবে শিক্ষিত । করিবার জন্য আগরায় পাঠাইয়া দেন। বসন্তরায় প্রতাপকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন, তিনি ইহাতে আপত্তি করিলে বিক্রমাদিত্য তাহা শুনেন নাই। প্রতাপের কোষ্ঠীর ফলে তিনি নাকি পিতৃদ্রোহী হইবেন বলিয়া বিক্রমাদিত্য আশঙ্কা করিয়াছিলেন। প্রতাপ আগরায় গিয়া বাদশাহ আকবরকে সন্তুষ্ট করিয়া এবং যশোরের রাজস্ব যাহা তাহার দ্বারা দাখিল করা হইত, তাহ গোপন করিয়া, নিজ নামে, যশোর-রাজ্যের সনন্দ লইয়া আসেন। স্ত্ব, কথার অরশ্ন আমরা কোন ঐতিহাসিক সমর্থন পাই নাই।