পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ প্রতাপাদিত্যের কথা IN মনে করিয়া তাহাকেই চ্যাণ্ডিকান নগর বলিতে চাহেন। বেভারিজ সাহেব কোন মানচিত্রে চ্যাণ্ডিকানের উল্লেখ দেখেন নাই বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। তাহা হইলে তিনি অবশ্ব সার টমাস রোর মানচিত্র দেখেন নাই । সতীশবাবুও ধূমঘাটকেই চ্যাণ্ডিকান বলিতে চাহেন। তিনি সার টমাস রোর মানচিত্রে বিশ্বাস স্থাপন করেন না । ঢাকার নিকট সাতগা অঙ্কিত থাকার কথা বলিয়া উহ। অবিশ্বাস্ত মনে করেন। অবশু উক্ত মানচিত্র জরীপ করিয়া অঙ্কিত নহে, উহাতে কেবল প্রধান প্রধান স্থানের অবস্থানই দেখান হইয়াছে। কাজেই কোন স্থান কোনদিকে তাহা উহা হইতে বুঝিয়া লওয়া যায়। আর ঢাকার পাশ্বে ই সাতগাঁ অঙ্কিত নাই, উভয়ের মধ্যে দূরত্বও দেখান হইয়াছে। গঙ্গার মোহনায় যে চ্যাণ্ডিকান অবস্থিত, আমরা পার্শার এ উক্তি উদ্ধৃত করিয়াছিলাম, সতীশবাবু সে-সম্বন্ধে একটি কথাও বলেন নাই। অবশ্ব ধূমঘাট কদাচ গঙ্গার মোহনায় অবস্থিত নহে। আর ধূমঘাট ও যশোর যে পরম্পর সংলগ্ন ও একই নগর হইয়া উঠিয়াছিল, তাহ অনেকেই স্বীকার করিয়াছেন। সতীশবাবুও তাহা স্বীকার করেন। তাহা হইলে কার্ভালোর মৃত্যু-সংবাদ যশোর হইতে পরদিন মধ্যরাত্রিতে চ্যাণ্ডিকানে পৌছিলে, উভয় স্থানের মধ্যে যে দূরত্ব আছে, তাহা কি বোধ হয় না ? বেভারিজ সাহেবও তাহা মনে করিয়াছিলেন । সতীশবাবু এই বিলম্বের কারণ কার্ভালোর মৃত্যু-সংবাদ গোপন করিয়া রাখা হইয়াছিল বলিতে চাহেন । এরূপ বলিবার কারণ র্তাহার মত বজায় রাথ ভিন্ন আর কিছুই নহে । আর তিনি বা ফক্নার সাহেব ঈশ্বরীপুরে পূর্বপশ্চিমে স্থিত কয়েকটি সমাধি দেখিয় তাহা মুসলমানদিগের কবর নহে এবং খৃষ্টানদিগেরই সম্ভব বলিয়৷ সেইখানেই পাদরীদিগের গির্জা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, অতএব ঐ স্থানেই চ্যাণ্ডিকান বলিয়া যাহা বলিতেছেন, তাহার উত্তরে আমরা বলিতে পারি যে, উক্ত কবরগুলি খৃষ্টানদিগের হইলেও বহু পর্তুগীজ প্রতাপাদিত্যের অধীনে কাৰ্য্য করিত। তাহাঁদের কবর হওয়া কি সম্ভব নহে ? স্বতরাং এরূপ যুক্তির কোনই মূল্য নাই। ফলতঃ সাগরদ্বীপই যে চ্যাণ্ডিকান তাহাতে সন্দেহ নাই। চাঁদখা জায়গীর হইতে তাহার উক্ত নাম হইলেও হইতে পারে। সতীশবাবু প্রতাপের রাজধানী সাগরদ্বীপে ছিল বলিয়া আমরা উল্লেখ করিয়াছি বলিয়া যাহা লিখিয়াছেন, তাহ প্রকৃত নহে । আমরা ধূমঘাট-যশোরকেই প্রতাপের রাজধানী বলিয়াছি। আমাদের প্রতাপাদিত্য দেখিলেই তাহ বুঝা যাইবে । জামাতৃ-বিদ্বেষ বাকলার রাজা কন্দপ রায়ের পুত্র রামচন্দ্র রায়ের সহিত প্রতাপাদিত্যের কন্য। বিন্দুমতী বা বিমলার বিবাহ হইয়াছিল। ঘটককারিকায় লিখিত আছে যে, প্রতাপ চন্দ্রদ্বীপ বা বাকল রাজ্য ও সমাজের আধিপত্যের জন্য বিবাহরাত্রিতেই জামাতাকে হত্যা করিতে উদ্যত হন । ইহা অসম্ভব বলিয়াই মনে হয় । বসু-মহাশয় বলেন যে, বিবাহসময়েই ঐক্লপ ব্যাপার ঘটিয়াছিল। এক সময়ে রামচন্দ্র ধে অধিক দিন নিজরাজ্য ছাড়িয়া অন্তত্র ছিলেন এবং আরাকান-রাজ র্তাহার রাজ্য অধিকার করিয়া লইয়াছিলেন তাহা জানা যায়। রামচন্দ্রের বিবাহসময়ে তাহা হইলেও হইতে পারে। ফলতঃ এবিষয়ে কোনও বিশিষ্ট প্রমাণ না পাইলে প্রকৃত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। তবে এ-কথাটা যশোর ও বাকল উভয়ত্রই চিরদিনই চলিয়৷ আসিতেছে। রামচন্দ্র নিজ পত্নী ও শু্যালক উদয়াদিত্যের সাহায্যে যশোর হইতে পলায়ন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন বলিয়। কথিত হইয়া থাকে। প্রতাপ ও মানসিংহ আমরা বলিয়াছি যে, প্রতাপ অনেক দিন নীর, থাকিয়া বলসঞ্চয় করিতেছিলেন । র্তাহার রাজ্যের গৌরবও দিন-দিন বিস্তৃত হইয়া পড়িতেছিল। পণ্ডিত, কবি ও অন্যান্ত গুণিগণ র্তাহার দরবারে উপস্থিত হইয়। পুরস্কৃত হইতেন। বৈষ্ণবকবি গোবিন্দদাস র্তাহার গানে প্রতাপের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। প্রতাপের দানও অসীম ছিল বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। সকল দিকৃ হইতে র্তাহার গৌরব বৰ্দ্ধিত হওয়ায় ক্রমে তাহার আবার স্বাধীনতার ইচ্ছা প্রবল হইয়া উঠে। তিনি সে-ভাব প্রকাশ করিতেও আরম্ভ করেন। বসন্তরীর হত্যার